১৫ই মে, বেতন ভাতার দাবি তুলে সাংবাদিক নেতারা চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, তারা সেখানে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসও পেলেন। আর একই দিনে শিক্ষকদের একই দাবিতে তাদের উপর চড়াও হল পুলিশ। চলে বুটের লাথি, লাঠি পেটা আর জল কামান থেকে গরম পানি নিক্ষেপণ।
কারণটা কি? সাংবাদিকরা কি শিক্ষকদের চেয়ে বেশি সম্মানিত? নাকি এর অন্য কোন কারণ আছে? কি কারণে হঠাৎ সাংবাদিক নেতাদের সম্মান অধিক বেড়ে গেল?
গত ১১ই ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুন হয়। জ্বলে উঠেন সাংবাদিক নেতারা। ডেকে বসলেন ৮ই এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও'এর কর্মসূচি। হঠাৎ তাদের কদর গেল বেড়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেকে নিয়ে চা খাওয়ালেন। সাংবাদিক নেতারা হাসিমুখে বেড়িয়ে এসে বললেন, আন্দোলন আপাতত বন্ধ। ৫ই মে পর্যন্ত সময় দিয়েছি এর মধ্যে কিছু না হলে ৬ই মে থেকে আন্দোলনে নামবো। সাংবাদিক নেতাদেরও কি ভাগ্য ৪ঠা জুনের বৌদ্ধ পূর্ণিমা ৬ই মে'তে চলে এলো। অবশেষে ১৫ই মে হত্যার দীর্ঘ ৯৫ দিন পর সম্পন্ন হল সাংবাদিক নেতাদের ডাকা প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচি। সে কর্মসূচিতে নৈতিক সমর্থন দিয়ে যোগ দেয় ব্লগাররাও। পুলিশি বাধার মুখেও ১৫ই মে ব্লগার ও তরুণ সাংবাদিকরা পূর্ব ঘোষিত সেই কর্মসূচিটি সফল করে। চলে ১১টার পর থেকে ১২টা পর্যন্ত। সবশেষে দেখা দেন সাংবাদিক নেতারা। ঘোষণা করেন তাদের পরবর্তী কর্মসূচি – "আগামী ২০শে মে থেকে ১৫ই জুন পর্যন্ত সকল সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অফিসগুলোতে সভা। আগামী ৫ই জুন মাননীয় স্পীকারের কাছে নিরাপত্তা ও মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য আইনের দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেশ এবং ২৬শে জুন দাবি সংবলিত স্মারকলিপি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা।" তবে তাদের পরবর্তী কর্মসূচিটি কি সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে নাকি তাদের বেতন ভাতার দাবিতে তা স্পষ্ট না করে সূক্ষ্ম কৌশলে পাশ কাটিয়ে গেলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তাঁর বক্তৃতায় মনে হল, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য সাগর-রুনি হত্যার বিচার নয়। তিনি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার সময় একটি বারও সাগর-রুনি হত্যার বিচারের কথা উল্লেখ করেননি। শুধু তাই নয় তিনি তার পুরো বক্তৃতায় একটি সূক্ষ্ম কৌশলের অবলম্বন করেছেন। তিনি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার সময় দুবার তাদের 'দাবিদাওয়ার' কথাই উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে জানা যায়, তাদের দাবিদাওয়া হল নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য অষ্টম ওয়েজ বোর্ড গঠনের দাবি। জানা গেছে, সাংবাদিক নেতারা ঐদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করেন এবং অষ্টম ওয়েজ বোর্ড গঠনের দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। জানা গেছে ঐদিন তারা প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াতে দুপুরের খাবারও খেয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক চায়ের দাওয়াতেই আন্দোলনের এই অবস্থা আর প্রধানমন্ত্রীর দুপুরের দাওয়াতের ফলে কি যে হবে তা নিয়ে শঙ্কিত সচেতন ব্লগার সমাজ।
জানা গেছে, ঐ একইদিন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ভাতার দাবিতে একটি আন্দোলনে পুলিশ আক্রমণ চালায়। শিক্ষকদের উপর লাঠিপেটা করে, চলে বুটের লাথি। এই গরমেও জল কামান থেকে তাদের উপর ছোড়া হয় প্রচণ্ড গরম পানি।
দেশ গড়ার কারিগররা যদি বেতন ভাতার দাবি তোলায় তাদের লাঠি পেটা করা যেতে পারে, তাদের উপর বুট ব্যবহার করা যেতে পারে, তাদের উপর গরম পানি নিক্ষেপ করা যেতে পারে তবে দু'লাইন লেখাপড়া করা সাংবাদিক নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর আপ্যায়ন কেন? কেন তারা তাদের বক্তৃতায় কৌশল অবলম্বন করবেন? কেন তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে, কেন সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে নয়?
দেশবাসী চিনে রাখুন এই দলবাজ সাংবাদিকদের। চিনে রাখুন মুখে বড় বড় কথা বলা এই স্বার্থান্বেষী কতিপয় নেতাদের। তাহলে আর আমাদের কখনো আশায় বুক বেধে হতাশ হতে হবে না। আর কখনো মিথ্যে নাটকের চরিত্রগুলিকে বাস্তব ভেবে ধোঁকা খাব না। আর কেউ আমাদের নিয়ে দাবা খেলতে পারবে না।
আরিফ হোসেন সাঈদ
১৬ই মে ২০১২