আওয়ামী লীগ ও একটি ই-মেইলের গল্প

আশরাফুল আলম
Published : 19 Nov 2017, 05:32 PM
Updated : 19 Nov 2017, 05:32 PM


২০০৬ এর কথা। অদ্ভুত এক নেশা ছিল। কথাবার্তা ছাড়াই ই-মেইল বা ফ্যাক্স করার। নতুন নতুন ইন্টারনেট আসলে যা হয়। এমনি একটা ই-মেইল করে বসলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়েব সাইটে। সরাসরি দলের প্রেসিডেন্টকে। এখানেই শেষ নয় । মেইলের বিষয়টা ছিল আরো ভয়াবহ। ওই সময় দলটি ছিল বিরোধী কাতারে । সমানে ধর পাকড় আর মার খাচ্ছিলো বিএনপি সরকারের কাছ থেকে। আমি আওয়ামী লীগকে বোঝালাম কিভাবে অর্গানিজইজড ওয়েতে আন্দোলন করা যায়। ভাবুন একবার। অনেক গুলো প্রস্তাব ছিল। যার বেশির ভাগ ছিল চরম হাস্যকর । কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে আমি উত্তর পেলাম আমার মেইল এর । উত্তরটা পাঠায় তখনকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা সাবের হোসেন চৌধুরী। জানতে চান আমার এই ধরণের মার খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার অভিজ্ঞতা আছে কিনা? ওই বয়সে এই রকম একটি মেইলের অদ্ভুত এই আচরণ বেশ উষ্ণতার জন্ম দেয় । তবে বয়সের সাথে সাথে উষ্ণতা কমে আসে। প্রায় ভুলে যাওয়া ওই মেইলটি যখন আজ পড়তে বসি ভাবি সময়ের অনেক আগেই দলটি আমার মেইলের উত্তর দিয়েছিলো ।

বিরোধী কাতারে থাকা একটি রাজনৈতিক দল যখন নিজেদের আন্দোলনের জন্য এতটা প্ল্যানড ওয়েতে চলে তখন দলটির প্রতি শ্রদ্ধা জাগা স্বাভাবিক। আমি এরপর আর দ্বিতীয়বার মেইল করিনি। নিজের শিশু সুলভ আচরণে বেশ লজ্জা পাচ্ছিলাম। অন্তত এখন পর্যন্ত । আজ এতো বছর পর এসে মনে হলো ব্যাপারটি মোটেই শিশু সুলভ ছিল না । একটা দল চলবে সভ্য আচরণের মধ্য দিয়ে । থাকবে সুদূর প্রসারী চিন্তা ধারা। মার্ খেলেও খাবে প্ল্যানড ওয়েতে। ওই সময়কার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তখনি বেশ ডিজিটাল ছিল।

সাবের হোসেন চৌধুরী এখন হয়তো আগের মতো নেই। তার জায়গায় অন্যকেও হয়তো এখন মেইল এর উত্তর দিচ্ছে। হয়তো আরো ভালো ভাবে। একজন সাধারণ মানুষের কাছে এই রকম একটা ই-মেইল বা ফোন কল কতটা উষ্ণতার জন্ম দেয় তা যদি অন্য দলগুলো জানতো তবে বেশ ভালো হতো ।অন্তত সমাবেশের সময় যানজট থাকতো না।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যবহার করেন টুইটার। মধ্যরাতে জেগে বসে টুইট করাটা তার রীতিমতো নেশা। সব ধরণের প্রটোকল এর পাশ কাটিয়ে ট্রাম্পের এই আচরণ এই দেশের সাধারণ মানুষ বেশ উপভোগ করে । নিজেদের মনে করতে পারে তাদের প্রেসিডেন্টকে। যে কারণে এতো কিছুর পরও ট্রাম্প এখনো মধ্যরাতে টুইট করে। এতে দোষের কিছু নেই। বরং প্রটোকলের ভেতর থাকাটাই এখন বেশ সমস্যার কারণ ।

দেশের অনেক নেতা-নেত্রী এখনো প্রটোকল নেশায় আচ্ছন্ন । কথায় কথায় ডুঁকরে উঠেন ক্যান্টনমেন্টের বাড়ির জন্য। অথবা বিশেষ পুলিশি প্রহরার জন্য । আমাদের মতো অতি সাধারণ মানুষের পক্ষে রাজা রানীর মতো প্রটোকলের গল্প এখন বেশ বেমানান। আমরা আমাদের মতোই দেখতে চাই সবাইকে। ইচ্ছে হলেই একটা ই-মেইল করে দিবো । জানাবো মনের কথা । বিশেষ পাড়া মহল্লায় থেকে বিশেষ আচরণ এখন খুব একটা উষ্ণতার সঞ্চয় করে না কারো মনেই। সাধারণ ভাবে অসাধারণ হতেই বেশ কাঠখড় পড়াতে হয় সবাইকে । কানাডার প্রেসিডেন্ট বা লন্ডনের প্রাইম মিনিস্টার যখন গণ পরিবহনে চড়েন ভাববার কারণ নেই উনারা অনিরাপদ। আসে পাশের সব কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে । শুধুমাত্র সাধারণ মানুষকে নিজেদের অসাধারণ জীবন যাত্রা না দেখাবার জন্যই ওই ব্যবস্থা। আজকালকার যুগে এটাই অসাধারণ। যখন দেখি কোন এক নেত্রীর পাশে থাকার জন্য জামা-জুতো ছেঁড়াছিড়ি হয় তখন বুঝতে বাকি থাকে না আসেপাশের মানুষগুলো বেশ অসাধারণ। আর এই অসাধারণ মানুষগুলোর মাঝখানের নেত্রী কিভাবে সাধারণ আচরণ করবেন? প্রশ্ন থেকেই যায় ।

আমার ই-মােইলের উত্তরে আমি বিহ্বলিত নই । বরং আমার ভাবতে ভালো লাগে এমন একটি দল আছে আমার দেশে যার আচরণ বেশ সাধারণ । যতদিন যাবে তত মানুষের মাঝে স্বাভাবিক আর সচেতন থাকার প্রতিযোগিতা বাড়বে । একসময় দুবেলা খাবারের জন্য যারা দিন চলতো তারা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন । একটা ই-মেইল তারা করতেই পারেন । আজকের আওয়ামীলীগ কর্মী সংগ্রহের জন্য ওয়েব সাইটের সাহায্য নেয় । মুহূর্তের মধ্যে আমি হতে পারি একজন কর্মী বা সমর্থক । এতে বাধা থাকার কথা না । এমনটিই হয় সারা বিশ্বে । তবে পিছিয়ে থাকা অন্য দলগুলো যদি শুধু প্রটোকলের দোহাই দিয়ে আবার প্রটোকল পেতে চান তবে প্রশ্ন থেকেই যায় ।

আমাকে অতি সাধারণভাবে একটু সম্মান দেন আমি আপনার সাথে থাকবো । এটুকু সম্মান সবারই প্রাপ্য ।