স্যার, দয়া করে ‘স্যার’ উপাধি ব্যবহার করবেন না

আশরাফুল আলম
Published : 2 Jan 2017, 05:44 PM
Updated : 2 Jan 2017, 05:44 PM

ব্র্যাক চেয়ারম্যান ফজলে হাসান আবেদ আমাদের গর্ব নিঃস্বন্দেহে। তবে নামের আগে স্যার উপাধী কতটা সন্মানজনক তা ভাববার বিষয়। যেখানে তিনি এই উপাধী কোন ভাবেই ব্যাবহার করতে পারেন না। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু এবং অসম্মানজনক। কারণ যতবার ব্রিটিশরা এই ধরনের খবর দেখছে ততবার আমাদের নিয়ে উপহাস করছে। মনে মনে হলেও।

আসুন জানি স্যার উপাধী কিভাবে পায় আর এর ব্যবহার কিভাবে বা কারা করতে পারেন। ব্রিটিশ সরকার ১৩৪৮ সাল থেকে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য নাইট উপাধি ঘোষণা করে। প্রথমে সেনাবহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ক্রমে এই উপাধী অন্যান্য সাধারণ মানুষের মাঝেও বিতরণ শুরু হয়। পাঁচটি ভিন্ন রকমের নিতে উপাধীর মাধ্যমে স্যার শব্দটার ব্যাবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। অর্থাৎ আপনি যদি নাইট উপাধী পান তবে আপনার নামের আগে স্যার শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে ব্রিটিশ নাগরিক হতে হবে। আপনি যদি অন্য কোন দেশের নাগরিক হন এবং নাইট উপাধিতে ভূষিত হন তবে আপনি স্যার শব্দটি নামের আগে ব্যাবহার করতে পারবেন না। তবে চাইলে আপনি কে বি ই ইংরেজির এই তিনটি শব্দ ব্যবহার করতে পারেন।

বিল গেটস, এঞ্জেলিনা জোলি, স্টিভেন স্পিলবার্গ সহ আরো অনেক নন্দিত মানুষ জন নাইট উপাধিতে ভূষিত। শুধুমাত্র ব্রিটিশ না হবার কারণে এরা কেউই কিন্তু স্যার শব্দটা ব্যবহার করেন না। কারণ এটা স্পষ্টতই সীমা লংঘন। আরো একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে এই নন্দিত মানুষগুলো নিজেরা নিজেদের স্বকীয়তায় এতো জনপ্রিয় এদের আসলে আলাদা করে স্যার বলার দরকার পরে না।

আমি আগেও অনেকবার দেখেছি কিন্তু বুঝতে পারি না ঠিক কি কারণে ফজলে হাসান আবেদ এই স্যার উপাধী ব্যবহার করেন? যেখানে তিনি জানেন এটা উনি ব্যবহার করতে পারেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন কেও কিছু বলছে না? ব্রিটিশরা মুচকি হাসতে পারে তবে আপনাকে সরাসরি কিছু বলবে না। ব্যাপারটা খুবই লজ্জাজনক। যেখানে রবীন্দ্রনাথ নাইট উপাধী ফিরিয়ে দিয়ে জনপ্রিয় সেখানে আরেকজন বাঙালি অপ্রয়োজনীয় ভাবে এই উপাধী সমানে ব্যবহার করে যাচ্ছেন! আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ জানে না এই উপাধী কি বা কারা দেয়। তাহলে কাদের কাছে দেখানোর জন্য এই ব্যবহার। আর যারা জানেন তারা এও জানেন এই উপাধী উনি অপপ্রয়োগ করছেন।

নাইট উপাধী যারা পান তাদের স্ত্রীদের লেডি বলে সম্বোধন করতে পারেন। এটাই ব্রিটিশ সংস্কৃতি। তবে আমি জানি না ফজলে হাসান আবেদ উনার স্ত্রীকে লেডি উপাধী দিয়েছেন কিনা। উনি যদি স্যার উপাধী ব্যবহার করতে পারেন তবে উনার স্ত্রী অবশ্যই লেডি ব্যবহার করতে পারেন। নিয়ম বা অনিয়ম দুটোই সবার জন্য সমান।

ব্যাপারটা মোটেই হালকা ভাবে নেবার কিছু না। বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এবং মিডিয়ার প্রচার এর দিক বিবেচনা করলে এই ধরনের একটি অপপ্রয়োগ লজ্জাজনক। তবে একথা ঠিক ফজলে হাসান আবেদ যদি ব্রিটিশ নাগরিক হয়ে থাকেন তবে নির্দিষ্ট একটা সময় পর উনি স্যার উপাধী ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু উনার নাগরিকত্ব নিয়ে আমি যদি ভুল না করি তবে উনি বাংলাদেশী।

সম্মান অর্জনের ব্যাপার এবং সামগ্রিক সমগোষ্ঠীর মাঝে সীমাবদ্ধ। আপনি ব্রিটিশ উপাধী ব্রিটিশ শাসনে ব্যবহার করবেন এটাই স্বাভাবিক। যেখানে আপনাকে এই উপাধী দেবার অর্থ পরিষ্কার। আপনার কর্মকান্ড ব্রিটিশ রাজপরিবারের কাছে অনেক প্রাসঙ্গিক। আমার যদি ভুল না হয় তবে আমি প্রয়োজনীয় সব দালিলিক প্রমাণ এই লেখার সাথে লিংক হিসাবে দিয়েছি। আমি আমার ফজলে হাসান আবেদকে আমার নিজের মতো করে চাই। রাণীর দেয়া কোন অলংকারে নয়। এটুকু সন্মান দেশ আপনার কাছে চাইতেই পারে। কারণ যা কিছু করছেন এই দেশেই।

দেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম গুলো যখন এই ধরনের খবর প্রকাশ করে তখন একটুখানি গুগল করে নিলেই পারে। অন্ধভাবে মোহে পড়ার দিন কি এখনো আছে? আমার তো মনে হয় না।

ব্রিটিশ অফিসিয়াল নাইট সাইট