স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সাফল্য গাঁথা ও কয়েকটি প্রশংসাপত্র

আরিফ হোসেন সাঈদ
Published : 5 June 2012, 03:39 AM
Updated : 5 June 2012, 03:39 AM

দিন দিন বেপরোয়া ও মাতাল হয়ে যাচ্ছে পুলিশ। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক কেউ পুলিশ দ্বারা সুরক্ষিত নয়। একদিকে যেমন পুলিশের বর্তমান আইনের সংস্কার প্রয়োজন তেমনি পুলিশ বাহিনীকে ব্যাপকভাবে রাজনীতি করণ থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন। পুরষ্কার, পদোন্নতি, শান্তিরক্ষা মিশন সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার সমর্থিত একটি বিশেষ গোষ্ঠী। একটি বিশেষ জেলা ও তার আশপাশের লোকজনই কেন পুলিশের বিশেষ সুবিধা পাবে। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যদি মনে করে থাকেন আজ তারা পুলিশ থেকে সুরক্ষিত তবে তাদের সে সময়ের কথা মনে রাখা উচিত যখন তারা ক্ষমতায় থাকবেন না। তখন বাকি ঠ্যাংটাও এই পুলিশ ভেঙ্গে দিতে পারে।

গত ৩১ মে ২০১২, জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির হোসেন মকবুল শাহরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গত এক বছরে কতটি গুমের ঘটনা ঘটেছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এর জবাব দিতে পারেননি। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সফলতা ও ব্যর্থতার বিবরণ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাফল্য গাঁথা শোনান।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২, জাতীয় সংসদ অধিবেশনের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশে গুম বলে কিছু নেই।

গত ২৮ মে ২০১২, সাংবাদিকরা এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, 'সাংবাদিকদের ঘরে,রাজপথে,অফিসে কোথাও নিরাপত্তা দিতে পারবেন না! এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কি আপনার পদত্যাগ করা উচিত নয়?' এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করেন। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র রিপোর্টার রোকসানা আমিন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। গণমাধ্যমের উপর একের পর এক হামলা হচ্ছে। আমরা অফিসেও নিরাপদ না। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করছি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ঘুরিয়ে দিতেই সাংবাদিকদের উপর একের পর এক হামলা হচ্ছে। যাতে সাংবাদিকরা অন্য আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

গত ২৯ মে ২০১২, রূপসী বাংলা হোটেলের মার্বেল হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জবাব না দিয়েই স্থানত্যাগ করেন।

গত ২৯ মে ২০১২, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু এক আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সংবাদ সংগ্রহ করতে বলেন।

গত ৩০ মে ২০১২, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন অভিযোগ করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে গণমাধ্যমে টুইস্ট করা হয়েছে। তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ ধরণের কোন কথা বলেননি বলে দাবি করেছেন।

গত ৩০ মে ২০১২, ব্রিটিশ মন্ত্রী এলিস্টার বার্ট সিলেটে সাংবাদিকদের কথা আলাপকালে মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিই বলেন, স্বাধীন গণমাধ্যম না থাকলে ন্যায় বিচার ব্যাহত হতে পারে।

গত ৩০ মে ২০১২, জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে গণফোরামের সভাপতি ডাঃ কামাল হোসেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পুলিশ থেকে দূরে থাকা বিষয়ক পরামর্শের সমালোচনা করে বলেন, সাংবাদিকরা পুলিশের কাছ থেকে দূরে থাকবে কেন? পুলিশ কি তাদের শত্রু। আদালত চত্বরে নারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়া পুলিশকে দূরে থাকতে বলুন। এ সময় তিনি আরও বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও বিচার বিভাগ ছাড়া গণতন্ত্র চলতে পারে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ব্যাপারে কোন আপোষ নয়।

গত ৩০ মে ২০১২, গণমাধ্যম, পুলিশ ও সরকার প্রতিপক্ষ কিনা সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের কোন সরাসরি জবাবে দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী!

গত ৩০ মে ২০১২, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, পুলিশ আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। এ সময় তিনি তার ডান পা'টি দেখিয়ে বলেন, আগের চেয়ে পুলিশ অনেক ভাল হয়েছে। আমার ডান পা ভাঙ্গা। এ রকম ঘটনাও ঘটেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে তিনি নিশ্চয়ই পুলিশের প্রতি তার ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির কথাই বলেছেন।

সময় টিভির সম্পাদকীয় অনুষ্ঠানে এমপি নজরুল ইসলাম বাবুকে প্রশ্ন করা হয়, একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে কিন্তু এটার কোন প্রতিকার হচ্ছে না। এর কারণ কি, জবাবদিহিতার বিষয়টি কোথায় তাহলে?

– না। বাস্তব পক্ষে বিষয়টি এরকম নয়। আমি তা মনে করি না।
– আপনি কি তাহলে মনে করেন পুলিশে সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতা রয়েছে?
– পুলিশের জবাবদিহিতা তো কোন রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে নয় বা জনগণের কাছেও নয়।
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন,
– বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। ২১ বছর পর আসামীদের গ্রেফতার করার সুযোগ এসেছে।
– বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা চিহ্নিত ছিল। কিন্তু সাগর-রুনির হত্যাকারীরা এখনও চিহ্নিত নন।
– না, না। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা যেমন চিহ্নিত ছিল সাগর-রুনির খুনিদেরও কিন্তু একদিন দেখবেন বুমেরাং হয়ে নিজেরাই একদিন বলবে যে আমরা হত্যা করেছি। যারা মানুষ হত্যা করতে পারে তারা এক সময় উন্মাদের মতো সত্য কথা বলে দিতে পারে (!!!)।

নজরুল ইসলাম বাবুর কথা শোনে আমার প্রতিক্রিয়া – হায় হায়। খুনিরা কবে উন্মাদ হবে। কারণ খুনিরা নিজেরা সত্য কথা না বললে তো আর খুনিরা ধরা পড়ছে না। নজরুল ইসলাম বাবু উন্মাদ নন তো।

গত ৩০ মে ২০১২, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুপ্ত হত্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরতে গেলে তারা যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর গুলি চালায় তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কি দায়িত্ব হবে। তখন সে বাধ্য, জীবন রক্ষার্থে তাঁকে গুলি করতেই হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব শুনে আমার গল্পের ঐ চোরের বোকামির কথা মনে পড়ল।

– আমার ঘরে চুরি করেছে কে?
– ঐ ১ লাখ টাকা আমি চুরি করিনি।

৩ জুন ২০১২, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেছেন, যেখানে গোলাগুলির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেখানে যে বাস্তবতা থাকে আর যেখানে একতরফা হত্যাকাণ্ড ঘটে সেখানের বাস্তবতা বা পরিস্থিতি এক নয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি নিজস্ব তদন্ত দল আছে, একটি তদন্ত বিভাগ আছে। আমরা ঘটনাগুলোকে তদন্ত করে দেখেছি এবং কোন অবস্থাতেই এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যেখানে গোলাগুলির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আজ পর্যন্ত সরকার এ ধরণের কোন ঘটনায় সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। কিন্তু আমরা সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া কথা বলি না। হাত পা বাঁধা অবস্থায় যে ব্যক্তিটি র্যা ব বা পুলিশের সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হচ্ছেন সে ব্যক্তিটিই কেন হত্যার শিকার হচ্ছেন। তাছাড়া সে ব্যক্তিটি অপরাধী কিনা তাও নিশ্চিত নয় কারণ এটি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

পুলিশের অনৈতিক কাজের সমালোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুলিশের সুনাম গাওয়া ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পুলিশ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন সরকারে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ নাসিম ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন। এই দুই নেতা মনে করেন পুলিশের অন্যায় আচরণের জন্য তাদের প্রতি কঠোর না হয়ে তাদের সুনাম গাওয়া ও বেফাঁস কথা বলার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এই দু'মন্ত্রীর লজ্জিত হওয়া উচিত।

২ জুন ২০১২, সাপ্তাহিক কাগজে আব্দুর নূর তুষার 'পুলিশ থেকে সাবধান' নামক শিরোনামের নিবন্ধে বলেছেন, 'ঢাকা শহরের অধিকাংশ পুলিশের বাড়ি বিশেষ কোন জেলা বা তার আশেপাশে। আসলে কি এই কথা সত্য?'

দপ্তর বিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেছেন, এটি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষণ। তা না হলে পুলিশ হঠাৎ এতো বেপরোয়া হয়ে উঠবে কেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের উপর পুলিশের এ আচরণ অপ্রত্যাশিত। তাদের এমন করার কথা নয়।

তেহরান রেডিওকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, পুলিশ এখন নিরাপত্তা নয়, অত্যাচারী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সে কারণেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের পুলিশ থেকে দূরে থেকে সংবাদ সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছেন।

১ জুন ২০১২, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন'এ পীর হাবিবুর রহমান বলেন, 'পুলিশি রাষ্ট্রেও এত অহংকারী আইন হাতে তুলে নেওয়া পুলিশ মেলে না। আইয়ুব থেকে সামরিক শাসনের জমানায়ও পুলিশের এত বাড়াবাড়ি চোখে পড়েনি। পুলিশ বাবরের যতদিন ছিল বাবর ততদিন ভাল ছিল, আজ বাবর ভাল নেই। পুলিশের বর্তমান মন্ত্রীরাও যে ভবিষ্যতে ভাল থাকবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এতো সাহস পুলিশ কোথায় পেয়েছে। এই পুলিশ কার? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী কোনও অশুভ শক্তির? গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বা অধিকার পরিপন্থী কোনও কালো ছায়ার? অপশক্তি বা যুদ্ধাপরাধীদের দালাল? শাসকরা যদি হন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সরকার তাহলে প্রশ্ন মানুষের অধিকার ও সম্ভ্রমের ওপর আঘাত হানা এই পুলিশ চক্রের শক্তির উৎস কোথায়?'

৩১ মে ২০১২, দৈনিক দিনের খবরে পুলিশের বেপরোয়া আচরণের সমালোচনা করেছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ডাঃ আকবর আলী খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, 'পুলিশ যে ঘটনা ঘটিয়েছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।'

রাশেদ খান মেনন বলেন, 'এ ঘটনা শুধু সাংবাদিক নয়, সকল মানুষের জন্যই আতঙ্কের। আমরা যারা রাজনীতি করি তারাও এতে উদ্বিগ্ন। পুলিশ সমস্ত নিয়ম-নীতির বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা তো পুলিশি রাষ্ট্র নয়। পুলিশি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তো একটা নিয়ম শৃঙ্খলা থাকে। এটি বিশৃঙ্খল অবস্থায় চলে গেছে। যেভাবে পুলিশ নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি করা হচ্ছে, তার জন্যই পুলিশ এতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের সাহস পায়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।'

মনজুরুল আহসান খান বলেন, 'ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। সাংবাদিক, রাজনীতিক কেউই নিরাপদ নয়। পুলিশের বিরুদ্ধে মেয়েদের শ্লীলতাহানি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকারও অভিযোগ উঠছে। কিন্তু সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিকার নেই। উল্টো ছাপাই গেয়ে যাচ্ছে। সরকার জোরালো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? এই পুলিশই দুই দিন পর আওয়ামী লীগের নেতাদের মারবে। আমরা প্রত্যেক সরকারের সময়ই এটা দেখেছি। আবার সরকার পরিবর্তনের পর পুলিশ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই পিটিয়েছে। এই পুলিশই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার সময় তাঁর সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ করেছে। তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? দেশ পুলিশ আর সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।'

ডাঃ আকবর আলী খান বলেন, ' এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এতে মানবাধিকার কমিশনকে আরও সোচ্চার ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। এ ধরণের ঘটনা ঘটার পর পরই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করতে হবে। এতে সরকার ও পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। কারণ যাই হোক অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে, তবেই অপরাধ কমবে।'

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, 'পুলিশের এ ধরণের আচরণ একাধিক কারণে হতে পারে। যেহেতু পুলিশের আইন পরিবর্তন ও সংস্কার হয়নি। তাই পুলিশ আগের আইনে চলছে। আইনে শাস্তির বিধান শক্ত নয়। তাই যারা এ ধরণের ঘটনা ঘটায় তারা জানে, তারা পার পেয়ে যাবে। বিভিন্ন সরকারের সময় পুলিশ এই ধরণের আচরণ করেছে। আবার পার পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শাস্তি দেখছি না। এজন্যই আইনের সংস্কার জরুরি। বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সংস্কার হচ্ছে না, শাস্তির শক্ত বিধান হচ্ছে না।'

বর্তমান সময়ে পুলিশের আলোচিত কিছু ঘটনা:

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের নাতি রাকিব হোসেনকে অকারণে নির্দয় ভাবে পুলিশি প্রহার। প্রহারকারী কর্তাদের প্রাপ্য দণ্ড না দিয়ে তাদের প্রাইজ পোস্টিং করা।

গত ২৯ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের চত্বরে প্রকাশ্যে এক নারীর শ্লীলতাহানি এবং এ নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবীকে পুলিশের মারধর।

গত ২৬ মে রাজধানীর আগার গাঁওয়ে প্রথম আলোর তিন আলোকচিত্র সাংবাদিককে মারধর।

হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের বাহের চর গ্রামের কোহিনুর বেগমকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পুলিশের এএসআই শাহজালাল কর্তৃক ধর্ষণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়া।

বর্তমানে পুলিশে কার্যকর কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেই। কোন ঘটনা খুব সমালোচিত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় বা বড়জোর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং কিছুদিন পর দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হয়। এতে পুলিশে আইনের ঊর্ধ্বে থাকার অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে পুলিশের এই বেপরোয়া আচরণের কারণ ঘেঁটে দেখা উচিত। তা না হলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ প্রতিকূলে চলে যাবে।

শুধুমাত্র ২০১২ সালের মে মাসেই সারাদেশে ৩৯৮ টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের এক জরিপ রিপোর্টে ৩১ মে ২০১২ তারিখে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

সামাজিক সহিংসতার কারণে ২৮৫টি হত্যাকাণ্ড
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা ৪টি হত্যাকাণ্ড
রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ৮টি
গণপিটুনির শিকার ১১ জন
বোমা হামলায় ৪টি হত্যাকাণ্ড
চিকিৎসা জনিত অবহেলায় ১৭টি হত্যাকাণ্ড
যৌতুকের কারণে ২৩টি হত্যাকাণ্ড
বিএসএফ'এর হাতে ৫টি হত্যাকাণ্ড
ইভ টিজিংয়ের শিকার ৪ জন
ধর্ষণের পর হত্যা ১৭ জন
আগুনে পুড়িয়ে ৩টি হত্যাকাণ্ড
গুপ্ত হত্যার শিকার ১৭ জন

এছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৪ জন। তাদের মধ্যে নারী ১৭ জন ও শিশু ২৭ জন। এসিড সন্ত্রাসের বলি ৬ জন। ইভ টিজিংয়ের শিকার ৩ জন ও বোমা হামলায় আহত ২ জন।
গড়ে প্রতিদিন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১৩টি (মে মাস কিন্তু ৩১ দিনে)! এছাড়া মে মাসে ১৬ জন সাংবাদিক হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

আরিফ হোসেন সাঈদ, ৪ জুন ২০১২