শেষ বিচারই শেষ ভরসা!!!

আসাদুজজেমান
Published : 14 Nov 2012, 02:28 PM
Updated : 14 Nov 2012, 02:28 PM

পত্রিকায় পাশাপাশি এসেছে দুটি নিউজ…….দু'জন সন্তানকে ঘিরে দুজন বাবার আবেগ, উৎকন্ঠা, হতাশা!
সদরঘাটের হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কেজি ওয়ানের ছাত্র পরাগ আর লক্ষীপুরের দক্ষিণ মজুপুরের ফিরোজ, দুজনেই অপহরিত!
পরাগকে অপহরণ করা হয়েছে মা-বোনকে গুলি করে, রক্তাক্ত করে……।
আর ফিরোজকে দুনিয়া থেকে অপহরণ করা হয়েছে, তার পুরো পরিবার আর সকল অনুভূতিশীল মানুষকে রক্তাক্ত করে…।
পরাগ ফিরেছে, মায়ের গুলি লাগা বুক খুশিতে ভরেছে, হাসি ফুটেছে পুরো পরিবারের মুখে।
কিন্তু ফিরোজ আর ফিরবে না কোনও দিন! তাদের পরিবারের বুকে রক্তাক্ত ঘা শুকাবে না কোনও দিন!
এ দুটি বিষয় নিয়েই আজকের প্রথম আলো পাশাপাশি দুটি লিড ট্রিটমেন্ট করেছে-

অবশেষে অক্ষত অবস্থায় পরাগকে ফিরে পাওয়া গেছে। পরাগের বাবা বিমল মন্ডল, নিদারুন অসহায়ত্বে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন। যে কোন মূল্যে ছেলেকে ফিরে পেতে চেয়েছিলেন……অবশেষে মুক্তিপনের দরকষাকষিতে রফা হওয়া ৫০ লাখ টাকা দিয়ে তিনি পরাগকে ফিরে পান।

৫০ লাখ তো দুরের কথা, সর্বস্য সম্পদ দিয়ে হলেও তিনি তার সন্তানকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চাইতেন। এটাই সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসা। যে ভালোবাসা বঙ্গবন্ধু বাসতেন শেখ রাসেলকে, জিয়া ভালোবাসতেন তারেককে, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ভালোবাসেন পাপনকে, রিক্সা চালক রহিম ভালোবাসে তার ছেলে করিমকে…….।

বিচারের বানী আজ নিভৃতে কাঁদছে! ন্যায় নয় বরং রাজনৈতিক বিবেচনায় অন্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্র! খুনি পাচ্ছে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা! খুনের মামলা প্রত্যাহার করছে জাতীয় কমিটি!
অবিচারের এ মহোৎসবে পুত্রহারা বাবা তাই এক বুক কষ্ট নিয়ে মামলা করেছেন শেষ বিচারের হাইকোর্টে, বিচার চেয়েছেন স্রষ্ট্রার কাছে….।

ফিরোজের বাবাও নিশ্চই ফিরোজকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন পরাগের বাবার মতো, বঙ্গবন্ধুর মতো, জিয়ার মতো। ভালোবাসতেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মতো, রিক্সাচালক করিম, গার্মেন্টস কর্মী রহিম, সবজি বিক্রেতা সলিম সহ আর সব বাবাদের মতো।

তাই বিচার না পেয়ে ফিরোজের বাবার হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস শুধু একা তার নয়! এ দীর্ঘশ্বাস সন্তানের জন্য সকল পিতৃহৃদয়ের দীর্ঘশ্বাস। যে দীর্ঘশ্বস প্রবাহিত হয় ফিরোজের বাবার বুক হয়ে শেখ রাসেলের বাবার, তারেকের বাবার বুকে! যে দীর্ঘশ্বাস রহিম, করিম, যদু, মধু সহ এদেশের সকল সুনাগরিক বাবার দীর্ঘশ্বাস।

একটি কল্পিত শেষ বিচার!!!
স্বর্গের চির বসন্তের সকাল। বাগান থেকে ভেসে আসছে সুবাসিত সুঘ্রান, প্রবাহিত নহরের সুমধুর শব্দ ভেসে আসছে, ভেসে আসছে পাখিদের স্বর্গীয় সংগিত………এর মাঝেই বিচার বসেছে, শেষ বিচার কিম্বা স্বর্গীয় বিচার…।

ফিরোজের বাবা স্রষ্টার কাছে তার সন্তান হত্যা এবং সে হত্যার বিচারকে প্রভাবিত করার বিরুদ্ধে যে ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন, তার বিচার।

বাদী- ফিরোজের বাবা আবুল কাশেম।
বিবাদী- মর্ত্যের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন মহাজোট সরকার।
সাক্ষী- স্বর্গীয় বিচারে মর্তের সাক্ষীর কোনো প্রয়োজন নেই। পাপ-পূর্ণের হিসাব সব রেকর্ডকৃত। আলাদা সাক্ষীর সাক্ষ্য এখানে অপ্রয়োজনীয়। তবে স্রষ্টার লীলা বোঝা বড় দায়! তাই বিশেষ একজন প্রথমবারের মতো স্বর্গীয় বিচারে সাক্ষ্য দেবেন! অজ্ঞাত কারনেই তার নাম প্রকাশ করা হয় নি!

বিচারে সব কিছুই প্রমানীত। রায় ঘোষনা এবং কার্যকর সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে সবাই অপেক্ষা করছেন সেই বিশেষ সাক্ষীর জন্য….।
এমন সময়ই বিশেষ সাক্ষী হিসাবে আবির্ভূত হলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান!
ঘটনার আকর্ষিকতায় সব কিছু থমকে গেছে। হতবিহব্বল হয়ে পড়েছে বাদী-বিবাদী উভয়েই…।
হতবিহব্বল শেখ হাসিনা ভাঙ্গা গলায় বললো- পিতা….।

বঙ্গবন্ধু: হ্যা….পিতা….আমি শেখ রাসেলের পিতা, জামালের পিতা, কামালের পিতা….সর্বপরি জাতির পিতা। জাতির সামান্য সন্তান ফিরোজ, আমারো সন্তান। ফিরোজের বাবার আক্ষেপ, জাতির পিতা হিসাবে আমারো আক্ষেপ……।

শেখ হাসিনা: (অপরাধবোধের সুরে) পিতা, আপনার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে, দল রক্ষার স্বার্থে…..।

বঙ্গবন্ধু: থামো….আমার স্বপ্ন….হা..হা…আমার স্বপ্নকে, আদর্শকে তো আমার সাথেই কবর দিয়েছ টুঙ্গিপাড়ায়!!! একাত্তুরে পাক হানাদারেরা আমাকে মারবার পারে নাই, পঁচাত্তরে বিপথগামী দেশীয় অপশক্তি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করলেও বঙ্গবন্ধুকে জনগনের হৃদয় থেকে মুছে ফেলবার পারে নাই…..এ ভালবাসা, এ ভালবাসায় গড়া দলের লাভ-ক্ষতি কিছু অপরাধির বিচারের ওপর নির্ভর করে না।

বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সাথে বলে চলছেন-
তোমাকে ভুল বোঝানো হয়েছে, তুমি ভুল করেছ!
তোমাকে অন্যায়ের পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তুমি অবিচার করেছ!

চারিদিকে সব কিছু শান্ত ও সমাহিত হয়ে পড়েছে। থেমে গেছে নহরের আওয়াজ, পাখির কলতান……….।

দুঃখিত পাঠক,এর বেশী কল্পনায় আমি অক্ষম! এটা শুধু স্রষ্টাই জানেন।
আমি শুধু আপনাদের এতটুকু জানাতে পারি- এমন আরেকটি স্বর্গীয় বিচারে( জিন্টুকে ক্ষমা করায়) বিশেষ সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দেবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান!

আজকের অবিবেচক বিচারকেরা সেদিন সুবিচারের মুখোমুখি হবেন এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হবেন।