বিএনপির জনমত গঠন কর্মসূচি সফল হতে পারে, যদি…

(আসাদ জামান)
Published : 24 August 2012, 01:09 PM
Updated : 24 August 2012, 01:09 PM

বিএনপির বোধোদয় হয়েছে অবশেষে। এখন তারা সরকারের বিপক্ষে প্রবল গণ আন্দোলন থেকে সরে এসেছে। তাদের লক্ষ্য এবার জনমত গঠন। এটি একটি ভাল লক্ষণ যে শেষ পর্যন্ত বিএনপি বুঝতে পারলো তাদের দ্বারা আর যাই হোক আন্দোলনে সফল হওয়া সম্ভব নয়। বিএনপির বর্তমান জনমত গঠনের এই সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচনে যে কাজে দেবে তা বলাই বাহুল্য।

বিএনপি নামক দলটি গঠনের পর থেকে খুব বেশী যে রাজপথে থেকেছে তা নয়। তাদের দলের নেতা-কর্মীরা সব সময়েই ক্ষমতা ও ক্ষমতার আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়েছে। তাই আন্দোলনের কৌশল তাদের খুব বেশি জানার কথা নয়। তাছাড়া দলটি গঠিত হয়েছিল সেনা শাসকের মদদে এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজেই ছিলেন উর্দিপরা সামরিক শাসক। দলের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এই দলটি আদর্শ বিচ্যুত বাম ও ডান এবং সুবিধাবাদীদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে আসছে। এর বাইরে অনেকেই আছে যারা কোন দলেই সুবিধা করতে না পেরে ক্ষমতার কাছাকাছি আসার জন্য বিএনপি নামক দলেই আশ্রয় নিয়েছিল। এছাড়াও বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের আশ্রয়স্থল হয়েছিল এই দলটি। সুতরাং এই দলের কাছ থেকে আন্দোলন নামক জিনিসটি কখনোই আশা করা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি তাদের জামাত সম্পৃক্ততা এবং সীমাহীন লুটপাটের কারনে হয়েছিল বলে অনেকেই মনে করেন। এটা ঠিক সব সরকারের আমলেই কিছু না কিছু দুর্নীতি হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত বিএনপি সরকারের দুর্নীতির নজির এক কথায় অবর্ণনীয়। এই দুর্নিতির কারনে টিআইবি বাংলাদেশকে পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেছে। এখন অবশ্য টিআইবির সেই দুর্নীতির রিপোর্টে বাংলাদেশ এক নম্বর দেশ নয়। এটা আমাদের অর্জন বলে ধরে নেয়া যায়। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত দেশ বলা যাবেনা। এখনো প্রশাসনের সব পর্যায়েই দুর্নীতির নযির রয়েছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া। যদিও এ অভিযোগ প্রমাণিত নয়। বিশ্বব্যাংকের বর্তমান অবস্থান আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনীতির এক ভয়াবহ পরিণতি। জানিনা এর মাসুম বাংলাদেশকে কিভাবে দিতে হয়?

বিএনপির জামায়াত সম্পৃক্ততা তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের সাথে যায় না। যদিও জিয়া নিজেই এই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করা শুরু করেছিলেন। জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা পুনর্বাসিত হয়। এরপর এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়া তাঁর ষোলকলা পূর্ণ করেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব পায় এই যুদ্ধাপরাধীরা। বিএনপির বর্তমান অবস্থার জন্য এককভাবে দায়ি তাদের জামায়াত সম্পৃক্ততা। তারা সর্বক্ষেত্রে জামায়াতকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে তাতে করে অনেকেই ভুল করেন আসলে এই দলটি চালাচ্ছে কারা এবং কিইবা তাদের উদ্দেশ্য। তাদের বর্তমান নীতি দলকে যে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে তা বলার জন্য খুব বেশী বিশেষজ্ঞ হতে হয়না।

এম ইলিয়াস আলীর গুমের পর দলটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছিল কিন্তু জামায়াত তোষণ নীতি বিশেষ করে ইলিয়াস আলী ইস্যুর সাথে সরকার পতনের আন্দোলনকে জুড়ে দেবার কারণে দলটি অনেক বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জনগণের নৈতিক সমর্থন যেখানে ইলিয়াস আলী ইস্যুতে ছিল সেখানে সরকার পতনের আন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার মিশন তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে পতনের দিকে নিয়ে গেছে। এর বাইরে যখন সরকার দেখলো ইলিয়াস আলীর ইস্যু সরকার পতন ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার মিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন কঠোর প্রতিরোধে নামে সরকার। ফলে রাজনৈতিক মামলার সম্মুখীন হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সহ অন্যান্যরা। একটা মাত্র গাড়ি পোড়ানোর মামলা খেয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব যেভাবে বোরকা পরে কোর্টে হাজিরা দিতে আসেন তখন আর যাই হোক নেতাকর্মীরা ভরসা পায়না। তাই হয়েছে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে গেছে এই নেতৃত্বের উপর। এদিকে গাড়ি পোড়ানোর এই মামলাকে ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছে সরকার। তারা এই মামলাকে তুরুপের তাস ধরে নিয়ে বিএনপির আন্দোলনকে প্রবলভাবে ধাক্কা দিয়েছে। যে ধাক্কার কবলে পড়ে বর্তমানে সব কিছু বাদ দিয়ে নেতারা নিজেরা বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠছেন।

বর্তমান বর্তমান রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জনমত গঠন হয়ত দলকে শক্তিশালী করব। নেতাকর্মীরা জেগে উঠবে কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে তাদের ভাবমূর্তি কতটা পুনরুত্থান করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ বর্তমান দলের নেতারা মনে করেন জামায়াতের হাতেই তাদের ক্ষমতার চাবিকাঠি। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষই এই জামায়াত নামক দলটিকে কোন রাজনৈতিক দল মনে না করে মনে করেন একটা দেশবিরোধী সাংগঠনিক শক্তি। বিএনপি যদি যে কোন ভাবে এই জামায়াতের কবল থেকে বের হয়ে আসতে পারে তবেই এই জনমত গঠনের কর্মসূচি কাজে দেবে। অন্যথায় আওয়ামী লীগ সরকারের যাবতীয় ব্যর্থতা ও দুর্নীতির অভিযোগের পরও দেশের মানুষ আর কোন পথ না পেয়ে অন্তত যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে আবারো বিএনপিকে ফিরিয়ে দেবে।