১৫১তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ত্রয়োবিংশ জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব

আরিফ হোসেন সাঈদ
Published : 7 May 2012, 07:03 PM
Updated : 7 May 2012, 07:03 PM

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই মে ১৮৬১ সালে (২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। এতে বাঙালি সমাজসহ সারা বিশ্বে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন।

"ডাকি তব নাম শুষ্ক কণ্ঠে, আশা করি প্রাণপণে-
নিবিড় প্রেমের সরস বরষা যদি নেমে আসে মনে।"
– শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫১তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকায় 'বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা' পাঁচদিন ব্যাপী রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করেছে। ৪ মে থেকে ৮ মে (২১-২৫শে বৈশাখ) পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়নুল গ্যালারী ও শাহবাগের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ২৩তম এ জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব চলবে। এবারের উৎসবের উল্লেখযোগ্য বিষয় সংস্থাটির প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী কলিম শরাফীর উপর আলোকচিত্রী এম.এ. তাহের'এর সপ্তাহব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও কলিম শরাফীর অপ্রকাশিত ২০টি গানের দু'টি সিডির একটি অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। এবারের উৎসবটি প্রয়াত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রী অজিত রায় ও শিল্পী ডাঃ মৃদুল কান্তি চক্রবর্তীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে। শ্রী অজিত রায় ও ডাঃ মৃদুল কান্তি স্মরণে তাদের নামে মঞ্চের দু'পাশে দু'টি পৃথক মঞ্চ করা হয়েছে যেখানে শিল্পীরা গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করবেন।

১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত 'বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা' প্রতি বছরই রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। গত বছর কবি গুরুর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সংস্থাটি পাঁচদিন ব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে। ঢাকা ছাড়াও এ সংস্থার শাখাগুলো বিভিন্ন জেলায় এ ধরণের উৎসবের আয়োজন করে থাকে। সারা বছরব্যাপী রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন থাকে বলে জানান এ সংস্থাটির সভাপতি তপন মাহমুদ। ঢাকার বাইরে গত ২৯-৩১ মার্চ চট্টগ্রাম রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা তিনদিন ব্যাপী রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করে। এছাড়া খুলনা, শেরপুর ও খাগড়াছড়িতে রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে এ সংস্থাটি বিভিন্ন উৎসব আয়োজন করে থাকে।

এ বিষয়ে সংস্থাটির সভাপতি তপন মাহমুদ বলেন, "আমরা ২৪ বছর ধরে এ কাজটি করে যাচ্ছি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা থেকে। এটি আমাদের ২৩তম উৎসব। এর আগেও আমাদের ২২টি এ রকম উৎসব হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ হল রবীন্দ্রসঙ্গীতকে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে নবীন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া এবং তাদেরকে রবীন্দ্র শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। যাতে করে তারা শিকড় সংস্কৃতির সন্ধান পায়। এই লক্ষ্যেই আমাদের সমস্ত কাজ, সমস্ত কার্যক্রম আমরা পরিচালিত করছি। এবং আমাদের কাজ শুধু উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমরা আমাদের কাজ সারা বছর ধরে সারা বাংলাদেশ ব্যাপী চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই নতুন প্রজন্মকে রবীন্দ্রমুখী করে তোলা। রবীন্দ্রমুখী করে তোলার অর্থই হল অনাচার, অন্যায়, অশ্লীলতা তার থেকে সত্য, সুন্দর এবং একটি সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা। এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।"

এবারের ২৩তম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসবে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকার প্রবীণ সাংবাদিক ও বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক শ্রী অরুণ দাশগুপ্তকে সম্মাননা ও 'কলিম শরাফী' স্মৃতিস্মারক প্রদান করা হয়। এবারের উৎসবের আকর্ষণ ছিল বুলবুল ললিত কলা একাডেমীর পরিবেশনায় রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য 'মায়ার খেলা' এবং চট্টগ্রামের তীর্যক নাট্যগোষ্ঠীর পরিবেশনায় রবী ঠাকুরের নাটক 'বিসর্জন'। এ উৎসবে মোট ১৩০ জন নবীন ও খ্যাতনামা শিল্পী অংশগ্রহণ করেন।

http://www.youtube.com/watch?v=JpU7PCcyjkE
রবী ঠাকুরের নাটক 'বিসর্জন' এর একটি ছোট অংশ

http://www.youtube.com/watch?v=rOJT_mLZ22M
শিল্পী মৃদুল কান্তি চক্রবর্তী মঞ্চে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কাকলী গোস্বামী

http://www.youtube.com/watch?v=4uZgdKr6WQo
শিল্পী অজিত রায় মঞ্চে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সর্বানী চক্রবর্তী

জাতীয় সংসদের মাননীয় উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ৪ঠা মে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে উপস্থিত থেকে এ উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ উৎসবে বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব আবুল মোমেন উপস্থিত থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব উদ্বোধন করেন এবং মোড়ক উন্মোচন, সম্মাননা ও স্মৃতিস্বারক প্রদান করেন। তৃতীয় বারের মত এ উৎসবের পৃষ্ঠপোষক ছিল 'বাংলালিংক'।

২৩তম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসবে ৮ মে পর্যন্ত শিল্পী কলিম শরাফী'র অপ্রকাশিত গানের অ্যালবামটি শিল্পী পত্নী অধ্যাপিকা নওশাবা খাতুনের সৌজন্যে ১০০ টাকায় পাওয়া যাবে। শিল্পী আমিনা আহমেদের সহায়তায় 'মীনা বাজারের' অর্থায়নে অ্যালবামটি 'পথে ডেকেছিলে মোরে' প্রকাশিত হয়েছে।

৫ম ও শেষদিনের অনুষ্ঠানমালা: সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে দলীয় ও একক সঙ্গীতানুষ্ঠান
স্থান: শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার শাহবাগ, ঢাকা

সুত্র: বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, উইকিপিডিয়া
কৃতজ্ঞতায়: তপন মাহমুদ, সোহেল মাহমুদ

আরিফ হোসেন সাঈদ,
৭ই মে, ২০১২