হীরক রাজার দেশে এয়ার ফোর্স ওয়ান

আশরাফুল আলম
Published : 8 Dec 2016, 03:49 AM
Updated : 8 Dec 2016, 03:49 AM

গত সপ্তাহে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজের জন্য বিমান কিনতে না করে দিলেন ব্যায়বহুল বলে। আর গতকাল ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের জন্য দুটি এয়ার ফোর্স ওয়ান এর অর্ডার ক্যানসেল করে দিলেন। সেই একই ব্যায়বহুলতার কারণে। কি আশ্চর্য মিল এই দুই দেশ প্রধানের আচরণে। আপনি অবাক হচ্ছেন আমি কিসের সাথে কি মিলাচ্ছি এই ভেবে? ভাববেন না পুরোটা পড়ার পর আপনি আরেকবার অবাক হবেন এই ভেবে "আগে কেন আপনি ভাবেননি এই ভাবে?"

জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয়তার কারণ উনি খুব সহজে আপনার আর আমার মনের মধ্যে থাকা কথা গুলো লিখে ফেলতে পারতো। মানে ধরুন কষে একটা থাপ্পড় লাগানো বা অদ্ভুত কিছু করে বসা এই ধরণের আচরণগুলো আমাদের মনের কাঙ্খিত আচরণ। আমাদের প্রায়ই নিজেদের অপছন্দের মানুষজনকে এই রকম কষে একটা থাপ্পড় লাগাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই কাজটি আমি বা আপনি কখনোই করতে বা বলতেও পারি না। যখন আমাদের অতৃপ্ত এই আচরণটি আমরা অন্যের মাঝে দেখি আমাদের অসম্ভব ভালো লাগে। আপনি পুলকিত হন আনন্দ পান। আচরণের এই দিকটিকে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে বলা হয় নর্মালাইজেশান।

প্রধানমন্ত্রী যখন এতবড়ো একটা বিমান নিজের জন্য কিনবেন না বলে দিলেন তখন প্রথমেই আপনার মনে হলো অসাধারণ। আপনি নিজে হলেও হয়তো তাই করতেন। সাধারণ মানুষের প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ভাবে চলবে। এটাই স্বাভাবিক। অন্তত আপনার কাছে। আর আপনি অসাধারণ ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আপনার কাতারের একজন ভাবতে লাগলেন। এক্ষেত্রে বিমানের প্রয়োজনীয়তা বা এর দাম কত এই সব আপনার বিবেচ্য বিষয় না। আপনার শুধু ঐটুকুই ভালো লেগেছে যেটুকু আপনার সাথে যায়।

খুব সম্ভবত এই একই কারনে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের টুইটার মেসেজ দিয়ে বোয়িং কোম্পানিকে ৪ বিলিয়ন ডলারের দুটি বিমান বানানো বন্ধ রাখতে বললেন। যেখানে এই দুইটি বিমানের দাম ১৭৫ মিলিয়ন ডলার আর এর এটি বানাতে সময় লাগবে ২০২২ সাল পর্যন্ত। মানে ঠিক কি কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কাজটি করলেন আমেরিকার মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। আরো মজার ব্যাপার হলো বোয়িং এই একমাত্র আমেরিকান কোম্পানি যারা এই ধরণের বিমান বানিয়ে থাকে।

আপনি যদি হীরক রাজার দেশে ছবিটি দেখে থাকেন তাহলে এই আচরণগুলোর মিল খুঁজে পাবেন। তখনকার রাজারা মন্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে বশ করে রাখতো। আর এখনকার রাজারা আরো সহজে আপনার নিজের মনের কথা দিয়ে আপনাকে বশীভূত করে রাখে। আপনি ভুলে যান বাস্তব হিতাহীত জ্ঞান। ছোটবেলায় জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে মেজর জিয়ার একটা মূর্তি দেখেছিলাম। তিনি বসে ছিলেন একটা ধানি জমিতে কোদাল হাতে। চোখে রেবন সানগ্লাস, হার্ররোডস এর জামা আর হাতে রোলেক্স ঘড়ি। ব্যাপারটা প্রচন্ড বেমানান। এখনও সেই মূর্তি আছে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে। হয়তো উনি সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ ছিলেন বলে খুব বেশি নরমাল হতে পারেন নি। কিন্তু চেষ্টা করেছেন।

আপনি কি একবার ভেবে দেখেছেন কেন আপনার হিন্দি সিরিয়াল গুলো ভালো লাগে না? আর আপনার স্ত্রীর কাছে কেন এতো প্রিয় এই সিরিয়ালগুলো? আপনি সারাদিন ঘরের বাইরে যে জীবনটা পার করে আসেন বাসায় ফেরার পর আপনি ঠিক তার উল্টো কিছু দেখতে চান টিভিতে। আপনার পছন্দ হয়তো খবর বা মুভি বা কার্টুন বা খেলাধুলা। আর আপনার স্ত্রী সারাদিন বাসায় থেকে যে জিনিসগুলো মিস করে তাই উনি টিভিতে দেখতে চায়। আর এই কারণেই হিন্দি সিরিয়াল এতো জনপ্রিয় আপনার স্ত্রীর কাছে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনাকে বশীভূত করার মন্ত্র আপনার মনের মাঝেই আছে। কজন মানুষ আছে যারা নিজের ভালো লাগা নিয়ে থিসিস করে। ভালো লাগলেই হলো। কিন্তু এই ভালো লাগা যদি হীরক রাজার দেশের মন্ত্র পড়া হয় তবে আপনাদের রক্ষা করতে গোপি গায়েন আর বাঘা বায়েন খুব সম্ভবত এখনকার যুগে পাবেন না। নিজের রক্ষা নিজেই করুন। একবার হলেও নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন ভালো লাগছে? বুজবেন এই ভালো লাগারও কারণ আছে। পৃথিবীতে অকারণে কিছুই হয়না।