ন্যায়পালের পেপাল ও সুতোর প্যাঁচ

আশরাফুল আলম
Published : 19 Oct 2017, 03:17 PM
Updated : 19 Oct 2017, 03:17 PM

গত এক  বছর যাবৎ প্রতি সপ্তাহে পেপাল দিয়ে নিউইয়র্ক থেকে দেশে টাকা পাঠাই আমি। আমার কোনো পেপাল একাউন্ট নেই। আমার স্ত্রীরও কোন পেপাল একাউন্ট নেই। আমরা খুব ভালো ভাবেই টাকার আদান প্রদান করি। আমি আমার ডেবিট কার্ড দিয়ে মোবাইল থেকে মুহূর্তের মধ্যে এই কাজটি সেরে আসছি গত একটা বছর। ঠিক কি কারণে এখন ঘটা করে এই সার্ভিসটির এতো আয়োজন আমার বোধগম্য নয়। অনেক কিছুই হয়তো আমার বোধগম্য হচ্ছে না বেশ কিছুদিন ধরে। ঠিক কিভাবে দেশে নীল তিমির গেমটা খেলে সবাই বা ঠিক কিভাবে উবার এর মতো সার্ভিসে চলে দেশের রাস্তায়? অনেক কিছুই।

আমার বোধের উপর বোধ করি দেশ চলেনা। বোধের কথা না হয় বাদই দিলাম। যেখানে সুবোধ থাকে দৌড়ের উপর। আমার বোধ তো নস্যি। দেশ চালানোর জন্য অনেক মন্ত্রণলায় আছে। আছে বেশ জ্ঞানীবোধ সম্পন্ন মানুষজন। জ্ঞানী মানুষের সমস্যা হলো উনারা চোখ বন্ধ করে ভাবেন। আর তাতেই উনাদের মনে হয় কেউ কিছু দেখছেন না। নিজের বন্ধ করা চোখের অন্ধ বিশ্বাসে দেশে ঢুকে পরে উবার, নীল তিমি অথবা পেপাল নামে জুম। আর সাধারণ মানুষজন অজ্ঞান অবস্থায় উঠে পড়েন উবারে বা খেলে ফেলেন নীল তিমির মতো ডার্ক ওয়েব এর গেমগুলো।

পেপাল নিয়ে সরকারের আইসিটি মন্ত্রনণালয়ের উচ্ছাসের শেষ নেই। এই পেপালের মাধ্যমেই নাকি আমাদের উঠতি প্রজন্মের স্মার্ট জেনারেশনরা বাইরে থেকে রেমিটেন্স এনে দিবে দেশকে। যে জেনেরেশন রিয়েল আইপি ছাড়া ডার্ক ওয়েবের নীল তিমি গেম খেলে ছাদ থেকে লাফিয়ে মরে তারা এনে দেবে দেশে রেমিটেন্স? তাহলে আমি কি করছি নিউইয়র্কে? গত এক বছর এতোগুলো টাকা জুম-পেপালের মাধ্যমে কোথায় পাঠালাম? খুব সম্ভবত আগামি সপ্তাহ থেকে আমি হুন্ডি দিয়ে কিভাবে দেশে টাকা পাঠাতে হয় তা নিয়ে আগ্রহী হতে পারি। কারণ নিউ ইয়র্ক থেকে আমার কিঞ্চিৎ অপমান বোধ হতেই পারে। বোধ করি এতে কারো আপত্তি থাকার কথা না।

আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় আমার অসম্ভব প্রিয় একজন মানুষ। বেশ সাদা মনের। উনি মন্ত্রী হয়ে এখনো থাকেন এমপি হোস্টেলে। চড়েন ট্যাক্সি-রিক্সায়। এই অসম্ভব ভালো মানুষটি আমার কাছে একজন ন্যায়পালের মতো ব্যক্তিত্ব। আদর্শের কাছে জিতে যাওয়া এই মন্ত্রীমহোদয় স্বাভাবিক ভাবেই উবার বা নীল তিমি অথবা পেপালের মতো ভার্চুয়াল জগতের মারপ্যাঁচ নিয়ে বেশ যন্ত্রনায় থাকতে পারেন। কিন্তু উনাকে যারা ডিটেইলিং দেন উনারা বেশ জটিল ধরণের মানুষজন। আছেন দেশ সেরা আইটি বিশেষজ্ঞ। আছেন নামকরা বিজ্ঞানীরা। তাহলে প্রশ্ন হলো কিভাবে এবং কেন আমি যে জুম-পেপাল গত এক বছর যাবৎ ব্যবহার করছি তা এতদিন পর দেশে উদ্ভোধন হচ্ছে? অথবা ঠিক কোন লিংকে দেশে নীলতিমি গেম খেলা হচ্ছে? অথবা উবারের ভাড়া বাবদ কেটে রাখা টাকার ট্যাক্স সরকার ঠিক কিভাবে পাচ্ছে?

আমার দুই মেয়ে। একজনের বয়স ৭ আর একজনের ২ বছর।  বড় মেয়ের ডিটেইলিং এর অবস্থা খুবই বাজে। ও একসাথে অনেক্ষণ ধরে বসে কিছু করতে পারে না। অস্থির হয়ে উঠে। যেটাকে আমরা ধৈর্যের অভাব বলি। ওর জন্য একটা খেলা বানানো হলো। ছোট জনকে দিয়ে একটা সুতোতে প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়া হবে আর বড় জন ওই প্যাঁচ খুলবে আমার সামনে। আমি আইপি ক্যামেরা দিয়ে দেখবো কতটা ডিটেইলিং এর মাধ্যমে আমার বড় মেয়ে সুতোর প্যাঁচ খুলতে পারে। সুতোর প্যাঁচ খোলার এই ধৈর্য পরীক্ষা আমরা অনেকেই পারবো না। কারণ আমরা পত্রিকার শিরোনাম পড়ে বাকি খবরটা চোখ বন্ধ করে নিজেরা বানিয়ে ফেলি। যেহেতু বেশির ভাগ আমরা জ্ঞানী ধরণের মানুষ। আমরা চোখ বন্ধ করলেই আমাদের দুনিয়া শুরু হয়ে যায়। সুতোর প্যাঁচ খোলাটা জরুরি কিছু না। বিষয় হলো কত তাড়াতাড়ি আমরা নিজেদের গল্প বানাতে পারি। হোক উবার, হোক নীলতিমি অথবা পেপাল।

আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা দেশ নিয়ে সব সময় গর্ব করার চেষ্টা করি। দেশের কিছু গর্ব করার মতো থাকলে তা আশেপাশের সবাইকে বলি। কিন্তু দেশ যখন বাতিল জিনিস নিয়ে এতো মাতামাতি করে তখন এই রকম লেখা ইংরেজিতে লিখতে ভয় হয়। এখানে আমার আশেপাশের মানুষগুলো যদি বুঝতে পারে অবশ্যই এরা আমার দেশ নিয়ে হাসবে।

সুতোর প্যাঁচ খোলাটা বেশ জরুরি । আর এর মধ্যেই অভিজ্ঞতা আর চঞ্চল তারুণ্যের পার্থক্য। ন্যায়পাল হতে সুতোর প্যাঁচ খুলতে হয় না। কিন্তু দেশের জন্য কিছু করতে সুতোর জট অবশ্যই খোলা জরুরি।

পরিশেষে সকল ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু সকল ক্ষারকই ক্ষার না এই সূত্র মতে জুম পেপালের একটা অংশ হলেও কিন্তু পেপাল না। এখন এই সুতোর প্যাঁচ খোলার দায়িত্ব আপনাদের।