আশরাফ উদ্দিন
Published : 28 March 2012, 05:32 AM
Updated : 28 March 2012, 05:32 AM

মা যেন না হারায়!!

মা!!! শব্দ টা মনে উঠতেই কেমন যেন গা শিউরে উঠে আলাদা কি যেন এক টানে। যে টান পৃথিবির কোন সম্পর্ক থেকে আসে না। গত ২৩ মার্চ আমার মা মনোয়ারা বেগম হঠাৎ অসুস্থতা বোধ করেন। বাসায় ড়াক্তর এসে সেলাইন দিয়ে চলেযান। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তার। ছোট বোন ফোন করে আমায় বলে মা কেমন যেন করছে। শুধু কান্না করছে আমাকে দেখতে চাছ্ছে। আমার বাড়ী মীরসরাইতে থাকি আগ্রাবাদ এলাকায় শুক্রবার হওয়াতে অফিসে যাওয়া না হলেও সকাল ৮ টা থেকে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ক্লাশ করতে হয়, মাঝখানে নামাজের বিরতি ছাড়া। বোনের ফোন যখন আসে তখন দুপুর ২.৩০টা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বিরতি শেষে ক্লাশে যাওযার। তা আর হলো না মা আমাকে ছাড়া হাসপাতালে ও যাবে না । অন্যদিকে ডাক্তার বলেছে হাসফাতালে নিয়ে অক্রিজেন দিতে হবে। কিন্তু মা কান্না করছে আর বলছে আমাকে ছাড়া বাসা থেকে বের হবেনা। শহর থেকে মিরসরাই যেতে ১.৩০ মি; সময় লাগে। এসময়ে যদি মায়ের কিছু হয়ে যায়!!! মাকে বার বার ফোন করে অনুরোধ করার পর ও হাসপাতালে যেতে রাজি হলেন না । তিনি অ-স্পষ্ট করে বলছেন আমি তোমাকে আল্লাহর কাছে হাওলা করেছি আমার কিছু হবেনা তুমি আস্তেধিরে আস আমি হাসপাতালে যাওয়া লাগবেনা আর শুধু কান্না করছে। অন্যদিকে মেঝ বোন বলছে তুই তারাতারি আয় ডাক্তার বলছে তাড়াতাড়ি অক্সিজেন দিতে হবে। বোনদের কান্নার আওয়াজ শুনে বুঝতে পালাম মায়ের অবস্থা তেমন ভালো না। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পরে মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো হাসপাতালের লোকজন ছিল পরিচিত তাদের কে ফোন করে বললাম যে আমার মা অত্যন্ত অসুস্থ তিনি আমাকে ছাড়া হাসপাতালে যেতে চাচ্ছেন না, কিন্ত আমি এখনো পথে বাসায পৌছতে আরও ১ ঘন্টা সময় লাগতে পারে এখন কি করা যায়। তারা বললেন কোন সমস্যা নেই আমরা দেখছি । তারা একটি এম্বুলেন্স নিয়ে বাসার সামনে গিয়ে বললেন যে, আমি গাড়ি পাঠিয়েছি আর মায়ের কথা বলার কোন সুযোগ না দিয়েই তাকে তুলে আনা হলো হাসপাতালে । হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে লোকজন আর ডাক্তার মিলে প্রাথমিক চিকিৎসা টা নিশ্চিত করেলেন । আমি যখন হাসপাতালে গিয়ে মায়ের হাত ধরলাম মা চোখ খুলে এমন ভাবে তাকালেন আর উঠে এমন ভাবে বসলেন যেন মায়ের কিছুই হয়নি। মাথায় হাত বুলাতেই বাচ্ছা মেয়ের মত হাউমাউ করে কান্না করে উঠলেন, নিজের কান্না চেপে রেখে মাকে বললাম কিছু হবে না আপনার। ডাক্তার বলেছে আপনার কোন সমস্যা নেই। মায়ের পাশে একটু বসেই দেখা করতে যাই ড়াক্তার এর কাছে। ডাক্তার জানালেন শারীরীক দুর্বলতা আর মানসিক চাপের কারনে এমন হয়েছে। ইসিজি আর কর্নিয়া রিপোট দেখে কিছু ঔষধ দিয়েদিলেন তার পর মাকে নিয় বাসায ‍যাই।

অভাবের সংসার হওয়ার ভালো করে দুবেলা তরকারী দিয়ে ভাত খেতে ও পারে না মা। মায়ের আলসারের সমস্যা থাকায় আমাদের মত সাধরন ভাত আর তরকারী ও খেতে পারে না। কোন প্রকারে সাধা ভাত নুন দিয়ে কচলিয়ে কচলিয়ে দু মুঠো ভাত ২ ঘন্টায় সময় নিয়ে কোন প্রকারে বেচেথাকার জন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে পেটের সাথে যুদ্ধকরে, জোর করে চিবিযে খান। যা একটা মানুষের বেচে থাকার জন্য কোন প্রকারেই যথেষ্ট নয়।

সব দেখি সব বুঝি তবু মাকে জিঙ্গাসা করতে পারিনা মা আজ তোমার কি খেতে ইচ্ছে করে। জিজ্ঞাসা করলেও মা কখনো বলেনি আমি ও খাবার টা খেতে চাই। মায়ের মুখে এখনো একটি বারের জন্য শুনিনি আমি এই খাবার টা খাবো, আমার এ জিনিস টা লাগবে।

৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, ঘরের যাবতিয় কাজ নিজ হাতে করা, ছেলে মেয়ের আর স্বামির খাবার যোগাড় করাই যেন তার জিবনের মুল স্তম্ভ।

বড় ভাই না জানিয়ে বিয়ে করে এখন আলাদা থাকছে। তার জন্য সবসময় কান্না করে বুক ভাসায়। ৪ মেয়ে এখনো অবিবাহিত। মাথা গোঁজার একটা ছাদ নেই। আমি যা আয় রোজগার করি তা দিযে আমার পড়া লিখার খরচ, বাসা ভাড়া, যাতায়াত খরচ, মেচের খরচ দিয়ে প্রতি মাসে ২হাজার টা টাকাও ঠিক মতে বাবার হাতে তুলে দিতে পারি না। দেনা পাওনায় চার দিক অন্ধকার হয়ে আসছে দিন দিন। বুঝতে পারলাম মায়ের এমন হওয়ার কারন এটাই।

তবু কিছুই করার যেন উপায় নেই। আমার উপর মায়ের অনেক আশা। বড় ছেলে কে হারিয়ে আমাকে আগলিযে রাখতে চায়। আমার ব্যাপারে একটু সামান্য কিছু কারো কাছে শুনলেই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে।

সবসময় ফোন করে পড়া লিখা যাতে ঠিকমত করি, অফিসে যাতে কোন কাজে অনিয়ম না করি, অন্যায় ভাবে যাতে একটা টাকাও কোথাও থেকে না নেই। কোন মেয়েলি ব্যাপারে যাতে না জড়াই এসব ব্যাপারে প্রতিনিয়ত অনুরোধ আর চোখের পানি দিয়ে বুক বাসানো।

আপনারা দোয়া করেবেন যাতে আমার মা সুস্থ হয়ে উঠে। আর আমরা যেন মায়ের অবাধ্য হতে না পারি।