স্মরণকালের সবচেয়ে বড় নারীবাদী মিছিলটি হয়ে গেলো বিশ্বব্যাপী। শুরুটা ওয়াশিংটনে হলেও মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পরে বিশ্বের নানান শহরে। তবে এই মুহূর্তে ঘুমিয়ে আছে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের নারীরা। হয়তো সকালে কি নাস্তা বানাবে তার কথা চিন্তা করছে বা স্টার প্লাস সিরিয়ালে কি ঘটলো আজ তা নিয়ে গবেষণা করছে। এই নারীরা কিভাবে বিশ্বের সাথে তাল মিলাবে? যেখানে বিশ্বের খবরগুলো এরা পায়, খবর যখন ইতিহাস হয়ে যায় তখন। আমি জানি সকাল হতে হতেই ফেসবুকে ঝড় উঠবে এই নারীবাদী আন্দোলনের। কিন্তু এতো দেরিতে কেন? কি সমস্যা আমাদের নারীদের মাঝে? নাকি এখনো আমাদের নারীরা পরাধীন? সমস্যাটা আমাদের নারীদের জীবন ধারায়। বেশিরভাগ আমাদের জীবনযাত্রা বা ফেসবুকে পোস্টিং নির্ভর করে অন্যের উপর। আমরা আগে দেখি কোন খবরটা বেশি শেয়ার হচ্ছে বা কোন খবরটা বেশি লাইক পাচ্ছে। এরপর হয়তো নিজে লাইক দেই বা শেয়ার করি। শেষ কবে আপনি নিজে একটা খবর সবার আগে পোস্টিং দিয়েছেন? মনে পড়ছে না? এর কারণ আপনি এই ধরনের কিছু হয়তো কখনোই করেন নি।
সারাটাদিন নিউইয়র্কে নিজের এপার্টমেন্টে বসে অপেক্ষা করছিলাম কখন দেখবো বাংলাদেশ থেকে কেউ এই ধরনের নারী জাগরণের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেলেও কাউকে পেলাম না। পাশের দেশ ইন্ডিয়া আর নেপালের কিছু নারীকে দেখে ভালো লাগলো সোশ্যাল মিডিয়াতে। কিন্তু দিল্লী বা নেপালের নারীরা যদি এই আন্দোলনে নিজেদের যুক্ত করতে পারে তবে আমাদের ঢাকার নারীরা কোথায়? একজনও কি এই মুহূর্তে সিএনএন বা বিবিসি দেখছে না? হয়তো তাই। যে মুহূর্তে রাতের খাবার প্লেট ধুতে ব্যাস্ত থাকে রমণী সেই মুহূর্তে আমার এই রকম আশা করাটা একটু বেশি বেশি।
আমার দুই মেয়ে। একজনের জন্ম লন্ডন শহর আর একজন মার্কিন নাগরিক। এই মুহূর্তে মায়ের সাথে দেশে আছে। মন খারাপ করে আমার স্ত্রীকে ফোন দিলাম। বললাম আমার একটা ছবি চাই ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য। স্যাম্পল দিলাম নেপালের নারীদের একটা ছবি। ওই দিক থেকে শুনলাম “বাচ্চা ঘুমাচ্ছে এখন সম্ভব না” তবে অনেক পীড়াপিড়িতে ছবি পেলাম। টিভির স্ক্রিনে দেখলাম কিভাবে বাচ্চা কোলে নিয়ে মেয়েরা মিছিল করছে বক্তৃতা দিচ্ছে। মনটা আরো খারাপ হলো। কি আছে এই নারীদের যা আমাদের নারীদের নেই? ওয়াশিংটনের এই নারীরা এখনো পুরুষের চেয়ে কম বেতনভুক্ত এখনো এরা নিজের ইচ্ছেমতো গর্ভ ধারণ বা গর্ভপাত কোনোটাই করতে পারে না। এখনো এই নারীদের পণ্য হিসেবে দেখে সমাজ। তবে এরা সবাই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রে থাকে। যেখানে আমাদের নারীরা প্রতি রাতে উড়াল দেবার স্বপ্নে বিভোর থাকে।
কি পাচ্ছে না আমাদের নারীরা? প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধীদের সব নেত্রী নারী। তাহলে কেন এই নারীরা পিছিয়ে? কেন নারী সংগঠনগুলোর ফেসবুক পেজে পুরুষ সদস্য বেশি? এই লজ্জা নারীদের না পুরুষের আমার জানা নেই? আজকের এই র্যালি শুরু হয়েছিল নারীদের অধিকার নিয়ে। শেষ হচ্ছে প্রায় সব ধরনের অধিকার আদায়ের র্যালি হিসেবে। নারীদের শুরু করা আন্দোলন হঠাৎ করেই সামগ্রিক আন্দোলনে রূপ নিলো! নারী আবার প্রমাণ করলো সবকিছু ধারণ ক্ষমতা কেবল তারই। আমাদের সমাজের ঝিমিয়ে পড়া নারীদের নাড়া দেবে কে? যারা এখনো বসে থাকে পাশের নারী কি করছে সেটা ফলো করার জন্য। কবে এরা নিজেদের ভালো নিজেরা বুঝবে তা আমার জানা নেই।
আজকে এই জঘন্য নিশ্চুপতা আবারো প্রমাণ করলো আমাদের নারীরা কোনোভাবেই বিশ্বমানের না যদিও সুযোগ-সুবিধা অন্যের চেয়ে বেশি পাচ্ছে। ভাবতে খুবই খারাপ লাগছে। আমার দুইটা মেয়ে। এরাও কি বিশ্বমানের হবে না?
#womansmarch
মোনেম অপু বলেছেনঃ
আমাদের পুরুষরাই বা কবে আপনার কথিত “বিশ্বমান” অর্জন করে ফেললো? আগে তো পুরুষরা অর্জন করুক। তারপর না হয় নারীদের নিয়ে আক্ষেপ করা যাবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সেখানকার পুরুষরাও তো রাস্তায় নামলো। কিন্তু কই, বাংলাদেশের পুরুষরা তো কিছুই করলো না। তাহলে শুধু নারীদের মান নিয়ে এতো বড় একটা প্রশ্ন কেন করলেন, বোধগম্য হলো না। আর আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আমাদের নারী-পুরুষদেরকে কেনই বা মাতামাতি করতেই হবে? এ-রকমটা করার কোনো দায় আমাদের আছে বলে তো দেখছিনা। ট্রাস্প আমেরিকান মাল, আমেরিকানদের ভোটে জেতা জিনিস। তারা বুঝুক। হ্যাঁ, আপনি যদি মনে করেন, আমাদেরও রাস্তায় নামা উচিত, তবে আমাদেরকে আহ্বান করতে পারেন। কিন্তু ওইখানে দেখলেন আর আমাদের এখানে দেখলেন না বলেই মান নিয়ে প্রশ্ন করে বসলেন!
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
চমৎকার পোস্ট! বিশ্বের নারী জাগরণের এটা একটা নতুন মাত্রা, সন্দেহ নেই। কিন্তু লেখকের সাথে অনেক বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি। বাংলাদেশের নারীদের বিশ্বমানের না হওয়ার জন্য তিনি এমনভাবে খেদ প্রকাশ করেছেন যে এ থেকে ধরে নিতে হবে বাংলাদেশের পুরুষরা ইতোমধ্যেই বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে। তাই নারীদের পিছিয়ে পড়াতে মনোকষ্ট হয়। কিন্তু এটা কি ভাবে ধরে নিলেন যে বাংলাদেশের পুরুষরা ইতোমধ্যেই বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে?
দেশ শক্তিশালী হলেই যে সে দেশের নাগরিকগণ শক্তিশালী হবেন, এমন কোন কথা নেই। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী হলেই যে সেই দেশের নারীরা সবচেয়ে শক্তিশালী হবে এমন তো নয়। বিশ্বব্যাপী নারীদের যে সামগ্রিক অবস্থা সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নারীগণ যে খুব বেশি এগিয়ে আর বাংলাদেশের নারীরা যে খুব বেশি পিছিয়ে– এমনটি আমার মনে হয় না। মানুষ মাত্রই তার একটা মানসিক সন্তুষ্টির বিষয় আছে। এখন যদি মানসিক অবস্থার বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের নারীদের থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই।
নারী পুরুষের ভূমিকা দেশ সমাজে কাল ভেদেও পার্থক্য হয়। কারণ জগতে স্থান, কাল ও সমাজ পরিবর্তনশীল। তাই বিষয়টিকে সামগ্রিকভাবেই দেখা ভাল।
জনাব আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী আর উন্নত দেশ বলে কথিত যে দেশের নারীরা ‘এখনো পুরুষের চেয়ে কম বেতনভুক্ত’ যারা এখনও নিজের ইচ্ছেমতো গর্ভ ধারণ বা গর্ভপাত কোনোটাই করতে পারে না’ সেই দেশে উড়াল দেবার জন্য আমাদের দেশের নারীরা নারীরা প্রতি রাতে স্বপ্ন দেখে। আমি মনে করি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কোন জরিপ বা গবেষণা ছাড়াই সরলিকরণ করা বিজ্ঞতার পরিচায়ক নয়।