হিমাঙ্কের মাঝে প্রেম-ভালোবাসা

আশরাফুল আলম
Published : 15 Jan 2017, 08:30 AM
Updated : 15 Jan 2017, 08:30 AM

শীত গ্রীষ্মের সাথে ভালোবাসার মতো অনুভূতি জড়িত থাকবে না এটা হয় না । বর্ষায় আবেগী হওয়া বা শীতে বিবাগী হওয়ার মতো আমাদের অনুভূতি গুলো সত্যিই তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে । হিমাঙ্কের উপর আর হিমাঙ্কের নিচের ভালোবাসার তারতম্য অনেকটাই ভাববার মতো । এক এক দেশে শীতের এক এক রূপ । এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আপনার হাড় কাঁপছে অথচ নিউ ইয়র্কে এই মুহূর্তে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে প্রায় ১৫ ডিগ্রি । সুতরাং অনুভূতির তারতম্য আবশ্যিক ।

হিমাঙ্কের এতো নিচে ভালোবাসার রূপ অদ্ভুত । শরীরের সাথে জামা কাপড়ের ঘর্ষণে তীব্র ইলেক্ট্রিক শকের মতো ঝাকুনি লাগে । হাতে হাত রাখতে হলে আগে থেকে হাতে লোশন লাগিয়ে নিতে হয় । নাহলে শক খাওয়ার ভয় থাকে । ভাবুন এই অবস্থায় প্রেম ভালোবাসার কি অবস্থা হয় ?শুধু যে শরীর এই আচরণ করে তা না । মনের ভেতরেও অদ্ভুত এক অনুভূতি হতে থাকে । বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে শীতের এই সময় ইকুয়েডর সীমারেখায় বসবাসকারী সবার মাঝে এক ধরণের মনোরোগ দেখা দেয় । এর নাম সিসনাল ইফেক্টিভ ডিসর্ডার ।এর ফলে ক্ষুধামন্দা হতাশা থেকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পর্যন্ত আসতে পারে । শীত কালের এই ডিসর্ডার আসলেই অনেক ভয়াবহ ।এই রোগের অন্যতম কারণ সূর্যের আলো । সকাল বেলা সূর্যের আলো উঠার সাথে সাথে পাখিরা জেগে উঠে । পাখিদের শরীর সূর্যের আলো সংবেদনশীল. খেয়াল করলে দেখবেন শীত কালে পাখিরা অনেক দেরি করে ডাকাডাকি শুরু করে । কারণ শীতে সূর্যের আলো দেরি করে উঠে । পাখিদের মতো আমাদের শরীর ও মন আলোক সংবেদনশীল । শীতের অল্প আলো আর সূর্যের স্বল্পতা আমাদের মনের মাঝে বিষন্নতা জাতীয় বিক্রিয়া তৈরী করে ।

আমাদের শরীরের ইমুনেশন সিস্টেম সারাক্ষন আমাদের শরীরকে কার্যক্ষম করে রাখতে ব্যাস্ত । শীতকালে কোন এক অদ্ভুত কারণে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি । স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের শরীর খুব সহজে যে কোন খাবার ডাইজেস্ট করে ফেলতে পারে । কিন্তু শীতকালে এই ব্যাপারটা এতো সহজে হয় না । তাপমাত্রা কম থাকার কারণে আমাদের পাকস্থলীতে খাবার ডাইজেস্ট করতে শরীরকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হয় । এর ফলে ডায়রিয়া বা এই জাতীয় রোগ এই সময় খুব বেশি দেখা যায় । হাসপাতাল গুলুতে শীতকাল সবচেয়ে ব্যবসা সফল একটা সময় । এই সময় রোগীর শঙ্কা বা সংখ্যা দুটুই অনেক বেড়ে যায় । আমাদের শরীরের ইমুনেশন সিস্টেম অনেক দুর্বল থাকে এই সময় । চাইলেই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস এর সাথে আগের মতো যুদ্ধ করতে পারে না । শরীরের অল্প ব্যাথা অনেক বেশি মনে হয় এই সময় । ভালোবাসার বা এই জাতীয় অনুভূতির সময় কোথায় ।

শীতের এই সময়টাতে বেশি করে ভিটামিন মিনারেল এই জাতীয় খাবার খাবেন । এতে শরীর এন্টিবডি তৈরী করতে পারবে । অসুস্থ হবার ভয় কমে যাবে ।

তাপমাত্রা যখন খুব কমে যায় আমাদের ঘুম অনেক হালকা হয়ে যায় । আমরা আগের মতো গভীর ভাবে ঘুমাতে পারি না । এর ফলে আমাদের দিনের বেলার কাজকর্ম গুলো অনেকটা ঝিমিয়ে পরে । দুপুর বেলা আমাদের মনে হয় একটু ঘুমিয়ে নেই । কারণ আমাদের মন দিনের এই সময়টাকে রাতের কাছাকাছি মনে করতে শুরু করে । ঠিক এই কারণেই শীত প্রধান দেশ গুলোতে মাঁনুষ জন গ্রীষ্মের সময় পাগলের মতো ঘোরাঘুরি করে । কারণ এরা বছরের প্রায় বেশির ভাগ সময় অনেকটা রাতের মাঝে থাকে । আর আমাদের দেশে এর উল্টো । কারণ আমরা গরমের সময় প্রচন্ড গরমে ঘোরাঘুরির কথা ভাবতে পারি না । শীতের সময়টুকুতে যেটুকু আলো পাই তার মাঝে ঘুরে মজা পেতে চাই ।

ধর্মেও শীত গ্রীষ্মের সময় ভালোবাসার রূপ বিন্যাস করা আছে । তাপমাত্রার প্রকারান্তে এই নির্দেশ অনেকটা আমার আপনার প্রেম ভালোবাসা নিয়ন্ত্রণ করে । সুতরাং আমাকে আপনাকে মানতেই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে গভীরতম অনুভূতি প্রেম অথবা ভালোবাসা পুরোপুরি পরিবেশের তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল । এখন থেকে এই জাতীয় অনুভূতির টের পেলেই সবার আগে গুগল এ তাপমাত্রা দেখে নেবেন ।

তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির কাছাকাছি আসলে বুঝতে পারবেন সবচেয়ে ভালো সময় এটা আপনার জন্য । কারণ গবেষণায় দেখা গেছে এই তাপমাত্রায় বেশির ভাগ মানুষ সবচেয়ে বেশি সুখী থাকে। আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের জন্মদিনের লিস্টি নিলে দেখবেন বেশির ভাগ জন্মদিন ডিসেম্বর জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মাঝে । আর যদি বেশির ভাগ বিয়ের অনুষ্ঠানের সময়কে যদি এর সাথে মিলিয়ে দেখেন দেখবেন এই সময়টার তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে । যদি অন্যান্য প্রাণীকুলের ক্ষেত্রে ঋতু আর তাপমাত্রা বিবেচ্য হয় তবে আমাদের ক্ষেত্রেও তা হবে। এটাই স্বাভাবিক । আমি যদি ভুল না করে থাকি এই সময় দেশের তাপমাত্রা অনেকটা এর কাছাকাছি । খুব সম্ভবত ভালোবাসার এটাই উৎকৃষ্ট সময় । শরীর ও মন ভালো থাকলে তবেই ভালোভাবে ভালোবাসা যায় । কারণ এখন আপনি বুঝতে পারছেন আপনার মন কতটা অসহায় সামান্য তাপমাত্রার কাছে ।

আসুন ভালোবাসি। শরীর মন সবকিছু দিয়ে । আবার এই তাপমাত্রা আসতে আরো এক বছর ।