স্পটলাইট থিওরি: তাহসান ও মিথিলা

আশরাফুল আলম
Published : 3 July 2017, 04:20 AM
Updated : 3 July 2017, 04:20 AM

ব্যাতিক্রম এইবারের ঈদ নাটকগুলো । তাহসানকে দেখা গেলো মানুষিক বিকার গ্রস্থ চরিত্রে , দেখলাম কুকুরের সাথে রাত্রিযাপন নিয়ে নাটক অথবা অক্ষয় কুমারের ছবির হুবহু নকল । তাহসান কখনো এই রকম চরিত্রে অভিনয় করবে আমার ধারণা ছিল না । আমার ধারণা ছিল আমার প্রিয় এই নায়কটি সবসময় টাইট শার্ট প্যান্ট পরে মুখের ভেতর কথা রেখে ডায়লগ ছুড়বে । আধুনিক ভালোবাসার জনক এই নায়কের পরিবর্তন নিয়ে আমি যথেষ্ট চিন্তিত ছিলাম বেশ কয়েকদিন । পরে আমার স্ত্রীকে দেশে ফোন করে জানতে চাইলাম ও কি ভাবছে এই বিষয়ে? আপনাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হলেও আমার সহধর্মিনী আমার এই ধরণের আচরণে অভস্থ । ও আমাকে মনে করিয়ে দিলো নায়ক-নায়িকার কিছু সূত্র ।

তাহসান মিথিলার সংসার ভাঙছে । আমি বলছি না । পেপার পত্রিকা বলছে । আমি শুধু বাতাস দিচ্ছি । তবে এই বাতাস ঘূর্ণিঝড় হবে এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি । ফিল্মি জগতে এই রকম হবে এটা স্বাভাবিক । কিন্তু তাহসান বা মিথিলার মতো উচ্চ শিক্ষিত তারকা দম্পতি নিজেদের বাক্তিগত জীবন ম্যানেজ করতে পারবে না এটা আমার ধারণা ছিল না । এটাকে যদি আপনি একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার ব্যবসা হিসাবে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন কেন সুনাম আর সফলতার সাথে পার্টনারশিপ ব্যবসায় ধস নামে ।

যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অ্যাসেট । তারকা দম্পতি তাহসান আর মিথিলার ব্র্যান্ড ইমেজ ছিল সবার বেশ উপরে । কারণ এরা সবার থেকে কিছুটা আলাদা ছিল । দর্শকরা সবসময় ব্লেন্ডিং পছন্দ করে । এক সাথে গান পড়াশুনা অভিনয় এই রকম দম্পতি খুব একটা দেখা যা্য় না আমাদের দেশে । সুতারং ব্র্যান্ড ইমেজে ১০০ তে আমি এই দম্পতিকে ৮০ দিতে পারি । আপনি যে কোনো ব্যাবসায় লেগে থাকলে সফল হবেনই। যেহেতু এই তারকা দম্পতি লেগে ছিল অভিনয়ে তাই এরাও সফল হলো । তবে ইকোনমিক্সের সূত্র মতে এই সফলতার একটা লিমিট করা আছে । একে বলা হয় স্যাচুরেশন পয়েন্ট । মানে নির্দিষ্ট একটা সফলতার পর আপনি আর উপরে উঠতে পারবেন না । আপনি আবার নিচের দিকে নামতে থাকবেন ।

আর ঠিক এই কারণেই লাক্স বা ক্লোজআপের মতো ব্র্যান্ড গুলো কিছু দিন পর পর তাদের মোড়ক বদলায় । আর আমরা ভাবি নতুন কিছু । সুতরাং ইন্ডাস্ট্রিতে সবসময় সফল থাকতে হলে নিজের মোড়ক বদলাতে হবেই । তবে বেশির ভাগ তারকা মোড়ক বদলাতে গিয়ে নিজের সহধর্মিনী বদলিয়ে ফেলে । তাহসানের ব্যতিক্রমী আচরণ হয়তো নিজের ব্র্যান্ড ইমেজ বদলানোর প্রয়াস । আশা করি অন্য সবার মতো স্যাচুরেশন পয়েন্ট এ স্ত্রী বদলিয়ে ইমেজ আপট্রেন্ড উনি করবেন না । লাইফ এর ব্যালান্স তত্ত্বের ভিত্তিতে এই তারকা জুটি এখন সেলফ এস্টিম পর্যায়ে আছে । এই পর্যায়ের পর তাদের সামনে যাবার আর কোনো পথ নেই । সম্ভবত ঠিক এই কারণেই তাহসান আর মিথিলা নাটক ছেড়ে রুপালি পর্দায় নেমে পড়ছে। সবাই হয়তো এটাই করে । তবে তত্ত্ব মতে এটা বিরাট এক ভুল । কারণ একই পণ্য দুই ধরণের মার্কেটে কোনো ভাবেই চলতে পারে না। আর এখানেই শেষ হয় বেশির ভাগ তারকার ব্যক্তিগত জীবন।

যে কোনো ব্যবসায় কমিউনিকেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার । ইন্ডাস্ট্রিতে সারাদিন যাদের সাথে উঠা বসা সবাই যদি একরকম হয় তবে আপনিও একসময় তাদের মতো হয়ে যাবেন । যদি এমনটি ভাবেন তবে বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীরা সবাই তাদের কর্মচারীদের মতো হয়ে যেত। সারাদিন তো ওদের সাথেই থাকতে হয়। কিন্তু আমি কোনো ব্যবসায়ীকে দেখিনি অফিসের পর বাসায় গিয়ে কর্মচারীর মতো আচরণ করতে। এরা সবাই অফিস এ এক রকম বাসায় আরেক রকম । এটাকে বলা হয় ডুয়েল পার্সোনালিটি ম্যানেজমেন্ট । অর্থাৎ অফিসে কর্মচারীদের সাথে বসে চা নাস্তা করে বাসায় গিয়ে পোলাউ কোর্মা খাওয়া । যে কোনো সফল মানুষ এটাই করে। তাহসান দেশের সর্বোচ্চ ব্যবসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী আর সাথে আছে আমেরিকান ফেলোশিপ । মিথিলা গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষিত। সুতরাং এই দম্পতি নিজেদের জীবনে তাদের শিক্ষা প্রয়োগ করবেন এটাই স্বাভাবিক।

ব্যবসায়ীরা সবসময় স্পট লাইট এড়িয়ে চলেন। এর মানে হলো আপনি যত বেশি স্পট লাইটের নিচে থাকবেন আপনার খুঁটিনাটি তত সবার চোখে পড়বে। এটাকে বলা হয় স্পট লাইট ইফেক্ট। তারকা হিসেবে আপনি যত বেশি পর্দায় আসবেন তত দর্শকদের চাহিদা বাড়তে থাকবে। অনেকটা টিভিতে পণ্যের বিজ্ঞাপনের মতো। আপনি যত বেশি কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখাবেন তত আপনার পণ্যের চাহিদা বাড়বে। আর আপনি যদি চাহিদা মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে না পারেন তবে মার্কেট থেকে আপনাকে চিরবিদায় নিতে হবে। এরপর আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন আর কেউ বিশ্বাস করবে না। সাধারণ মার্কেটিং এর এই সূত্র ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও সমান। তাহসান মিথিলার চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে নিজেদের ডেলিভারি দেবার ক্ষমতা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন আছে। সাপ্লাই আর ডিমান্ড এর মাঝের এই ফাঁকটুকু পূরণ করতে গিয়ে এক সময় বেশির ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়।

ব্রিটিশ রাজপরিবার তাদের নিয়ে মুখরোচক বানানো গল্পের কোনো প্রতিবাদ করে না। আমাদের দেশের সাংবাদিক থেকে ব্রিটিশ সাংবাদিকরা অনেক বেশি নোংরা। তবে ব্রিটিশ রাজপরিবার কখনোই এই রকম সংবাদকে সরাসরি প্রতিবাদ জানায় না। ব্রিটিশ রাজপরিবারের নিজেদের ওয়েবসাইট আছে। আছে নিজেদের সংবাদ পরিবেশ মাধ্যম। রাজপরিবার তাদের সব ব্যক্তিগত ব্যাপার-স্যাপার এই সাইটটির মাধ্যমে অফিসিয়ালি সবাইকে জানায় প্রায় প্রতিনিয়ত। অথচ কনসারভেটিভ এই রাজপরিবার নিজেদের প্রাত্যাহিক জীবন যাপন সবার সামনে তুলে ধরবে এটা কেও কল্পনাও করনি । এই ওয়েবসাইটটির ফলে ব্রিটিশ রাজ্ পরিবার নিয়ে মিথ্যে সংবাদ এখন প্রায় বন্ধ। কারণ যে কেও চাইলেই তাদের রানী আজকে কী দিয়ে ডিনার করছে তা সরাসরি রানীর কাছ থেকেই জানতে পারে। রানীর ব্র্যান্ড ইমেজ অবশ্যই যে কোনো পত্রিকার খবর থেকে অনেক বেশি ।

তারকা দম্পতি জানেন কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া সামলাতে হয় । উনাদের কাছ থেকে সবাই নতুন কিছু আশা করে । অপু বিশ্বাস যদি একটা ইন্টারভিউ দিয়ে সারা দেশকে ইনভল্ভ করে নিজের সংসার টিকিয়ে ফেলতে পারে, তাহসান মিথিলার কাছ থেকে আমাদের আরো অনেক বেশি কিছু আশা করা দরকার। কারণ উনারা স্পট লাইটের নিচে আছেন।

কথা হচ্ছিলো তাহসান মিথিলার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে । গেলাম ফিলিপ কোটলারে । বেশির ভাগ আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে কটলার টানি না । কিন্তু অফিসে অন্যের জন্য কটলার কপচাতে বিরাট অংকের মাইনে নিয়ে থাকি। একবারও ভাবি না যে সূত্র আমি অন্যের জন্য প্রয়োগ করছি তা আমার জন্যও প্রযোজ্য। কেও না কেও আমার আপনার জন্য এই রকম সূত্র বানিয়ে চলছে অহরহ। আর আমরা সবসময় এই সূত্রের মাঝে খেই হারিয়ে ফেলি। নিজের জীবনের সূত্র নিজে তৈরী করুন। অন্যরা মানুক না মানুক। আপনি সফল হবেন। কারণ সংসার ভাঙলে কোনো সূত্রই আর কাজ করবে না।