সন্ত্রাসী ও বিএনপি নেতা হিসেবে বিবেচনার বাইরেও ইলিয়াস আলী একজন স্বামী ও বাবা

(আসাদ জামান)
Published : 1 May 2012, 05:01 PM
Updated : 1 May 2012, 05:01 PM

মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার পর পরই বিএনপির ইলিয়াস আলী উদ্ধার আন্দোলন থমকে গেছে। মামলার পর মির্জা ফখরুল পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কে জানে তিনিও গুম হয়েছেন কিনা? এর আগেও মির্জা ফখরুল মামলা খেয়েছেন কিন্তু এবারের মত তাকে আর কখনোই এভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে দেখা যায় নি। এই বিষয়ে মিডিয়াসহ সব মাধ্যম আশ্চর্যজনক নির্বিকার। তিনিও যদি গুম হয়ে থাকেন তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবেনা।

ইলিয়াস আলী গুম হওয়া নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে। রাজনীতির এই পর্যায়ে এসে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব কি না তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে কিভাবে আন্দোলন চালিয়ে যায় তার উপর। এর ফলে প্রকৃত ঘটনা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যেতে বসেছে। অবস্থা দাঁড়িয়েছে সরকার ও বিরোধীদলের আন্দোলন। এই আন্দোলনে কে জেতে আর কে হারে সেই ব্যাপারটিই মূখ্য হয়ে গেছে। ফলে আন্দোলন তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে। এর জন্য মূল দায়ি বিএনপির ক্ষমতালিপ্সু মনোভাব। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই আন্দোলনকে সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ না দিলে সাধারণ জনগণ ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ অথবা গুম রহস্যকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখত।

ইলিয়াস আলী ইস্যুতে এই পর্যন্ত পাঁচদিন হরতাল হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ছয়জন মানুষ। ঘুমের ঘোরে একজন নিরীহ বাস ড্রাইভার ছিলেন তার মধ্যেও। অনেক গাড়ি ভাংচুর হয়েছে, পুড়েছে অনেক যানবাহন, জানমালের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থা থেকে আরো নাজুক অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়েছে। তবু ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রথম দিকে জীবিত অবস্থায় পাওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল তা ক্রমে কমে এসেছে। খুন হয়ে গেলে এখন তার লাশ পাবার সম্ভাবনাও প্রায় শেষ। এর মূল কারণ বিএনপির ইলিয়াস আলী ইস্যুকে পুরোপুরি রাজনীতিকরণ করে সরকার পতনের হুমকি-ধমকি।

ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদি গাজীপুরে র‍্যাবের অভিযানে অংশ নিলে বেগম খালেদা জিয়ার পর সাথে দেখা করার পর তার বোল পাল্টে ফেলেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন বেগম জিয়ার আশ্বাসে তিনি তার স্বামীকে ফেরত পাবেন। কারণ পুরো বিরোধীদল ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছিল। স্বজনকে ফিরে পাবার জন্য তিনি বেগম জিয়ার মিথ্যা আশ্বাসে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন বলে সরকারের বিরোধী মনোভাবে চলে গিয়েছিলেন। স্বজনকে ফিরে পাবার এই আকুতি খড়কুটোকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকার চেষ্টা ছিল। কিন্তু যখন তিনি দেখলেন বিএনপির আন্দোলন ও হরতাল ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের নামে হলেও আসল উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার- সরকারের পতন। তখন হতাশ হয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইলিয়াস আলির স্ত্রীর ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেখা করছেন ইলিয়াসের পরিবারের সাথে।

ইলিয়াস আলিকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে দেশের সবাই মোটামুটিভাবে নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে এই সম্ভাবনা মোটে পাঁচভাগ। বাকি যে পঁচানব্বই ভাগ সম্ভাবনা না পাওয়ার তার উপর রয়েছে তিনি যদি সরকারের কারো মাধ্যমে অপহৃত হয়ে থাকেন এতদিনে নিশ্চয়ই বেঁচে নেই। এখন দেখার বিষয় বেঁচে না থাকলে তার লাশ ফেরত দেয়া হয় কি-না! তবে আমরা চাই তার লাশ ফেরত দেয়া নয় তাকে জীবিত ফেরত দেয়া হোক অথবা নিজে আত্মগোপন করে থাকলে বেরিয়ে আসুক।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সিলেট বিভাগের বিএনপির আরেকজন শক্তিশালী নেতা হারিস চৌধুরী। যিনি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা। ১/১১ এর পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তিনি সত্যিকারভাবে আত্মগোপন না গুম করে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে কোন নিউজ কোথাও আসছে না কেন? বিএনপির এ সম্পর্কে কোন ভুমিকা নেই কেনো। তিনি বেঁচে থাকলে তাকে বেরিয়ে এসে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। মামলার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনিও নিখোঁজ। ১/১১ এর সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। দেশে নির্বাচিত সরকার রয়েছে। আর যাই হোক বর্তমান সরকার সেনা সমর্থিত সরকারের মত এর কঠোর এবং একপেশে নয়। কারণ সেনাসমর্থিত সে সরকারের মূল লক্ষ্যই ছিল বিরাজনীতিকরণ। এখন দেশে রাজনৈতিক হাওয়া। হারিস চৌধুরী নিজে যেহেতু রাজনীতিবিদ সুতরাং সৎ সাহস থাকলে তাকে বের হয়ে আসা উচিত। আর যদি গুমের পর খুনের শিকার হয়ে থাকেন তাহলে অন্য কথা!

ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের নামে বিএনপি যে আন্দোলন করেছে তার টুঁটি চেপে ধরেছে সরকার। সরকারের হার্ডলাইনের বিপরিতে বিএনপির পলায়নপর মনোবৃত্তি এবং সরকার বিরোধী আন্দোলন ইলিয়াস আলী ইস্যুকে সরকারের গুরুত্বারোপকে থমকে দিয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন সরকার ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ১২০০ অভিযান চালিয়েছে। এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতালের নামে ভাঙচুর ও বোমাবাজি মূল উদ্দেশ্যকে বিপন্ন করেছে। ফলে সরকারের দমননীতি নেমে এসেছে বিএনপির উপর। মির্জা ফখরুলের নামে মামলা হবার পরেই তার আত্মগোপনে চলে যাওয়া ও সাবেক ছাত্রদল সভাপতি রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতারের পর জেলহাজতে প্রেরণ অতঃপর চুপসে যাওয়া তাদের স্বাভাবিক পলায়নপর মনোবৃত্তিকে প্রকাশ করে। হরতাল দিয়ে ঘরে বসে থাকা, লোক লেলিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা, ভাঙচুর এবং একটা দুইটা মামলা খাওয়ার পর তাদের বর্তমান অবস্থা ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে হতাশ করেছে।

ইলিয়াস আলীর স্ত্রী স্বামীকে হারিয়ে এখন প্রায় পাগলপারা। নিখোঁজ হবার কয়েকদিনের পরের তার হাবভাব আর এখনকার অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রথমে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদাকে বিশ্বাস করে ঠকেছেন। কথা বলেছিলেন বিএনপির শেখানো বুলি রূপে। এখন সব হারিয়ে তিনি স্বামীকে ফেরত পাবার আর্তি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। টিভি চ্যানেলে তার করুণ মুখশ্রী দেখে খুব খারাপ লেগেছে। একজন অসহায় স্ত্রী স্বামীকে ফেরত চাইছেন তার সন্তানদের নিয়ে এরচেয়ে করুণ দৃশ্য আর হতে পারেনা। ইলিয়াস আলিকে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী রাজনৈতিক নেতা হতে পারেন কিন্তু তিনি একজন নারীর স্বামী, একটা ছেলে ও একটা মেয়ের বাবা। তার সন্ত্রাসী পরিচয়ের বাইরে স্বামী আর বাবার যে পরিচয় সে পরিচয়কে গুরুত্ব দিয়ে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে উদ্ধার অভিযান আরো জোরদার করতে হবে। বাদ দিতে হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ন্যাক্কারজনক রাজনৈতিক কৌশল।

সন্ত্রাসী এবং বিএনপি নেতা বিবেচনায় ইলিয়াস আলীকে নয় একজন স্বামী এবং একজন বাবা ইলিয়াস আলিকে ফেরত চায় দেশের সব মানুষ।