নিউইয়র্কের গাঁজা আর আমার পান্তাভাত এবং বাঁচাও সুন্দরবন

আশরাফুল আলম
Published : 18 Nov 2016, 08:01 AM
Updated : 18 Nov 2016, 08:01 AM

ভাবুন আপনার বাসায় ইলেক্ট্রিসিটি নেই , প্রচন্ড গরমে আপনি হাঁসফাঁস করছেন। এই সময় আপনাকে যদি কেয় এসে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে লেকচার দেয়, তা কি আপনি খুব ভালো ভাবে নিবেন? বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য আপনাকে যে পরিস্থিতিতে যেতে হবে তা কি আপনার আছে? ভালো খারাপের সংঘা অত্যন্ত আপেক্ষিক একটা বেপার? আপনি যা ভালো মনে করছেন, অনেকে তা মনে নাও করতে পারে। আপনি হয়তো বলতে পারেন, যা ভালো বা সত্য, তা সব সময় ভালো আর সত্য, অন্য কেও মানুক বা না মানুক। মোটের উপর বেশির ভাগ আমরা এরকমই ভাবি।

নিউ ইয়র্কে গাঁজা মানে 'গঞ্জিকা' সেবনে কোনো বাধা নিষেধ নেই। দোকানে অবাধে গাঁজা বা কোকেইন কিনতে পাওয়া যায়। সমানে লোকজন রাস্তায় – পাবলিক প্লেসে গাঁজা খায় আর আমার মতো নিরীহ মানুষের, বাসে বা ট্রেনে সেই গাজার গন্ধ সহ্য করে চলতে হয় ।এখানেই অবাক হবার কিছু নেই, নকল গাজা বা কোকেইনে ভোরে গেছে নিউইয়র্ক শহর সরকারি ভাবে বাসে- ট্রেনে, সাধারণ জনগণকে আসল গাজা বা কোকেইন সেবনের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয় । হারবাল গাজা বা কোকেইন শরীরের জন্য ভালো, অনেকটা এই রকম। কি মনে হচ্ছে, গাঁজাখুরি কিছু লিখে ফেলেছি? এই গাঁজাখুরি ভাবার জন্যই গাজার গল্পটা বললাম ।কারণ আপনি যেটাকে গাঁজাখুরি ভাবছেন , সেটা পৃথিবীর এই প্রান্তে পান্তা ভাত, আর আপনার পান্তা ভাত এখানে অবাস্তব একটা মেনু ।

তাহলে মানতে বাধা নেই, সব সময় আপনি যা ভালো মনে করেন তা পৃথিবীর অন্য প্রান্তে ভালো নাও হতে পারে। মানুষে চাহিদা অনুযায়ী ভালো খারাপের নির্ধারণ হয় । ঠিক কি কারণে আপনি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কে ভালো মনে করছেন না, তা কি ঠিক করে বলতে পারবেন? মনে হয় না । পৃথিবীর এই প্রান্তের মানুষগুলোর কাছে এই মুহূর্তে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা সুন্দরবন নিয়ে যে আগ্রহ সেটা আসলে কেন, তা কি আপনি ওই প্রান্তে বসে বুঝতে পারবেন? বোঝার কি কথা? যেখানে আপনি গাজা আর পান্তা ভাতের মিল করতে পারবেন না, সেখানে কিভাবে আপনি এদের চাহিদা আর আপনার চাহিদা এক করছেন?

টকশোগুলোতে দেখলাম পুরো ডেটাবেজ নিয়ে বসে একদল বলছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের জন্য হুমকি। আর একদল বলছে, আমাদের এখন ইলেকট্রিসিটি দরকার, হারিকেন না। আপনি কখনই গাঁজা আর পান্তাভাত এক সাথে মিলাতে পারবেন না। দুইটা দুই রকমের মেনু, দুই প্রান্তের । কোন পক্ষ না নিয়ে বলছি, লন্ডন আর নিউইয়র্কের পাওয়ার প্লান্টগুলো কি দেখেছেন? দেখেছেন বায়ু দূষণ? কিন্তু এই দেশগুলোতে পরিবেশ নিয়ে কথা বলার কেউ নেই । কারণ কি জানেন, পৃথিবীর এই প্রান্তে আন্দোলন একটা নিয়ম মাফিক ব্যায়াম। আপনার বয়েস যদি ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে হয়,আপনার ড্রেস কোড, আচার আচরণ আন্দোলনের ধারা সবই একই রকম হবে। আপনি WORLD BANK , WTO , UN  অফিসের সামনে তাবু টাঙিয়ে আন্দোলন করবেন, এটাকে বলা হয় PANK লাইফ স্টাইলের একটা অংশ । এদের প্রত্যেকের জীবনে এই বয়েসের এই ধরণের কিছু ছবি আপনি পাবেন এদের ফেসুবুকে।  আর বয়েস যদি ৪০ উর্ধে হয় , এই একই মানুষটি এই সবের মধ্যে আর থাকে না। হয়তো যে WORLD BANK বা UN অফিসের সামনে বসে একদিন আন্দোলন করছে , এখন সে সেই UN -এ জব করছে ।

আর অদ্ভূত ভাবে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে আপনি এদের এই লাইফ স্টাইলকে ভাবছেন সম্পূরূক চিন্তা । একবার কেন ভাবছেন না, আপনার কি প্রয়োজন? গাঁজা বা পান্তা ভাত যাই আপনি চান নিজের মতো করে হালাল করে নিন। আপেক্ষিক এই বাস্তবতায় দূরের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের দিকে তাকান, সরকার এই মুহূর্তে আপনার জন্য গাঁজা, আর  পান্তা ভাত দুটোই হালাল করে রেখেছে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি পছন্দ করে নেন, কিন্তু পৃথিবীর অন্য প্রান্তের কাউকে রেফারেন্স টানবেন না, কারণ আপনার কোনো আইডিয়া নেই, যাকে আপনি রেফারেন্স টানছেন, সে কতটুকু আপনার মতো।