নায়করাজ রাজ্জাককে অবহেলা বনাম আমাদের উদারতা

আসাদুজজেমান
Published : 23 August 2017, 11:31 AM
Updated : 23 August 2017, 11:31 AM

সত্যি বলতে, নায়করাজ রাজ্জাক মারা যাওয়ার পরেই আমি প্রথম জানলাম, উনি ইন্ডিয়ায় জন্ম নিয়েছিলেন। ১৯৪২ সালে কলকাতায় টালিগঞ্জে জন্ম নেয়া রাজ্জাক ২২ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হয়ে ঢাকায় আসেন। এরপর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। প্রকৃতির কি অপূর্ব লেনদেন! ১৯৩১ সালে এদেশে(পাবনা পৌরর হেমসাগর লেনে) জন্ম নেওয়া মহানায়িকা সুচিত্রা সেন সুইট সিক্সটিন বয়সে ১৯৪৭ সালে শরনার্থী হিসাবে কলকাতায় চলে যান। তার ১৭ বছর পর কলকাতা সুইট সিক্সটিনের বিনিময়ে বাংলাদেশকে দেন ড্যাশিং টুয়েন্টি টু।

এ দুই শরনার্থীই ভিন্ন দেশে, ভিন্ন পরিবেশে নিজেদের দ্রুতই মানিয়ে নেন। এ মানিয়ে নিতে গিয়ে তাদের নিশ্চয়ই স্বদেশের জন্য হৃদয়ের টানকে বুকে চাপা দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চমৎকার অভিনয় করতে হয়েছে? সে অভিনয়ের চমৎকার হোমওয়ার্কই হয়তো পরবর্তিতে তাদের এত দক্ষ অভিনেতা-অভিনেত্রী হতে সহায়তা করেছে। এর পেছনে অবশ্য নেপথ্যে থেকে বড় ভূমিকা ছিলো দু'বাংলার মাটির জোর।

যে মাটির উর্বরতাতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের সুচিত্রা পশ্চিমবঙ্গে বিকশিত হয়ে হয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা। আবার পশ্চিমবঙ্গে শেকড় রেখে আসা রাজ্জাক পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশে হয়েছেন নায়করাজ। কথা হলো, দুদেশের অভিন্ন হৃদয়ের যে বাংলার মাটি আর সে মাটির উর্বরতা আজ কোথায় গেলো? বাংলাদেশ এ উর্বরতাকে ধারন করে উদারতায়। কিন্তু কলকাতা?

যে কলকাতার সন্তান ভিন্ন দেশে রিফিউজি হয়েছে বলেই কি ভুলে যাবে জননী জন্মভূমি? আর তাইতো নায়করাজ রাজ্জাক মারা যাবার পর নুন্যতম নিউজ হলো না কলকাতার পত্রিকায়! আনন্দবাজার পত্রিকা, এবেলা, বর্তমান, ২৪ ঘন্টা, কলকাতা২৪*৭.কম সংবাদমাধ্যম মৃত্য খবর পর্যন্ত ছাপেনি! আজকাল এবং সংবাদ প্রতিদিন ছোট করে নিউজ দিয়েছে বটে তার মধ্যে একটি বাংলাদেশি অভিনেত্রী জয়া আহসানের লেখা।

আমি তুলনা করতে চাইনি, এটা এক ধরনের ছোটলোকি। কিন্তু এত বড় সংকীর্ণতা দেখে চুপ থাকাটাও কঠিন। আমার বাড়ি পাবনায়, আমি জানি সুচিত্রা সেনকে নিয়ে তার জন্মস্থানে কী হয়। আপনারা জানলে অবাক হবেন- সুচিত্রা সেনের নামে পাবনায় কয়েকটি স্মৃতি পরিষদ আছে। সাধারন মানুষ 'সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ' ব্যানারে আন্দোলন করে তার বাড়িটি দখলমুক্ত করেছে সুচিত্রার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। প্রতিবছর কেক কেটে নানা আয়োজনে পালন করা হয় সুচিত্রা সেনের জন্মদিন। প্রয়ানদিবস পালন হয় শোকের আবহে।

হায়, রাজ্জাক সাহেবের মৃত্যুর পর অবাক বিষ্ময়ে আমি দেখলাম- দু'দেশে শুধু নায়ক-নায়িকা বিনিময় হয়েছে, কিন্তু উদারতা বিনিময় হয়নি! এ নিয়ে অবশ্য আমার আর দুঃখ নেই, এ এখন আমাদের গর্ব। বাংলার মাটি, বাংলার বায়ু, বাংলার জল একই রকম উর্বর। তফাৎ নেই বাংলাদেশ আর কলকাতার প্রাণের ভাষার মাধুর্যতায়, মাটি-পানি-বায়ুর উর্বরতায়। আমরা সে মাধুর্যতা গ্রহন করেছি, এ উর্বরতায় বিকশিত হয়েছি। অন্যরা যদি না পারে, সে তাদের ব্যর্থতা। আমরা তাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ নই, নিজ উদারতায় গর্বিত।