আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কিছু চলচ্চিত্র

আতাস্বপন
Published : 4 Jan 2018, 08:22 PM
Updated : 4 Jan 2018, 08:22 PM

চলচ্চিত্র মাধ্যমটি সমাজের প্রতিবিম্ব হিসেবে কাজ করে। তাই এর পজেটিভ ও নেগেটিভ দিকগুলো সবার নিকট খুব সহজে প্রভাব ফেলে। তাই চলচ্চিত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে পজেটিভ দৃষ্টিভংগির দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে শুরু করে সারাবিশ্ব পরিক্রমা এমনকি মৃত্যু পরবর্তী জীবন এর উপজিব্য। চলচ্চিত্রে ফুটে উঠে দেশ সমাজ পরিবারের চিত্র। শিল্প সাহিত্য কৃষ্টি সংস্কৃতি। আমাদের বাংলাদেশে রাষ্ট্রটি নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে।তাই আমাদের চলচ্চিত্রের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ। আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র থেকে শীর্ষ ১০টির নাম(আমার দৃষ্টিতে) নিম্নে প্রকাশ করা হল-
১। আবার তোরা মানুষ হ- পরিচালকঃ খান আতাউর রহমান, ১৯৭৩। আমার প্রথম দেখা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছায়াছবি হল আবার তোরা মানুষ হ। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময়ের মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা এ ছায়াছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। খান আতা , ফারুক, আসাদ, ববিতা আরো অনেকে এত অভিনয় করে।

আবার তোরা মানুষ হ, পরিচালক খান আতাউর রহমান, মুক্তি কাল- ১৯৭৩।

২। কলমিলতা- পরিচালকঃ শহিদুল হক খান, মুক্তিঃ ১৯৮১। বাংলাদেশ সেনাবাহীনির মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এর গল্প। এতে অভিনয় করেন- সোহেল রানা, সুচরিতা ও মাষ্টার শাকিলসহ আরো অনেকে।

অরুনদ্বয়ের অগ্নিস্বাক্ষি- ১৯৮১

৩। অরুনদ্বয়ের অগ্নিস্বাক্ষি- পরিচালকঃ সুভাষ দত্ত, মুক্তিঃ ১৯৭২ । একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা যার নাম আনোয়ার হোসেন।মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের সাথে তার শিল্পি জীবন কিভাবে জড়িয়ে যায় এটা তার কাহিনি।একজন বীরঙ্গনার কাহীনি। একটি যুদ্ধ শিশুর জম্মানোর কাহিনি। এতে অভিনয় করেন- আনোয়ার হোসেন, ববিতা সহ আরো অনেকে।

অরুনদ্বয়ের অগ্নিস্বাক্ষি-১৯৭২

৪। ওরা ১১ জন- পরিচালকঃ চাষী নজরুল ইসলাম, মুক্তিঃ ১৯৭২। ১১ জন মুক্তি যুদ্ধার কাহিনি এটি। এতে ১১ জনের ভুমিকায় অভিনয় করেন- খসরু, মঞ্জু, হেলাল, আবু, আতা, মুরাদ, বেবি, নান্টু, ফিরোজ ও আলতাফ। নায়ক রাজ রাজ্জাক ও নতুন এতে অভিনয় করেন।এতে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডো অভিযানের বাস্তবিক চিত্র। এ ছবিটি দেখার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কে প্রথম আমি জানতে পারি।

ওরা ১১ জন (১৯৭২)

৫। মেঘের অনেক রং- পরিচালকঃ হারুন উর রশিদ, মুক্তিঃ ১৯৭৬। এক বীরঙ্গনা মায়ের আত্মহত্যা ও তার সন্তানের গল্প। এই ছবিটি দেখে ছেলেটার জন্য আমার খুব খারাপ লেগেছিল। ছবিটিতে ছেলাটা যখন ট্রেনের সামনে চলে আসে তখন বুকের ভেতরে ওর জন্য কেমন করে উঠেছিল। ছেলেটির চরিত্রে অভিনয় করেন- মাষ্টার আদনান।

মেঘের অনেক রং-১৯৭৬

৬। আলোর মিছিল- পরিচালকঃ মিতা, মুক্তিঃ ১৯৭৪।মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ধনী দরিদ্রের শ্রেনী বৈষম্য এতে ফুটে উঠেছে। এই পৃথিবীর পরে গানটি গাওয়ার সময় সাব্বাস ছোট গিন্নী ডায়লগটি আমার খুব প্রিয়। এতে অভিনয় করেন- রাজ্জাক, ফারুক,. আনোয়ার হোসেন, সুজতা, ববিতা , রোজী সামদ প্রমুখ।

আলোর মিছিল- ১৯৭৪

৭। রক্তাক্ত বাংলা- পরিচালকঃ মমতাজ আলী, মুক্তিঃ ১৯৭২। এটা একজন ভাস্কর্য নির্মতা পরিবারের ভাই বোনের কাহিনি। যারা মুক্তিযুদ্ধে নির্মমতার অসহায় শিকারে পরিনত হয়। এতে অভিনয় করেন- ভারতের বিখ্যাত অভিনেতা বিশ্বজিৎ (প্রশনজিৎ এর বাবা), কবরী, সুলতানা প্রমুখ।

রক্তাক্ত বাংলা-১৯৭২

৮। আগুনের পরশমনি- পরিচালকঃ হুমানয়ুন আহমদ, মুক্তিঃ ১৯৯৫। ঢাকা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানের একটি খন্ড চিত্র এতে তুলে ধরা হয়েছে। এতে নগর জীবনে মুক্তিযুদ্ধ কিভাবে প্রভাব ফেলেছিল তা একটি পরিবারের বাবা মা ও দুই মেয়ের জীবনপ্রবাহের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।এতে অভিনয় করেন- বিটিভির কোথাও কেউ নেই নাটকের বাকের ভাই খ্যাত আসাদুজ্জামান নুর, বিপাশা হায়াত, আবুল হায়াত, শীলা আহমদ প্রমুখ।

আগুনের পরশমনি (১৯৯৫)

৯। মুক্তির গান- পরিচালকঃ তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ, মুক্তিঃ ১৯৯৫। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি প্রামান্য চলচ্চিত্র। এতে বাংলাদেশের কিছু নামকরা সঙ্গীত শিল্পি যারা ৭১ এ সংগিত যোদ্ধা হিসেব নিজেদের সবটুকু দিয়ে ঘুরে ঘুরে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করেছেন তার প্রামন্য চিত্র প্রকাশ কর হয়েছে। মুলত এটি সঙ্গীত শিল্পীদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের একটি দালিলিক প্রমান পত্র।

মুক্তির গান-১৯৯৫।

১০। শ্যামল ছায়া- পরিচালকঃ হুমায়ুন আহমদ, মুক্তিঃ ২০০৪। এ ছবিতে প্রান বাঁচনোর তাগিদে ইঞ্জীন চালিত নৌকা যোগে নিরাপাদ আশ্রয় তালাশি কিছু মানুষের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে। এতে অভিনয় করেন- হুমায়ুন ফরিদী, রিয়াজ, শাওন সহ আরো অনেকে।

আমার দেখা এই ছবিগুলোর সবগুলো সবার কাছে শীর্য দশ এ নাও থাকতে পারে। কিন্তু ছবিগুলো যে আসলেই শ্রেষ্ঠ এতে সবাই একমত হবেন আশাকরি। মুক্তিযোদ্ধের চলচ্চিত্র আরো বেশী নির্মান হোক এটা সময়ের দাবি। তবে এতে যেনে কোন ধর্মকে ছোট না করা হয়। কারন মুক্তি যুদ্ধ কোন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। এটা জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের মুক্তিরযুদ্ধ।