ট্রাফিক চেকিং এ ভোগান্তি: বাসের মত দেশের স্টিয়ারিংও আজ লক

আতাস্বপন
Published : 7 March 2017, 03:10 AM
Updated : 7 March 2017, 03:10 AM

গাড়ির স্টিয়ারিং যেমন আছে তেমন দেশেরও আছে। দেশের স্টিয়ারিং কি? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই দেশের স্টিয়ারিং। আজ সে স্টিয়ারিং লক করে দিচ্ছে স্বেচ্ছাচারী সিস্টেম। প্রতিকার কোথায়? গত ০৪/০৩/২০১৭ইং শনিবার আমি আমার বড় ভাই সহ টঙ্গী গাজীপুরা বাস স্ট্যান্ড থেকে টিটিপাড়া যাবার জন্য অনাবিল সিটিং সার্ভিসের একটি বাসে উঠি। বাসটি এয়ার পোর্ট এলাকা ক্রস করে যাবার সময় ট্রাফিক বক্সের পুলিশ বাসটি থামায়। প্রায় আধা ঘন্টা আমি বাসে ছিলাম তখনও বাসটি তারা ছাড়েনি। বাসের স্টিয়ারিং বড় কি একটা দিয়ে তালার মত লক করে দেয়া হয়েছে। ড্রাইভার হেলপার কন্টাক্টর দৌড়ে আছে কাগজ পত্র নিয়ে।

(পুলিশ বাস থামাচ্ছে)

যাত্রীদের কথা ভাবার টাইম কারা নেই। আমাদের অনেকেই ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। তাই যেতেও পাড়ছে না। এদিকে পুলিশ বাসটি ছাড়ছে না। কি এক হ্যজি সিচুয়েশন। বসে আছিতো আছি। আমার দুই ভাই গ্রামের বাড়ি যাব। বাস ধরতে হবে। সময়ের বারটা আর যাত্রার বারটা একসাথেই বেজে গেছে। তারাতারি পৌঁছে স্টার লাইন কাউন্টার থেকে পশুরামের টিকিট কাটতে হবে। কত দূরের পথ! যত দেরি হচ্ছে ততই দীর্ঘ জার্নির মেয়াদ বাড়ছে। বেশী রাতে পৌঁছালে গ্রামের বাড়িতে কত ধরনের বিপদ আপদ হতে পারে- দুই ভাই এই শঙ্কা নিয়ে বসে আছি।

অনেকক্ষণ বসে থাকার পর দেখি না কোন রেসপন্স নাই না পুলিশ, না ড্রাইভার কি হেলপার! নিচে নেমে পুলিশ বক্সের দিকে গেলাম। জানলাম বাসের নামে মামলা হবে, মামলার প্রস্তুতি চলছে। বললাম গাড়িটা ছেড়ে দিতে। না গাড়ি লক করা, যতক্ষণ না প্রসেসিং শেষ হচ্ছে ততক্ষণ গাড়ি ছাড়া যাবে না। হেলাপারের কাছে ভাড়া চাইলে বলে আমাগো কি দোষ, বহেন গাড়ি যাইবো। মগের মুল্লুক নাকি- অনেকেই ঝগড়া শুরু করল, বিরাট বদারেশন। একজন নিরীহ যাত্রী বলল- ভাই গেনজামে গেলেই সমস্যা। এইটা হইল বাংলাদেশ এইখানকার সিস্টেম যা সেই নিয়মেই চলতে হইব। এখানকার সিস্টেম হইল আমার বলদ আমগোরে যেমন ঘুরাইব ঘুরতে হইব।

না এই নাটকের শেষ দেখার অপেক্ষা আর করলাম না, দুই ভাই আরেকটি বাসের উঠার জন্য চললাম।

এই ঘটনা কিন্তু নতুন কিছু না, পুরনো, হরহামেশা হচ্ছে বিভিন্ন পয়েন্টে। কথা হলো ব্যবস্থাটি এমন কেন, জনগণকে ভুগতে হবে? গাড়ীর ফিটনেস বা অন্যকোন সমস্যা থাকলে সেটার জন্য কি যাত্রীরা দায়ী? তাদের কেন ভোগান্তি? বাসের কাগজপত্র নিয়ে বাসটি ছেড়ে দিবে, এরপর মামলা যা আছে হবে। জনগণকে কেন জিম্মি করা? তাদের সময়ের কি কোন দাম নেই? কেন তারা স্টিয়ারিং লক করবে? লক যদি করবে জনগণের অন্য ব্যবস্থা করে দেয়া হলো না কেন? যে যেভাবে পারে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে, আর এই স্বেচ্ছাচারিতাই এখন সিস্টেম। একজন যাত্রীকে প্রশ্ন করেছিলাম ভাইরে আমাদের কি দোষ? আমাদের উপর কেন যত অত্যাচার। সেই যাত্রী স্বাভাবিক ভাবে বলল এই দেশে জন্মানোটাই দোষ হইছে। এই দেশে জন্মাইলেন কেন?

একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার এই মাসে এমন করে আজ ভাবতে হচ্ছে, এই লজ্জা রাখি কই? হে বীর শহীদান আমাদের ক্ষমা করো। এই দেশের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা আজ ব্যর্থ।