ভাস্কর্য-মূর্তি নিয়ে নাটকবাজি

আতাস্বপন
Published : 28 May 2017, 08:33 PM
Updated : 28 May 2017, 08:33 PM

এদেশ আমার-তোমার সবার। কি মুসলমান কি হিন্দু কি বৌদ্ধ কি খ্রীষ্টান কি আদিগোষ্ঠি! এদেশ নিয়ে ভাবার অধিকার তাই সবার। স্বপ্ন দেখার অধিকার তাই সবার। কিন্তু স্বপ্নগুলো দেখতে হবে একই প্লাটফর্ম থেকে। যাতে সবাই মিলে উপভোগ করতে পারা যায়। স্বপ্ন যখন হয়ে যায় একপেসে জোরজবরদস্তি চাপিয়ে দেয়া তখনই হয় বিপত্তি।

এদেশে হেফাজত কোন সমস্যা নয়। সমস্যা হলো রাজনৈতিক কালচার। রাজনীতি কাউকে হিরো করে কাউকে করে জিরো। সাধারনত সরকারের ছায়ায় যারা থাকে তারা নিজেদের অসাধ্য সাধন করে ফেলবো এমন এক হিরো ভাব শুরু করে। যেই না সরকারের আঁতে ঘা পড়ল, ছায়া গেল সড়ে তখনই সেই হিরোগিরি জিরো হয়ে গেল। বাম আর ইসলামী দলগুলোকে সরকার কখনো হিরো আর জিরো বানিয়ে খেলছে নাতো?

ইসলামে মূর্তি পূজা শিরক। এটা কি শুধু হেফাজতের কথা? না এটা মুসলিম মাত্র কথা। কিন্তু পূজার জন্য মূর্তি থাকবে মন্দিরে । কেন থাকবে উম্মুক্ত সেনসেটিভ জায়গায়। হ্যা এ দেশ হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান সবার। তাই সবার ধর্মর্কে সম্মান জানাতে ধর্মীয় কাজগুলো সুরসুরি পর্যায়ে নেওয়া উচিত নয়। এদেশে অনেক ভাস্কর্য আছে। সবগুলো কি ভেঙ্গে ফেলা নিয়ে তুলকালাম হয়েছে? লালন ভাস্কর্য আর এই মূর্তিটি নিয়েই হয়েছে। ভাস্কর্য বা মূর্তি ইসলাম কোনটাই সমর্থন করে না। সেটার পুজা করা হোক বা না করা । যদিও অনেকগুলো মুসলিম দেশ খোদ সৌদিআরবেও ভাষ্কর্য বা মূর্তি আছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে কোন শাষক ইসলামিক কোন নিয়মের বত্যয় ঘটালে তার দায় তার। এ জন্য আখেরাতে শাস্তি সে পাবে। জনগণ নয়।

আর মুসলিম দেশে মূর্তি বা ভাস্কর্য থাকলে তা যায়েজ হয়ে যাবে। তাই এদেশেও ভাস্কর্য স্থাপন করলে ইসলামের কিছু হবে না। এটা ভাবা বোকামি। ইসলাম কোন দেশ বা রাষ্ট্রে ধারনায় নয়, চলে কোরআন আর সুন্নার আলোকে। তাই কেউ ইসলাম মেনে মূর্তি বিরোধীতা করলে তা স্বাভাবিক কর্মকান্ডই বলা চলে। এদেশের সকল আলেম ওলামা হেফাজত নয়। সরকারীও আছে। তারাও এর বিরোধী। কাজেই এটাকে একক হেফজত এর দাবি বলা কি ঠিক? মুর্তি বলি বা ভাস্কর্য এটি হুটহাট করে কার ইশারায় বসল? শুধুকি প্রধান বিচার বিভাগের একক সিদ্ধান্তে? প্রধানমন্ত্রী কিছুই জানেন না। এতেতো মনে হচ্ছে বিচার বিভাগ একাই এটি করেছে। আসলেই কি তাই?

আমার দেশের সরকার নিজ দায়িত্বে যে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করছেন বা করবেন তার দায় তার। সে শিল্পসংস্কৃতি বান্ধব সরকার হবে কিন্তু ইসলামিক হবে না। সমস্যা হলো আমাদের সরকার দুটোই থাকতে চাইছে। সবার কাছে ভাল থাকতে চাইছে। সবার কাছে ভাল হওয়া না গেলেও গ্রহনযোগ্য হওয়া যায়। সরকার গ্রহযোগ্যতার দিকে না গিয়ে ভাল হতে চাইছে। যা অসম্ভব একটি ব্যাপার।

লালন ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল বিমানবন্দর এলাকায়। তার পাশেই হাজী ক্যাম্প। একটি মসজিদ। এদেশের মানুষ মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে কি নেই তা নিয়ে মাথায় ঘামায কম। ইসলামে কি আছে সেটাই দেখে বেশী। আর তাই লালন ভাস্খর্যটির নিয়েও তখন অনেক হুলস্থুল হল। অবশেষে অপসারণ। যারা মাদ্রাসায় পড়ে তারাই এর বিরুদ্ধে মূলত সোচ্চার হয়ে ছিল। কোন বিশেষ দল নয। মাদ্রসার শিক্ষাটাই হল ইসলামী কৃষ্টি কালচার লালন করা । কাজেই তারাতো তাই করবে। একজন ডাক্তার তার ডাক্তারি বিষয় নিয়ে বলবে। একজন প্রকৌশলী বলবে স্থাপত্য নিয়ে। হুজররা বলবে ধর্ম নিয়ে। এটাই স্বাভাবিক।

আবার প্রগতিশীল বলে যারা দাবি করেন তারা এদেশটাকে এক লহমায় যেন অসম্প্রাদায়িক দেশ বানিয়ে ফেলবেন। বিশ্বে অস্প্রাদায়িক দেশ কয়টি আছে? সে হিসাব কম হলেও ভ্রুক্ষেপ নেই। আমার দেশই হবে আমার চেতনার মত কোথায় কি আছে জানার দরকার নাই। এমন একটা ভাব দেখান। এখানে ঐ হুজরদের সাথে তাদের গোড়ামিগত মিল ঠিকই আছে। বিশ্বে কোথায় কি আছে দেখার দরকার নাই। সবাই চায় তার শিক্ষাই যে সে সমাজে বা রাষ্ট্রে প্রতিষ্টা করতে সে হুজুর হোক কিংবা প্রগতীবাদি। কথা হলো নানা মত নানা ধ্যান ধারনা থাকবে। এসবকে অস্বিকার করে কি লাভ? এগুলোকে নিয়ে সমন্বয় সাধান করে চলতে হবে। একপেষে হয়ে একগুয়েমি করে ধংসই আসে শান্তি নয়।

আমার একটু কি ভাবতে পারিনা কেন মূর্তি বা ভাস্কর্য নিয়ে এই নাটক? কার স্বার্থ? তবে এটুকুতো বুঝা যাচ্ছে যে, এর উদ্দেশ্য কোন গোষ্ঠি চাইছে এই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হোক। তারা সুরসুরি দিয়ে কেচাল করতে চাইছে। যাকে বলে লেজে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করা। ময়মনসিংহে একটা নেকেড মুর্তি আছে। তা কি হেফাজত হুজুররা জানে না । জানে তো। তা নিয়ে কেন আন্দোলন হয় না? এর কারন এটা চোখে পড়ার মত কোন ধর্মীয় সেনসেটিভ জায়গার সামনে নেই। সহসা সুরসুরি খায় না তারা। আর যে মূর্তিগুলো নিয়ে সমস্যা সেগুলো স্থাপন করা হয়েছে এমন সেনসেটিভ জায়গায় যেখানে ধর্মীয় সুরসুরি দেয়া যায়। ফলে সুরসুরি খেয়ে ক্রিয়া আর প্রতিক্রিয়ার সূচনা।

হঠাৎ কি কারনে ঈদগাহর কাছে সেনসেটিভ জায়গায় এমন একটি মূর্তি স্থাপন করা হল? আবার বলা হচ্ছে এটা ন্যায় বিচারের প্রতিক। মানলাম এটা অনেকের কাছে ন্যায় বিচারের প্রতীক। কিন্তু একজন মুসলমানের কাছে ন্যয় বিচারে প্রতীক আল কুরআন ও সুন্নাহ। অন্য কিছু নয়। তবে কেন ৮৫ ভাগ মুসমানের উপর এ শিরক চাপিয়ে দেয়া। একটু সময় নিয়ে সর্বজন গ্রাহ্য এমন কিছু কি ন্যায়বিচারের প্রতিক করা যেত না। হুটহাট করে মূর্তিটি স্থাপন তারপর আবার গেনজাম লাগিয়ে হুটহাট অপসারণ।

কোন প্রানীর ভাস্কর্য ইসলাম সমর্থন না করলেও ভাস্কর্য ইসলাম সমর্থন করে। প্রানীর ভাস্কর্য নয় এমনইগুলো স্থাপন করার কথা একজন মুসলমান বলতে পারে। আবার একজন হিন্দু বৌদ্ধ বা খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী তাদের ধর্মের আলোকে মুর্তি সদৃশ ভাস্কর্যই প্রধান্যই দিবে। কিন্তু এদেশতো শুধু মুসলমানের বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের দেশ নয়। এ দেশ সকল জাতি গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের। তাই সকল কাজ সবার মতামতের আলোকে করা উচিত। গায়ের জোড়ে কাজ করলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়।

আমাদের দেশের সমস্য হলো আমাদের রাজনীতির মারপ্যাঁচ। আমাদের এই নানামুখী মানুষগুলোকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতার তাদের সুবিধার জন্য। একজনকে আরেক জনের সাথে লাগিয়ে ফয়দা হাসিল তাদের উদ্দেশ্য। সঠিক বিহিত তাদের জানা। তারা তা করবে না। কেচাল লাগালেই তারা খুশি। এই মূর্তি নিয়ে নাটক হলো এর কি রাজনৈতিক ফয়দা নাই? এর পেছেনে কি কোন গুটির চাল নাই? কে কখন কোন চালে মুরগী হয়ে জবাই হবে কে বলতে পারে? এত প্রশ্ন উত্তরও আমাদের জানা । কিন্তু আমরা সব জেনেও নিজেরা নিজেরা কেচাল করতে পছন্দ করি। আচ্ছা একলহমায়কি এদেশ ইসলামিক স্ট্রেট হয়ে যাবে? আবার একলহমায় কি এদেশ অস্প্রদায়িক হয়ে যাবে? নাতে। তবে কেন প্লাস মাইনাস খেলা। এ বলে তুই দালাল তুই ভাগ । সে বলে তুই অশুভশক্তি তুই ভাগ। ভাগ বললেই কি কাউকে ভাগিয়ে দেশ দখল করা যায়? এটা কেন কেউ বুঝেও বুঝতে চায়না? এর কারন এরাও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় তাদের কর্মকান্ড পরিচালিত করে। তাই সেই জোশে হুশ হারিয়ে চলে। কিন্তু রাজনীতির সূত্র বড়ই জটিল । আজ যারে নেয় কোলে স্বার্থ শেষে তারে দেয় ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ও সরকারী ছাত্র সংগঠনের হামলা তাকি প্রমান করে না? এ জাতি কবে বুঝবে। একতাই শক্তি। বিভাজনে শক্তি ক্ষয়। ধংসের পথ সুগম হয়।