কারো পৌষমাস কারো সর্বনাশ

আতাস্বপন
Published : 6 Feb 2015, 08:48 PM
Updated : 6 Feb 2015, 08:48 PM
১.
গোপাল ভাঁড়ের একটা গল্প পড়েছিলাম সেই ছোট বেলায়। একবার একটি আলুর গুদামে আগুন লেগে সব আলু পুরে গেল। ছোট্ট ছেলে গোপাল সেখানে ছিল। সে সেখান থেকে পোড়া আলু নিয়ে খাচ্ছিল। একসময় সে শোকার্ত সেই আলুর গুদামের মালিককে প্রশ্ন করলো আবার কবে আগুন লাগবে। আলুর মালিকের সর্বনাশে গোপালের পৌষমাস।২.
একবার এক ভদ্রলোকের রাস্তায় মানিব্যাগ হারিয়ে গেল। আর এক টোকাই তা খুজে পেল। তা ছিল সব একহাজার নোটে ঠাসা। যার টাকা হারলো সে বেচারারতো সর্বনাশ। আর যে টোকাই পেল তার তো পৌষ মাস।

এবার দুটি বাস্তব গল্প ও প্রশ্ন

১.
বাসে আগুন লেগেছে। পেট্রোল বোমায় ঝলসে গেছে মানুষ। বার্ন ইউনিটে কাতরাতে কাতরাতে মরছে। ডাক্তার রা ফুসরত পারছেন না। হাসপাতালগুলো রুগিতে পরিপূর্ন। মিডিয়ার লোকজন গিজ গিজ করছে। সুশিলসমাজ, রাজনৈতিক নেতারা একের পর এক আসছেন সহানুভতি জানাতে। বলতে পারেন এর মধ্যে কার পৌষমাস আর কার সর্বনাশ?

২. পেট্রোল বোমা সহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এ খবর দেশ বাসীর কাছে মিডিয়ার কর্মিরা ফলাও করে প্রচার করছে। সেই সাথে প্রচার করা হচ্ছে রাজনৈতিক দুই ধারার নেতাদের বক্তব্য……..সবাই তার বিপরিত দলকে দুষছে আর যাদেরকে ধরা হয়েছে তাদের দুস্কিতি কারী বলছে। কেউ তাদের নিজেদের কর্মি বলে দাবি করছেনা। এপক্ষ বলছে ওরা ঐ পক্ষের। চলছে রাজনৈতিক খেলা। এবার বলুনতো এখানে পৌষ মাস কার আর সর্বনাশ কার?

এবার বলছি জনপ্রিয় উপন্যাসিক প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের হিমু চরিত্রের একটি সিকুয়্যান্স-

বাস আগুনে জ্বলছে। হিমুর ইচ্ছে করছে সে আগুন দিয়ে হাতের সিগেরেটা ধরাতে।

আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় আগুনে মানুষ পুরছে । নিরিহ প্রান যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের কারো গায়ে এর কোন উত্তাপ লাগছে না। তারা নিরাপদ দুরুত্বে থেকে মানে কেউ দলিয় কার্যলয়কে ঘর বানিয়ে বা জেলে গিয়ে আবার কেউ সরকারী নিরাপত্তা দ্বারা বেষ্টিত থেকে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারপ করে ফয়দা হাসিল করে যাচ্ছে। জনগনের সামনে কে কাকে কতটা ছোট করে নিজেকে বড় বলে, নিজেকে সাধু বলে জাহির করা যায় তার প্রতিযোগীতা করে চলছে। দগ্ধ লাশগুলো তাদের কাছে রাজনৈতিক খেলার গুটি। অনেকটা গোপালের আলু পোড়ার মত। যত লাশ পড়বে তত দু পক্ষ একে অপরকে ঘায়েল করতে সুবিধে হবে। মাঝখান থেকে সর্বনাশ হল ঐ মানিব্যাগ হারানো সেই লোক বা আলুর গুদামের মালিকের মত যে লোকটা লাশ হল তার পরিবারের। রাজনিতির খেলায় এগুলোই যেন নিয়ামক শক্তি। জনগনের ভোটে তারা ক্ষমতায় যাবে। জনগনকেই পুরিয়ে মারবে।

পৌষ মাস এ লেপ থাকলে প্রচন্ড শীতও গায়ে লাগেনা । বরং আরাম প্রদ মনে হয়। কিন্তু যদি লেপ না থাকে তবে পৌষ মাস হয়ে যায় ভয়ংকর। আমাদের নেতারা জনগনকে লেপ বানিয়ে পৌষ এর সুখ উপভোগ করছে। কিন্তু লেপের যত্ন না নিলে তাতো একদিন ছিরে যাবে সেটা ভুলে থাকে। জনগনকে এভাবে নির্যাতন নিপিরন গুম হত্যা আর পোড়ানো হলে তারা চিরকাল কিন্তু পৌষ এর লেপ হয়ে থাকবে না। হতে পারে ছেরা লেপের মতো সর্বনাশের কারন।

শাহরুখ খানের একটি ছবি অনেক আগে দেখেছিলাম নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না সম্ভবত দিল হে হিন্দুস্তানী হবে। সেই সিনেমায় দেখা যায় এক নিরিহ লোক কে। তার মেয়েকে রেপ করা হয়। সে রেপিষ্ট একজন বড় নেতা। লোকটি তার মেয়ের অসম্মানের বদলা নেয় রেপিস্টকে খুন করে। তাকে যখন গ্রেপতার করা হলো তখন সরকারী দল থেকে পুলিশ প্রধান কে বলছে ও বিরোধী দলের লোক, এটা বলার জন্য। আবার বিরোধী দল থেকে বলা হচ্ছে ও সরকারী দলের বলার জন্য। তা নয়তো তারা ক্ষমতায় গেলে পরে সমস্যা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। পুলিশ প্রধান দেখলেন মহা সমস্যা, শ্যাম রাখি না কুল রাখি। তিনি মিডিয়ার কাছে বলললেন এটা বিদেশী ষরযন্ত্র। আর লোকটা কোন দলের না। এ হল একজন আতংকবাদী।

কি বুঝলেন? রাজনিতী জিনিস টাই এমন । এখানে সত্য কি মিথ্যা কি বুঝা এতো সহজ না। কে যে কাকে কখন কিভাবে গুটি বানিয়ে ময়দান দখলের চেষ্টা করে বলা সত্যই দুরহ। আমরা জনগন ভাবি মিডিয়ায় যা আসে তা বোধ হয় পুরোটাই সত্য। আসলে কি তাই। মিডিয়ার সিমাবদ্ধতা আছে। আছে আবার চাটুকারিতাও। সবমিলিয়ে সত্য জনগন জানতে পারে না। জনগনের কাছে যা উপস্থাপন করা হয় তা যে কত ঘষামাজা করে করা হয়েছে তা অজনা থেকে যায়।
এক্ষেত্রে কিছু মিডিয়া এ পক্ষের আনুগত্য করে আবার কেউ ও পক্ষের আনুগত্য করে ফয়দা নিতে চায়। এদের সবারই পৌষ মাস। কেবল জনগনের সর্বনাশ।
দু পক্ষের খবর এর মধ্যে রয়েছে হাজারো গড়মিল। এই গড়মিলের বাইরে যে খবর সেটাই আসল। এই আসল খবরটাই জনগন পায়না। জনগন শুধু পায় আই ওয়াশ। আর মহা সর্বনাশ। জনগনের আর্তনাদ তাদের কাছে———————-গাড়ির আগুনে সিগেরেট জ্বালানো হালকা রসিকতার মতো।