মুসলিম উম্মাহর জন্য অতি তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস মাহে রমজান। রমজানের রোজার মধ্যে রয়েছে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য। এর মূল শিক্ষা হচ্ছে তাকওয়া অর্জন, অর্থাৎ প্রতিটি কাজে স্রষ্টার বিধান খেয়াল রাখা। নবী-রাসূলরা মাসটি আত্মশুদ্ধি ও সৃষ্টির সেবায় কাটাতেন। এটি আসলে সংযমের মাস। খাদ্য সংযমের পাশাপাশি যাবতীয় জৈবিক ও কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংযম। এটি ধৈর্য, সহনশীলতা ও সমমর্মিতা অনুশীলনের মাস। আর এক মাস অনুশীলনের পর বাস্তব জীবনে সারা বছর তা অনুসরণ বা প্রয়োগ করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
কিন্তু বাস্তবতা দেখে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মূল শিক্ষা থেকে আমরা অনেক দূরে। শুধু দূরেই না, বরঞ্চ রমজান যে যে ক্ষেত্রে আমাদের শুদ্ধতার তাগিদ দেয় তা না করে উল্টো দিকেই আমরা ক্রমাগত মত্ত হয়ে যাচ্ছি। সীমাহীন ভোগ-বিলাসিতা, আত্ম-প্রচার, কেনাকাটা, মুনাফা অর্জনের অতৃপ্ত বাসনা, লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা আর প্রবৃত্তির দাসত্বে আমরা মেতে উঠি। ফলে প্রতি বছর রমজান আসে-যায়, কিন্তু আমাদের নেতিবাচক মানসিকতা ও সামাজিক ব্যাধি দূর হয় না।
রমজান আসলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। কারণ ব্যবসায়ীরা চিন্তা করে আরো কত বেশি লাভ করা যায়, তা মজুদ করে হোক অথবা দাম বাড়িয়ে, কিংবা ডিসকাউন্ট দিয়েই হোক। এখনকার ব্যবসার ধরন ও কৌশলে এসেছে আমূল পরিবর্তন। সমাজের সাথে সাথে ব্যবসাটাও এখন ভার্চুয়াল হয়ে গেছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অন্তরালে ছক কষছে কীভাবে আমাদের ভিতরে আরো ক্রয়-চাহিদা সৃষ্টি করা যায়। কৌশলে হরেক রকমের অফার দিয়ে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়া যায়।
বিভিন্ন সংগঠন ও টাকাওয়ালারা স্ট্যাটাস বাড়াতে ইফতার পার্টি ও মাহফিলের নামে ভোজন উৎসবের আয়োজন করে। পাড়া-মহল্লার হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খুচরা ব্যবসায়ীরা খাদ্য উৎসবের ব্যানার করে। সেখানে থাকে হরেক রকমের ভাজা-পোড়া, পোলাও-বিরিয়ানি তেহারি-মোগলাই-চাইনিজ ও মসলাদার খাবার।
আসলে এগুলো রমজানের শিক্ষা নয়। তাই আসুন এবারের রমজানকে আত্মশুদ্ধি ও আত্ম-উপলব্ধি অর্জনের মাধ্যমে জীবনের শ্রেষ্ঠ রমজানে পরিণত করি।