আপনার কষ্টের কারণ ও প্রতিকার

আশরাফুল আলম
Published : 4 Dec 2016, 02:55 PM
Updated : 4 Dec 2016, 02:55 PM

চলুন একটা গেম খেলি । ধরুন আপনি আর আপনার কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা ১০০ টাকার নোটকে নিলামে তুললেন । আপনি হয়তো মজা করে ২০ টাকা দিয়ে নিলাম শুরু করলেন । আপনার অন্য বন্ধু হয়তো ৫০ । এভাবে আপনি অবাক হয়ে দেখবেন একসময় আপনাদের মধ্যে থেকে কেয় একজন এই ১০০ টাকার নোটটিকে ১৫০ টাকা বা তার অধিক দামে কিনতে চাইবে । এর কারণ খুবই সহজ । আপনাদের মাজে নিজেদের মধ্যে বড় হবার প্রতিযোগিতা । অথচ খেলার শুরুতে আপনারা সবাই কিন্তু হেসেছিলেন খেলাটি নিয়ে । কারণ ১০০ টাকার নোট কে কিনবে এর চেয়ে বেশী দাম দিয়ে ?  এক মুহূর্তের ব্যাবধানে আপনারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে নিতান্তই অবাস্তব একটা কাজ করে বসলেন ।

ধরুন আপনি স্বাধীনচেতা একজন মানুষ । আপনার অফিস শেষে আপনার স্ত্রী যখন আপনাকে বাজার করে আনতে বলে আপনি তখন প্রচন্ড মেজাজী একজন মানুষ হয়ে উঠেন । কিন্তু একবার ভেবে দেখেন সকাল থেকে কোন কাজই কিনতু আপনি নিজের ইচ্ছেই করেননি । ঘুম থেকে উঠার পর আর ঘুমাতে যাবার আগে পর্যন্ত আপনার প্রায় প্রতিটি কাজ অন্যের জন্য করা । আপনি যেখানে নিজের ইচ্ছে মতোই কিছু করতে পারেন না তখন কিভাবে নিজেকে স্বাধীনচেতা ভাবছেন ? আর কিভাবেই বা আপনার স্ত্রী সামান্য বাজার করে আনতে বললে আপনার মনে হয় আপনার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে ? তবে আপনি যদি স্কুল বা কলেজের ছাত্র হন তাহলে হয়তো আপনার নিজের ইচ্ছের স্বাধীনতা এখনো কিছু আছে । যত বড় হবেন তত আপনাকে অন্যের ইচ্ছে পূরণ করে বাঁচতে হবে ।

এখন আসি আপনার কষ্টের কথা নিয়ে । যেহেতু আপনি নিজের ইচ্ছে মতো কিছুই করেন না তাহলে আপনার কৃতকর্মের জন্য আপনি কেন কষ্ট পাচ্ছেন ? কখনো কি নিজেকে প্রশ্ন করেছেন ? মানে আপনি বাজার করতে গিয়ে টমেটোর বদলে আলু নিয়ে আসলেন ঘরে আর এর জন্য বৌয়ের বোকা খেয়ে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন । প্রশ্ন হচ্ছে যে কাজটি আপনি আপনার ইচ্ছে বা নিজের জন্য করেননি তার জন্য আপনি কেন কষ্ট পাচ্ছেন ? এক্ষেত্রে আপনি হয়তো ভয়ে থাকেন পারিবারিক কলহ । কিন্তু একবার কি আপনি এই কলহের কষ্ট না পেয়ে চোখ বুজে থাকার চেষ্টা করেছেন ? একবার চেষ্টা করে দেখুন দেখবেন আপনার কষ্টের দিন গুচে যাবে । মানে খুব সাধারণ ভাবে আপনার নিজের জন্য না করা কাজের কষ্ট মনে নিবেন না । দেখবেন আপনি অনেক সুখ অনুভব করছেন ।অদ্ভুত ভাবে আমরা সবাই ঠিক উল্টোটা করি । নিজের বুদ্ধিতে বা নিজের জন্য করা কাজর ভুল সহজে মেনে নিয়ে বলতে থাকি "নিজের বুদ্ধিতে ফকির হলেও সুখ"

ঠিক এই কারণেই স্কুলের বাচ্চা থেকে শুরু করে জেল খানার কয়েদিদের একই রকম ড্রেস থাকে । যাতে স্কুল থেকে জেলখানা এই দুই জায়গাতেই  কোন অসুস্থ প্রতিযোগিতার শুরু না হয় । আপনি হয়তো বলতে পারেন স্কুলের পরীক্ষার কথা । ফিনল্যাণ্ড নামের এই দেশটি পৃথিবীর প্রথম দেশ যেখানে স্কুলে কোন ধরণের পরীক্ষা হয় না । এবং বিশ্বাস করুন শিক্ষা নীতির সাফল্যের লিস্টে ফিনল্যান্ডের নাম প্রথম ।

এখন  তাহলে ভাবছেন অফিসে ভুল করে কেন কষ্ট পাবেন না ? কষ্ট না পেলে শিক্ষা নিবেন কিভাবে আর নিজেকে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন কিভাবে ? এর উত্তর আমি প্রথমেই দিয়েছি । অযথা সামনের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য আপনি নিশ্চয়ই ১০০ টাকার একটা নোট ১৫০ টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারেন না । খুব সম্ভবত আমরা সবাই তাই করছি ।

খুব কম সংখ্যক মানুষ আছে যারা এই নিলামে ১০০ টাকার নোটটি কখনোই ১০০ টাকার বেশী দামে কিনবে না । তারাই সফল মানুষ ।

সরকার যখন ফেইসবুক বা ভাইবার বন্ধ করে দেয় তখন আপনি ভাবেন আপনার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে । কিন্তু যখন প্রতিদিন আপনার বস আর আপনার স্ত্রী আপনার প্রায় সব ধরণের কাজের লিস্ট আগে থেকে করে দেন তখন সেটাকে আপনার ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী মনে হয় না ।

কষ্টের চরম সীমায় পোঁছানোর পর সব পথ হাড়িয়ে সুখের সন্ধানে আপনি উপরের দিকে হাত তুলেন । দোয়া করেন সুখের আশায় । কিন্তু পৃথিবী যেহেতু গোলাকার হয় আর সূর্যের চারপাশে ঘুর্নিমান আপনি নিচ্চিত থাকতে আপনার তোলা হাত ভুল পথ নির্দেশনা করছে । কারণ যেটাকে আপনি উপর ভাবছেন ক্ষনিকেই সেটা আপনার পাশে চলে যাচ্ছে । অর্থাৎ আপনার দোয়া কবুল হচ্ছে না । ভুল পথে হাত তুললে এটা হতেই পারে ।

প্রচন্ড ক্রিয়েটিভ মানুষ জনের দুঃখ কষ্ট কম থাকে । কারণ এদের ধারণা এরা যা কিছু করে থাকে তা আগে কখনোই হয়নি বা কেয় কাজটি করেননি । তাই নিজের ভুল মাপার জন্য এদের কারো সাথে প্রতিযোগিতায় যেতে হয়না । কিন্তু ভেবে দেখুন আপনি কখনই এমন কিছু চিন্তা বা ধারণা করতে পারবেন না যা আপনি আগে কখনই দেখেননি বা আপনার মগজে এর ধারণা নেই. ক্রিয়েটিভ মানুষরা যা করে তা হলো অনেক গুলো ধারণাকে এক সাথে করে নতুন একটা ধারণা দেয় । যেহেতু এনারা কারো সাথে প্রতিযোগিতায় নেই তাই এরা আমার আপনার চেয়ে সুখী ।

রোজার সময় আপনি ৩০ টা দিন না খেয়ে থাকতে পারেন । কিন্তু রোজার পর একদিন না খেয়ে থাকলে আপনার মনে হয় আপনি মারা যাবেন । এটা শুধু মাত্র আপনাকে একটা শাসনের মধ্যে রাখার ফল । কারণ আপনার স্বাধীনতা আপনার কষ্টের কারণ । যে স্বাধীনতা আপনাকে প্রতিযোগী করে তুলে আর এর ফলে আপনি কষ্ট পান সেই স্বাধীনতা আপনার কতটুকু প্রয়োজন একবার ভেবে দেখবেন ।