কথিত অনলাইন পত্রিকা দিয়ে দিচ্ছে নেতাদের আগাম ‘মনোনয়ন’

আতাউর রহমান
Published : 6 August 2017, 09:56 PM
Updated : 6 August 2017, 09:56 PM

জাতীয় নির্বাচনের বাকি স্বাভাবিকভাবেই আরো দেড় বছর। অথচ অখ্যাত ও কথিত অনলাইন পত্রিকাগুলো কোনো কোনো নেতাকে মনোনয়ন 'দিয়ে দিচ্ছেন' এখনই। অমুক নেতা মনোনয়ন পেয়ে গেছেন, অমুক নেতা মনোনয়ন পেয়ে যাচ্ছেন-এমন খবরে সয়লাব অখ্যাত অনলাইন। কথিত এসব অনলাইন প্রতিষ্ঠানের খোঁজ কেউ না জানলেও ফেসবুকে শেয়ারের কল্যাণে আগাম মনোনয়নের সেই খবর ফেসবুক হয়ে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে অফ লাইনের মানুষের কাছেও।

ফেসবুকের ওয়ালে এখন এ নতুন বিরক্তি শুরু হয়েছে। নানা সব অনলাইনের লিঙ্কে ভরে যাচ্ছে ফেসবুকের ওয়াল। অভিনন্দন জোয়ারে ভাসছেন নেতারা। অনলাইনে মনোনয়ন পাওয়া নিউজের শিরোনামগুলো লক্ষ্য করুন-
'মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে ওমুক নেতা'
'এবার বাদ যাচ্ছেন যেসব হেভিওয়েট নেতা'
'ওমুক নেতা পেলেন গ্রীন সিগন্যাল'
' কেন্দ্রের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন অমুক নেতা'
'সব গোয়েন্দা রিপোর্টে এগিয়ে অমুক নেতা'
‌'এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না ওমুক নেতা ইত্যাদি।'
এসব নিউজের কোনো কোনোটিতে বলা হচ্ছে- 'নেত্রী ডেকে নিয়ে অমুক নেতাকে এলাকায় গিয়ে কাজ করতে বলেছেন/ মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন-এমন সব তথ্য। বিখ্যাত সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন! তবে দায়িত্বশীল নেতাদের বা যারা মনোনয়ন বোর্ডের কোনো নেতার বক্তব্য পাওয়া যায় না এসব নিউজে। এসব অনলাইনের অনুসন্ধানের কাছে যেন মূলধারার গণমাধ্যমগুলো বা পত্রিকাগুলো হার মানছে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা বা তাদের অনুসারীরা এসব নিউজের লিংক ফেসবুকে ভাইরাল করে দিচ্ছেন। আমি বলছি না-অখ্যাত অনলাইনে যাদের মনোনয়ন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তারা যোগ্য নন, বা তারা তা পেতে পারেন না।
পাঠক হিসেবে একটা প্রশ্ন বারবার মনে উঁকি দেয়-আচ্ছা কথিত অনলাইনগুলো যেখানে নেতাদের মনোনয়ন পাওয়ার আগাম খবর প্রকাশ করছে, সে ক্ষেত্রে মূলধারার পত্রিকা বা অনলাইনগুলো সেই খবর প্রকাশ করছে না কেনো? একজন নেতার কর্মী-অনুসারী মিলিয়ে পাঠক তো কম নয়। নাকি দেশের প্রথম সারির পত্রিকাগুলো নেতাদের মনোনয়ন পাওয়ার ব্রেকিং তথ্যটা পাচ্ছে না। রাজনৈতিক বিটে দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিকরা কি ব্যর্থ হচ্ছেন এমন খবর সংগ্রহে?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিটের মূলধারার অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি-তারা ব্যর্থ নন। কথিত অনলাইনগুলো নেতাদের মনোনয়ন দিয়ে দিলেও দলগুলোর মনোনয়ন বোর্ড তা জানেন না! কারণ এখন পর্যন্ত সে প্রক্রিয়াটাই শুরু হয়নি।

খোঁজ নিয়ে দেখেছি- কথিত অনলাইনগুলোর সাংবাদিক নামধারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির হাইকমাণ্ড দূরের কথা, এরা আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ধানমন্ডি কার্যালয় এবং বিএনপির গুলশান বা নয়াপল্টনের কার্যালয়ের অফিস সহকারীর সঙ্গেও নূন্যতম পরিচয় নেই। লক্ষ্য করে দেখবেন এসব গণমাধ্যম অফিসের ঠিকানা পর্যন্তও নেই। তারা শুধু নেতার ছবি নেন, সঙ্গে টাকা নেন-এরপর তেল মারেন। নেতার নির্দেশিত লেখা লিখে দেন। সুতরাং মনোনয়ন প্রত্যাশী হে মহান নেতাগন, একটু ভাবুন।