বাংলাদেশের চারুকলা কোনদিকে যাচ্ছে…

মাস্টার সুমন বিশ্বাস
Published : 29 July 2012, 06:13 AM
Updated : 29 July 2012, 06:13 AM

চারুকলা থেকে মাস্টার্স শেষ করার পর তেমন একটা যাওয়া হয় না ওখানে। রোজার লম্বা ছুটি পাওয়ার পর চিন্তা করলাম যাই ঘুরে আসি, সবার সঙ্গে দেখা করে আসি। আমার বাসা কুড়িল থেকে রওনা হলাম বিশ্বরোড থেকে বাস এ উঠলাম, বনানী রেল ক্রস পার হয়ে যখন নেভী হেডকোয়ার্টার এর সামনে গেলাম নজর পরলো ডলফিন ভাস্কর্য গুলোর দিকে। দেখে কষ্ট পেলাম ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে, সস্তা ম্যাটেরিয়াল আর উইক কন্সট্রাকশন, সব মিলে একটা মেসাকার অবস্থা। হয়ত বানিজ্যিক চিন্তা করে বেশি লাভের আশায় এ অবস্থা। এর পর আসলাম বিজয় স্মরণি, মোড়ের মুর‌্যাল টা দেকলাম অযত্নে পরে আছে, এর পর দেকলাম ফার্মগেটের মোড়ের আরেকটি মাছের ভাস্কর্য এর দিকে, পাশে লাগানো হয়েছে আবার কতো গুলো তাল জাতীয় গাছ, গাছের আড়ালে ঢাকা পরেছে ভাস্কর্য টি। কি দরকার ছিল ভাস্কর্য বানানো ওখানে তাল গাছ লাগালেই হত। কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারাটা ভালো অবস্থায় আছে এখনো, কিন্তু তার পাশে একটি আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম এর একটি মুর‌্যাল আছে মূর‌্যালটি খুবই ভাল মানের কিন্তু আর্টিস্টের নাম ধাম কিছু নাই হইতো বানিজ্যিক কারনের জন্য দেয়া হইনি। এরপর আসলাম রুপসী বাংলা হোটেলের সামনের রাজসিক নামের ভাস্কর্যটির কাছে, সস্তা ম্যাটেরিয়াল ব্যাবহার করার জন্য তার জৌলুস হারাচ্ছে। খুব দ্রুত রঙের পরিবর্তন ঘটছে। তারপর শাহবাগ মোড়ের জাতীয় কবির মুর‌্যালটির ও একি অবস্থা- নাম ধাম নাই শিল্পীর।

এর পর বলি আসল ঘটনা, গেলাম চারুকলায়, এক সময় আমার স্বপ্নের জায়গা ছিল। তাই যত বার যাই তত বার রোমান্সিত হই। ঢুকেই সোজা গেলাম আমার প্রিয় ক্লাস রুম এ এবং স্যারদের অফিসে ভালোই লাগলো এর পর এক ছাত্র এসে বলল দাদা চলেন জয়নুল গ্যালারীতে একটি চিত্র প্রদর্শনী চলছে দেখে আসি। গ্যালারীতে গিয়ে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল,দেখি এক চারুকলার শিক্ষকের প্রদর্শনী চলছে এবং আমার দুটি পেইনটিং ও ঝুলছে গ্যালারী তে। আমি কি করব বুজতে পারছিলাম না। অতঃপর আমি চারুকলার ডিন মহাদয়ের গেলাম বললাম সবকিছু, তিনি আমাকে বললেন তুমি কি কোন দল কর? আমি বললাম না আমি কোন দল করি না, ডিন মহোদয় বললেন তাহলে তোমার এ বিষয় বেশি নাক না গলানোই ভালো। আমি মনের কষ্ট নিয়ে আবার গ্যালারীতে আসলাম এসে দেখি সেই শিক্ষক যদিও তিনি আমার পুর্ব পরিচিত এবং তিনি আমার কাছ থেকে কয়েক বছর আগে ওই পেইনটিং দুটো কিনেছিলেন, আর এখন তিনি তা নিজের নামে চালিয়ে দিলেন। এর মধ্যে ওই শিক্ষক টের পেয়ে আমার পেইনটিং গুলো নামিয়ে ফেলল এবং আমার কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইল। আমি আর কি করব বুঝে উঠে পারলাম না, আমি আমার এক বন্ধুকে জানালাম কি করব? বন্ধু বলল চুপ যা উনি পলিটিক্যাল পার্সন তুই সমস্যায় পরবি। কিন্তু আমি কোন ভাবে মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই এখানে লেখা, মনের ক্ষোভ প্রকাশ আর কী!

যাক মনের কষ্ট নিয়ে চলে আসলাম বাসায়, আসার সময় সাত রাস্তার মোড়ে ময়ূর এর ভাস্কর্য দেকলাম, একি অবস্থা সস্তা ম্যাটেরিয়াল আর সস্তা কন্সট্রাকশন এর কারনে ভেঙ্গে পরেছে।

যখন চারুকলায় পড়ে আমি খুব গর্ব করতাম, যে চারুকলার ছাত্র শিক্ষক কিম্বা শিল্পী, ভাস্কর এরা অনেক মননশীল, কিন্তু কিছু শিল্পী নামের মানুষের জন্য আজ আমার আর বলতে ইচ্ছা করছে না আমি চারুকলায় পরেছিলাম কিম্বা আমি একজন শিল্পী।