মুক্ত চিন্তাচর্চা ও ধর্ম

আবুল কালাম আজাদ
Published : 22 May 2017, 04:09 PM
Updated : 22 May 2017, 04:09 PM

মুক্তচিন্তাচর্চার ক্ষেত্রে ধর্ম একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। যদিও এই প্রতিবন্ধকতাটা আমাদের সমাজেরই সৃষ্টি। মূলত মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রে ধর্মীয় কোন বিধিনিষেদ কোথাও নেই। এবং ধর্ম মুক্তচিন্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। তথাকথিত ফ্যাশনিক মুক্তমনারা ধর্মের সাথে মুক্তচিন্তাচর্চাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন মাত্র। ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ , নবী, রসুলকে নিয়ে কটুক্তি, মহান সৃষ্টিকর্তাকে অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ করা। এই সব মুক্তচিন্তা চর্চার আওতাভূক্ত নয়। এই সব আলোচনা সমালোচনা করে ব্যক্তি হিসাবে নিজেদের ফ্যাশনিক নাস্তিক্যবাদী হিসাবে পরিচিতি হওয়া ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য আসে বলে মনে হয় না।

প্রকৃত পক্ষে ধর্ম নিয়ে যৌক্তিক তর্ক বিতর্ক তথ্যজ্ঞান সমৃদ্দ আলোচনা ও সমালোচনা করা যৌক্তিক। কখনও কটাক্ষ, দুর্নাম, হটকারিতাকে বুঝায় না। ধর্মের সাথে যুক্তিবাদের সম্পর্কটি খুবই ঘনিষ্ঠ। যুক্তিবাদ (Rationalism) যেমন একটি জীবনাদর্শ ও ব্যক্তিগত দর্শন যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যুক্তি ও প্রমানকেই প্রাধান্য দেয়। ধর্ম ও তাই। তাহলে ধর্ম ও যুক্তিবাদ দিয়ে যদি আমরা আমাদের চিন্তা চেতনা চর্চাকে সমৃদ্ধ করতে পারি তাহলে বোধ হয় মুক্তচিন্তাটাকে ধর্মের সে প্রতিবন্ধকতা মনে করা হয় সেটি আর থাকবে না। প্রশ্ন আসতে পারে ধর্মের ক্ষেত্রে সেই আদেশ বা ধর্মীয় বিধানকে কিভাবে যুক্তিবাদ দিয়ে বিচার বিশ্লেশন করা যাবে? আসুন ধর্মের দৈব আদেশ বিষয়টি কী? এই দৈব আদেশ বলতে কিছুই নেই। যদিও অনেক ধার্মিকেরা সৃষ্টিকর্তার অলৌকিক দৈব বিষয়টি ধর্মীয় বিধিবিধান হিসাবে মেনে নিয়েছেন। বিষয়টি সেরকম নয়। যেগুলোকে আমরা দৈব-অলৌকিক বলছি সেগুলোর পিছনে কোন না কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অবশ্যই রয়েছে। আর এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই যুক্তিবাদের কাজ। যুক্তিবাদীরা বিজ্ঞানের আলোকেই বিচার বিশ্লেষন ও সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। ধর্ম কখনও বিজ্ঞানের বাইরে নয়। বর্তমান শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ধর্মের অনেক দৈব ঘটনাকে বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষন করা গেছে। যা নাকি কয়েক শত বছর পূর্বের দৈব ও অলৌকিক হিসাবে মানুষের বদ্ধ ধারনা ছিল।

ধর্মে প্রতিষ্ঠিত কিছু বিশ্বাস ও অনুভূতি ধার্মীকদের ভেতর কাজ করে। এই বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত বা কটাক্ষ করা মুক্তচিন্তা সমর্থন করে না। যদিও পূর্বে উল্লেখ করেছি যে এই বিশ্বাস ও অনুভূতি গুলোকেও যুক্তিবাদের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করা যায়। মুক্তচিন্তা ও বিশ্বাস বা অনুভূতিকে আঘাত বা বিদ্রুপ করা দুইটি দুই রকম ভিন্ন বিষয়। কোন ধর্মীয় বিশ্বাস বা অনুভূতিতে আঘাত বা বিদ্রুপ করাটা সম্পূর্ণ উসকানী বা গোষ্ঠিগত উত্তেজনার যোগান দেয়। আর মুক্তচিন্তা সম্পূর্ণ একটি প্রগতিশীল ধারনা প্রগতিশীলতা অর্থ এই নয় যে কোন রকম বিশ্বাস আদর্শ, অনুভূতিকে বিসর্জন দিতে হবে। এই সব বিষয়গুলো (বিশ্বাস, অনুভূতি ইত্যাদি) একজন মানুষের চারিত্রিক অলংকার। বিষয়টি এমন নয় যে মুক্তমনা কিংবা প্রগতিশীল বলেই ধর্মবিদ্দেশী হতে হবে তা নয়। বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক , যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত দিয়ে ধর্মীয় কোন কুসংস্কারকে বিলুপ্ত করে প্রগতির প্রয়োগকে সমর্থন করে মাত্র। প্রগতি কিংবা মুক্তচিন্তা কোনটিই ধর্ম বিশ্বাসের ধর্মীয় অনুভূতির বিপরীতে নয়। মুক্তচিন্তা, মুক্তমনা, প্রগতি, প্রগতীশীলতা, আধুনিকতা, সংস্কার, পরিবর্তন এই বিষয়গুলোকে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত করে যে নির্যাস পাওয়া যায় তাই মূলত অলংকার, পরিধান ও পোশাক। এই অলংকার আছে বলেই ধর্ম এত সুন্দর ও গ্রহনযোগ্য। ধর্মের উপরোক্ত নির্বাসিত উপাদানগুলোকে কখনও ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করানো উচিত নয়। উচিত নয় এই সব বিষয়গুলোকে নিয়ে কটাক্ষ কিংবা বিদ্রুপাত্তক মন্তব্য করা।

লেখক- আবুল কালাম আজাদ