মামা বাড়ির আবদার!

আশরাফুল আলম
Published : 6 Feb 2018, 01:09 PM
Updated : 6 Feb 2018, 01:09 PM

কিছুদিন আগে বাসার ড্রাইভারকে কোতোয়ালি থানার এসআই বেদম পিটুনি দিলো। অপরাধ বেশ গুরুতর। প্রথম অপরাধ সিগন্যাল দেবার পরও গাড়ি থামায়নি। দ্বিতীয় অপরাধ পুলিশের সাথে বাড়াবাড়ি। আর সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ নিজেকে মন্ত্রীর মামার ড্রাইভার বলা। ফলাফল কঠিন রকমের ডান্ডাবাড়ি। ব্যাপারটা মোটেই মামা বাড়ি আবদার না। শীতকালের বেদম পিটুনির ব্যাথা সবাই বুঝতে পারে না। শারীরিক ব্যাথার চেয়ে ড্রাইভারের মনের ব্যাথা অনেক বেশি। ঠিক কি কারণে পিটুনি খেলো তা-ও বুঝতে পারছে না। ড্রাইভার বুঝতে না পারলেও আমি ঘটনা শোনার সাথে সাথেই বুঝতে পারলাম বেদম প্রহার এর কারণ। মন্ত্রীর মামারা কখনো ২০০৪ মডেল এর গাড়িতে চড়ে না। ২০১৮ আর ২০০৪ মডেল এর মাঝখানে বিশাল ফারাক। একটা ভিআইপি আর একটা অতি সাধারণ।

অতি সাধারণের গাড়ি চলবে ধীর গতিতে। সার্জেন্ট হাত তুললেই থেমে যেতে হবে। এম্বুলেন্স, ভিআইপি অথবা জরুরি গাড়িগুলো চলবে রকেট গতিতে। উল্টো পথে চললেও সমস্যা নেই। কারণ অতীব জরুরি এইসব গাড়ির চলাচল। অর্ধেক দেশকে জ্যামে রেখে এই গাড়িগুলো ঠিক কোথায় যায় তা না জানলেও চলবে। ধরুন এম্বুলেন্স করে রোগী নিয়ে ভিআইপি মর্যাদায় হাসপাতাল গেলেন। গিয়ে দেখলেন ডাক্তার সাহেব জ্যামে আটক পরে আছে। এটা হতেই পারে। অতঃপর সব ডাক্তাররা মিলে আবেদন করলো ভিআইপি হবার। তারও সমাধান হলো। শেষমেশ দেখা গেলো ভিআইপি সড়কে লম্বা জ্যাম আর অতি সাধারণ গাড়িগুলো রকেট গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

মন্ত্রী পরিষদের সচিব বললেন অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ভিআইপিদের জন্য আলাদা সড়ক করা হবে। ঠিক কোন দেশে এই রকম সড়ক আছে তা কিন্তু উনি জানাননি। আর সাংবাদিক ভাইয়েরাও জানার আগ্রহ বোধ করেননি। অসাধারণ এক পরিস্থিতি। ভিআইপি সড়কের বেশ উপকারিতা। যেনতেন মানুষ আর অস্বাভাবিক ভিআইপি মানুষদের মধ্যে একটা পার্থক্য করা যাবে। যে কেউ আর চাইলেই মন্ত্রীর মামার বাড়ির গল্প বলতে পারবে না। বেশ অভাবনীয় চিন্তা। এই রকম চিন্তা ধারা একমাত্র আমাদের দেশেই সম্ভব। দুইটা শ্রেণির মানুষকে রাস্তা দিয়ে আলাদা করে দেয়া। অসাধারণ!

ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী যখন পাবলিক ট্রেনে চড়ে। আমেরিকার সিনেটরা যখন ট্রেনে চড়ে। ডোনাল ট্রাম্পের বাসার সামনে যখন সবাই আন্দোলন করতে পারে, আমরা তখন আলাদা সড়ক করার কথা ভাবি। ভাবতেই পারি। ভাবতে তো আর ক্ষতি হয় না। কিন্তু এই জাতীয় ভাবনা যদি মন্ত্রী পরিষদের হয় তখন তাদের নিয়ে ভাবনাটা বেড়ে যায়। তাদের বেড়ে উঠার পরিবেশ নিয়ে ভাবনা হয়। ভাবতেই পারি।আমার ভাবতেও তো সমস্যা নেই। তবে আমার ভাবনা আর মন্ত্রী পরিষদের ভাবনায় অনেক পার্থক্য। একটা অতি সাধারণ ভাবনা আর একটা ভিআইপি।

সে যাই হোক। শীঘ্রই ভিআইপি সড়কে চলাচলের নিয়ম কানুন আসবে। কার কার গাড়ি চলবে ঐ সড়কে একটা ফর্দ পাওয়া যাবে পত্রিকায়। আমাদের ড্রাইভার অধীর আগ্রহে বসে আছে তার ২০০৪ মডেলের গাড়িটা ঐ ফর্দে থাকবে। ড্রাইভার একবার গাড়ির দিকে তাকায় আর একবার অবিশ্বাসী চোখে আমাদের দিকে। আসলেই কি এটা মামা বাড়ি? সে এখনো বুঝতে পারছেনা কি কারণে ঐদিন এতগুলো পিটুনি খেলো? শীতের সকালে ড্রাইভারের শরীর ব্যাথায় বেঁকে বসে। বেচারা বুঝতে পারে না এটা অতি সাধারণ একটা ব্যাথা। শীতকালে প্রায় সবারই এমন ব্যাথা হয়। আর এও বুঝতে পারে না তার ২০০৪ মডেলের গাড়ি কোনো ভাবেই মামা বাড়ির আবদার না।