: : মানুষ : :
মানুষের চাইতে অধিক সুন্দর আর কি আছে! প্রকৃতি, আকাশ, ছায়ার নিকট, আলোর নিকট, অন্ধকারের নিকটতর হইবার চাইতে মানুষের নিকটতর হওয়া অধিক প্রয়োজনীয়; সেই মানুষ যে মানুষ লুকাইয়া আছে তোমার স্তুপ হইয়া থাকা অন্তরাত্মার ভিতর, তাহাকে না দেখিতে পাইলে তাহার কথা না জানিলে, তাহার সহিত মিশ্রিত না হইতে পারিলে মানুষকে বুঝিবে কি করিয়া? সবই যে মানুষের আদল, আদলের দিকে চাহিয়া বদল করিও না মনুষ্যত্ব, তাহা যে তোমার দিকে প্রত্যাবর্তনের একমাত্র সরগম…
: : শিল্পী : :
মধু পান করিতে মৌমাছি নিজের চাকে মুখ দেয় না, দৌড়ায়, খালি দৌড়ায়; তাহার জীবনে ফুলের অভাব নাই, সে জানে ফুল কোথায় থাকে, ফুলের সহিত তাহার প্রাণের বন্ধন…
: : রুচি : :
রুচি কি করিয়া তৈরি হয়? কোথায় তাহার বাস? রুচি তোমার মন-রসনার ছিপ, যাহাতে দুনিয়াদারী ধরা খাইতে চাহে; একসময় প্রকাণ্ড দুনিয়াখানি আসিয়া তোমাকেই গ্রাস করিয়া লয়; রুচির মড়া হইয়া জীবন্ত চিতায় মানুষ জ্বলিতেছে সদা, সে জানে না কোথায় রুচির বাস, কি তাহার পরিচয়? কিসে তাহার তৃপ্তি, কিসে অন্তর জুড়ায় সেই খবর সে জনিতে পারে না, রুচির সুতা ছিপ হইতে আলগা করিতে থাকে, একসময় নিজেই ডুবিয়া যায় অতল জলে, নিজেই নিজের ফাৎনা হইয়া ভাসিতে থাকে মনরসনার চিত্তসাগরে…
: : নির্মাণ : :
ক্ষোভ হইতে কোনওদিন প্রকৃত অনুভবের নিকটতর হইতে পারিবে না, স্বীয় ক্ষোভ ও বিরাগের বলী হইবে তুমি নিজেই; বিক্ষুব্ধ মন দ্বারা ভাঙিতে পারিবে কিন্তু গড়িবার কোনও ক্ষমতা অর্জন করিতে পারিবে না; যাহারা জগতে ভাঙিয়াছে ঢের তাহাদের দেখিবে গড়িয়াছে সামান্যই, ভাঙা-গড়ার খেলা একের নহে বহুজনের বহুদিনের চর্চা; সাধক ভাঙে না কেবল মাড়াইয়া যায়, বন্ধুর পথ হইতে পথে, নিজের কাছে–ইহাকে স্বার্থপরতা কহিতে পার বটে কিন্তু ইহাই মানুষের নিজস্ব পথ, ভাঙা-গড়ার খেলায় তাহার আস্থা নাই, সে কেবল নিজেকে নির্মাণ করিতে শেখে ধ্বংসস্তুপে…
: : সুন্দর ও অসুন্দর : :
প্রতিটি সুন্দরের ভিতরেই একটি কদর্যতা আছে, প্রতিটি অসুন্দরের ভিতর যেমন সুন্দর লুকাইয়া থাকে; কিন্তু যখন কেহ সুন্দর ও অসুন্দরের বোধ হইতে বাহির হইয়া কেবল সত্যের প্রেমিক হয় তখন তাহার সুন্দর ও অসুন্দর উভয়ই প্রকাশ পায়, তাহার স্বভাব ও স্ববিরোধিতা উভয়ই মানুষকে ভাবায়; সে তখন মানুষের উপহাসের পাত্র হয়, সবাই তাহাকে লইয়া ঠাট্টা করিতে চাহে, কিন্তু সে ধীরে ধীরে নতুন মানুষরূপে জন্মলাভ করিতে থাকে। তোমার ভিতরের তুমিকে চাপাইয়া বাহিরের তুমির যে জামা পরিধান করিতেছ তাহা তোমার কোনও কাজেই লাগিবে না কেবল তোমাকে বিনাশ করা ছাড়া; সত্য তাহাই যাহা তুমি নিজে, এবং তাহার অকপট প্রকাশ করিতে নিজেকে আটকাইও না, আর যদি তাহার প্রকাশে তোমার দ্বিধা কাজ করিতে থাকে তবে প্রশ্ন কর নিজেকে, অনবরত প্রশ্ন কর, সেই প্রশ্ন যাহা তোমার সত্তাকে নাড়াইয়া দিবে…
: : প্রদর্শন : :
যার গভীরতা যত বেশি তার প্রদর্শন তত কম…
: : মাপকাঠি : :
স্কেল বা মাপকাঠি নিজেরই বানাতে হয়। আমরাতো একটা বারো ইঞ্চি স্কেল দিয়ে দুনিয়ার সবকিছু মাপি। স্কেল হলো উচ্চতার স্বরগ্রাম, তোমার জীবনবোধের মাত্রা, যেখানে তুমি সুন্দর, সপ্রতিভ, স্বাভাবিক, আনন্দময়। এখানে উচ্চতাটা হলো হৃদয়ের, মনের নয়…
: : সুন্দর : :
বাহিরের সৌন্দর্য্য যেমন ভিতরের সুন্দরকেও রক্ষা করিবার চেষ্টা থাকা প্রয়োজন; সৌন্দর্য্য আরোপ করিবার কি দরকার তাহা কেবল রক্ষা করিতে হয়, সৃষ্টিলগ্নেই সকল সৃষ্টি তাহার অনুপম স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য লইয়াই আবির্ভূত হয়; নিজের সৌন্দর্য্য নিজের প্রকৃতির সহিত মিশিয়া রহিয়াছে, কেবল তাহার জাগরণ ঘটাও, আপন সুন্দরের খবর না লইয়া বাহির সুন্দরের চর্চা করিয়া ময়ূরবেশে কোকিল হইতে চাহিও না…
: রস : :
রসাস্বাদনের রস কেহ দেখিতে পায় না, অনুভব করিতে হয়, বিষয় হইতে বিষয়ের গভীরে যে থাকে তাহাকে ছাড়া কোনওকিছুই সরস হইতে পারে না; তোমার আকৃতির ভিতর কী আছে? তাহাকে টানিয়া কতখানি ছুটিতে পার তুমি? নিজের মড়াটিকেও দাফন করিবার সামর্থ্য নাই তোমার; আখ হইতে রসখানি বাহির করিতে হইলে তাহাকে চিবাইতে হয়, যাহার কঠিন দাঁত রহিয়াছে তাহার রসপান আরও মধুরতর–দেহমনের সেই আখটিকে যতখানি পারো চিবাইতে থাকো, ইহার জন্মই এমন, তুমি তাহা না করিলে অন্যে আসিয়া তোমাকে চিবাইয়া রসপান করিয়া চলিয়া যাইবে নির্ঘাত..
: : দেখা : :
যে দেখিতে পায় আর যে দেখিতে পায় না তাহারা যে একই বিষয় দেখিবে এমন তো নহে, হইতে পারে তুমি দেখিতেছ তালগাছ আর আমি দেখিতেছি বাবুই পাখির বাসা; তুমি দেখিতেছ বালতি কখন ভরিবে আমি দেখিতেছি জলের প্রবাহকে; তোমার চোখে আনন্দ আর আমি দেখিতেছি তাহার অশ্রু..
: : ভাষা : :
দিও তোমার ঠোঁটের উষ্ণতা, আমার কানে; আমি শুনতে যেন পাই উষ্ণতার ভাষা, আর বুঝতে পারি তোমার ঠোঁট না থাকলে আমার কান দেখতে পেত না..
: : প্রদর্শন : :
সত্তার প্রদর্শনই জীবনের সংস্কৃতি হওয়া উচিত নয়, অপ্রদর্শনের আনন্দ যাহার নাই তাহার প্রদর্শনের বাহিরে জীবন নাই…
: : শিল্পী : :
জীবনশিল্পী না হইলে আত্মাকে দেখিতে পাইবে না, আত্মমানসের বদলে মন-মানস দ্বারা কল্পনামূর্তি চিত্তকে ভ্রান্তি দিবে শ্রান্তির বদলে…
:: যুগল সাধনা : :
কথা কহিবার ও শুনিবার যুগপৎ আনন্দ না থাকিলে আলাপ ও বিস্তার হয়, শিল্পী ও সমঝদার থাকে না..
: : মানে : :
যে পানি পান করিতেছ তাহাতে আগে নিজের মুখখানি দেখিতে পার, স্নান করিতেছ যাহাতে তাহার ভিতরেও তুমি আছো কি না দেখো, কোনও রকম পান করিয়া স্নান করিয়া জীবন পার করিও না, জীবনে কিছু কিছু কাজ বাকী থাকে, যাহার কোনও মানে থাকে না, কিন্তু সকল মানের উৎসমূলে তাহা লইয়া যাইতে পারে…
: : সাধনা : :
পাইকারি বাজারে গিয়া সকলে খুচরা কিনিতে পারে না, যে জানে তাহার বাজারের উপর সাধনা রহিয়াছে কহিতে হয়; সাধনা সকল কিছুতেই হয়, যখন যে জীবন যাহার মিলিয়াছে তাহার তাহাতেই শুরু করিতে হয়; নিষ্ঠাবানের জীবন দুর্বিষহ হয় না কিছুতেই, সে সকল কিছুতেই তাহার স্বাক্ষর রাখিতে পারে…
: : পথ : :
যে পথ তোমার নিজের নহে সেই পথে পা দিও না, নিজের পথ যে তাহা নয় সে কি করিয়া চিনিবে? যখন দেখিবে কেহ তোমাকে অন্ধের মত পার করিতেছেন তখনই বুঝিবে তোমার চূড়ান্ত অক্ষমতা তোমার সাক্ষাত পাইয়াছে…
: : সফলতা : :
ভুলে ভরা জীবন সফল জীবনের চাইতে কিছুখানি শ্রেয়তর; ভুলের উদ্বেগ ও আহতস্বভাব যাহার আছে তাহার চিত্ত আরও কিছুদূর বিস্তৃত, যে জীবনে হয়তো সফলতা নাই আশ্চর্য অর্জন রহিয়াছে…
: : প্রতিভা : :
প্রতিভা যদি ক্ষমতার স্বাদ পায় একটিবার, তাহার সমস্ত মেধা তাহাকেই প্রতিষ্ঠিত করিবার দিকে হাত বাড়ায়; আর একবার প্রতিষ্ঠা পাইলে তাহাকে রক্ষা করিতে প্রতিভার শেষবিন্দুখানিকেও সে কাজে লাগায়; যে প্রতিভা তাহার স্বীয় অস্তিত্বকে বিসর্জন দিতে পারে নাই তাহাকে মহৎ প্রতিভা বলিয়া উল্লেখ করা বাতুলতা; প্রতিভার মহত্ব নাই কিছু, মহতের প্রতিভা থাকে, তাহার বন্দনা করো…
: : যোগ্যতা : :
সুন্দর সময়ে সুন্দর কাজটি করিতে পারাই কর্তব্য কিন্তু অসুন্দর সময়ে সুন্দর কাজটি করিতে পারা যোগ্যতা…
: : নিষ্ঠা : :
যাহা করিবে তাহা পূর্ণরূপে করো, অসম্পূর্ণ কাজ নিষ্ঠাহীনতার নামান্তর, অসম্পূর্ণ মনের প্রতিচ্ছবি; বড় কিছু করিতে গিয়া অপূর্ণতা থাকিলে ইহার চাইতে দুর্ভোগের কিছু নাই, সময় ও পরিশ্রমের বাতুলতা মাত্র; ছোট ছোট পদক্ষেপ দাও, কিন্তু পূর্ণ কর, বৃহৎ পদক্ষেপে পা ফসকাইয়া পড়িও না, হাঁটিয়া বহুদূর যাইতে পারিবে তুমি কিন্তু দৌড়াইয়া কিছুদূর গিয়াই হাঁপাইতে থাকিবে; তুমি খরগোশ হইও না কচ্ছপও না, কেবল নিষ্ঠাবান হও, আর কিছু লাগিবে না…
: : সত্য : :
সত্য তোমার শরীরখানি, সত্য তাহার আচ্ছাদনও; আচ্ছাদনের সত্যে বাস করিতে থাকিলে নগ্ন সত্যে সহ্যশক্তি নাশ হইবে; যে পাগল, তাহার সত্য কী? সে সকল কিছুই খুলিয়া ধরিয়াছে, কেবল তাহার রহিয়াছে গোপন তোমার কাছে প্রকাশ্য যাহা–তোমার মুখে মুখে তোতাসত্য, তিতাসত্য নিত্য তাহাকে ঢাকিয়া রাখিতেছে…
: : যন্ত্র : :
অন্তরবীণা কি করে বাজে জানো? নিজে বীণা হয়ে যাও…তোমার বীণার তার তুমি নিজেই বাজাতে চাও! অন্তরবীণা কেন বাজে? সে কারণেই। যন্ত্রী হতে হলে আগে যন্ত্র হওয়া চাই, সে যন্ত্র যা মধুর তানে বেজে উঠবে, যন্ত্র নিজেও বাজে, তার জন্ম বাজানোর জন্য। যন্ত্র হও, যান্ত্রিক না হয়ে, কেবল যন্ত্র–বাজবে নিশ্চিত…
: : শিল্প: :
জীবন হইতে শিল্পকে যখন দেখিবে কেহ আলাদা করিয়া সাজাইতেছে তখনই বুঝিবে ইহা শিল্প নহে শিল্পের দিকে তাক করা একখানি বন্দুক–গুলি ছুঁড়িলেই শব্দ হইবে, লোকে ভাবিবে কিছু একটা ঘটনা বটে; শিল্পতো ক্রমাগত সূর্যের দিকে যাওয়া, একসময় সে সূর্য শিল্পীকে লক্ষ্য করিয়া নিজেই ছুটিয়া আসে…
: : ভালবাসা: :
যদি প্রকৃত ভালবাসিতে চাহো তাহাকে, তবে দূরে যাও, ভালবাসার চারাগাছখানি যেন তোমার প্রেমে বড় হইয়া উঠে…
: : দায়: :
সত্য যেমন তোমার মুখের হাসি তেমনি বুকের ক্ষুধাও; সত্য সুন্দর পুষ্পবাগান আবার নোংরা নর্দমাও; সত্য তাহাই যাহার দায় আছে দায়মোচন আছে–মিথ্যার দায় নাই দায়মোচনও নাই…
: : উদযাপন: :
যাহা সকলে করে তাহা নয় সকলে যাহা করিতে পারে না তাহা করিবার চেষ্টা করো, যাহাতে প্রবল সাহস ও গভীর আস্থা প্রয়োজন; বিবাহিত জীবনের চাইতে বিবাহমুহূর্তের প্রতি সকলের আগ্রহ অত্যধিক, তাহারা অখণ্ডজীবনকে ছাড়িয়া মুহূর্তজীবনকে অত্যধিক মূল্য দিয়া থাকে–প্রতিমুহূর্তকে উদযাপন করিতে শিখ, তোমার উদ্বোধন জন্মলগ্নেই হইয়াছে, এখন কেবল উন্মোচন করো নিজেকে…
: : ভেঁপু: :
যখন দেখিবে অন্তরের কথা বন্দরের ভেঁপুর মতন বাজিতেছে তখন বুঝিবে সত্য এইখানে পথ হারাইয়াছে ফের, ছুটিয়া যাও বহুদূরে–মিথ্যা ও প্রবঞ্চনার ঘাট হইতে দূরে যাওয়া সত্যেরই নিকটতর হওয়া…
: : প্রাপ্তি: :
হাত বাড়াইয়া যাহা ধরিতে চাহিতেছ তাহা কি তোমার সম্ভাবনাকে জাগাইয়া তুলিবে না কি অন্যের প্রশংসার আগুনে পুড়িবে প্রত্যাশার জামা ভাবিয়া দেখিতে পার; বরং তুমি নীচে হাতখানি দাও, তুলিয়া আন তোমার সর্বস্বকে সকল আচ্ছন্নতার ভ্রান্তি হইতে–প্রাপ্তির হীনতর আকাঙ্ক্ষা হইতে..
: : প্রশংসা: :
হাত বাড়াইয়া নিজের প্রশংসা শুনিতে চাহিও না, তাহাতে আত্মানন্দ নহে প্রশংসার মদে নেশা হইবে তোমার; অন্যের প্রশংসাও করিতে যাইও না, তাহা একখানি চতুর কৌশলীরূপে পরিণত করিতে পারে তোমাকে; বরং একে অন্যকে ভালবাসো, খোদার সৃষ্টিকে শর্তহীন ভালবাসার চাইতে আর কোনও প্রকৃত এবাদত নেই তো…
: : কবিত্ব: :
কবিত্বশক্তিই জগতে একমাত্র ঐশ্বরিক ভাষাপ্রকাশের শিল্পরূপ; কিন্তু কবিমাত্রেই সে শিল্পী নন, অনধিকারচর্চাকারীও বটে; কবিত্বের শক্তির সহিত অস্তিত্বের পরাগমিলন না ঘটিলে বন্ধ্যা হইতে হয়, পরমভাব ও ভূমা না থাকিলে কবি পুরুষহীন দরিদ্র নারী…
: : সফলতা: :
অর্জিত সাফল্যের সহিত তোমার গ্রহণক্ষমতা যুগপৎ না হইলে থামো, সফলতার আনন্দকে কেবল ধারণ করিয়া অর্জনকে মূল্যহীন জ্ঞান করিবার সাহস সঞ্চার করো…
: : ধারণ: :
একখানি বই হাতে লইয়া যদি ভাবিতে থাকো হইাকে সম্পূর্ণরূপে ধারণ করিয়া লইবে তবে জানিও বইখানি তোমাকে আদা ও কাঁচকলা দেখাইবে যথারীতি…
: : প্রতিষ্ঠা: :
প্রতিভার পরমশত্রু প্রতিষ্ঠা, প্রতিভাবানের প্রতিষ্ঠিত হওয়া মানে ক্রমে অপদার্থতার দিকে যাওয়া; মহৎ প্রতিভার দিকে তাকাও, মহত্বের সহিত তাঁহারা প্রতিষ্ঠা নহে আত্মনিষ্ঠতার পূজা করিয়াছেন–মুক্তমনের সহস্রদুয়ার যাহার বন্ধ হইয়া যায় তাহাকে প্রতিষ্ঠিত বলা যায়…
: : অনুভব: :
পূর্ণিমা রাত্রিতে তুমি প্রিয়তমার মুখ দর্শন করিতে কার্পণ্য করো না, তবে কেন প্রিয়তমার মুখ দেখিয়াই পূর্ণিমা রাত্রির আনন্দকে অনুভব করিতে পারো না?
: : শিল্প: :
যখন দেখিবে দর্শকের চাইতে নৃত্যশিল্পীর সংখ্যা অধিক তখন তুমি যদি শিল্পী হইয়া থাকো তবে দর্শকে পরিণত হও, ইহাই তোমার শিল্পের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণ…
: : রসাস্বাদন: :
রপকের সত্যমিথ্যাকে নহে রসাস্বাদনের ধর্মকে ধারণ করিতে হয়, মরমী আস্বাদনের মন তাই মিথে নহে মর্মে বাসা বাঁধে…
: : সংলাপ: :
চিত্রনাট্য আর সংলাপ রচয়িতা এক নাও হইতে পারেন; সংলাপ সেই শিল্প যাহাকে বলিতে হয় ছুরির ধার, জীবনবোধের শিলায় ঘষিয়া ঘষিয়া এমন সংলাপের জন্ম দিতে পারেন যিনি তাহার আর কামারবেটার ন্যায় চিত্রনাট্য রচনা করিবার প্রয়োজন পড়ে না..
: : স্বপ্ন: :
প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপত্তির স্বপ্ন যাহার মননকে জড়াইয়া ধরিয়াছে তাহাকে স্বপ্নবান কহিতে আমার আপত্তি আছে; স্বপ্নের কোনও পূর্বপ্রস্তুতি বা পরিকল্পনা থাকে না, থাকে স্মৃতি ও চেতনার টানাপোড়েন; আমি স্বপ্ন দেখিতে চাহি না কারণ জীবনই আমার কাছে স্বপ্নময় দারুণ!…
: : শিল্পী: :
শিল্পকে সত্য হইতে হয়, সত্যের সৌন্দর্য্যই শিল্পের সুন্দর–বিকৃতি পারফর্মিং হইতে পারে আর্ট নহে; সংগতি বা অসংগতির রূপায়নমাত্রেই শিল্পচর্চা নহে, একজন শিল্পী একজন মহান ধাত্রী, সভ্যতার অতীব প্রয়োজনীয় সৃষ্টিলীলার সেবক তিনি; মনে রাখিতে হয়, শিল্পী শিল্পের জন্মদাত্রী নহেন ধাত্রীমাত্র, তাহার উদ্দেশ্য কেবল সৃষ্টির সম্ভাবনাকে কৃতির সহিত সমাপন করা–আমি শিল্পী ততখানি যতখানি আমার ধাত্রীবিদ্যা মানবিক ও আত্মিক…
: : শিল্প: :
তোমরা যাহা দেখিয়া বা ভাবিয়া মাথা নত কর একজন শিল্পী তাহা করেন না, শিল্পী তাহার হৃদয়খানি প্রণত করিতে চাহেন, মহান শিল্পীগণ সর্বস্ব দিয়া হৃদয়খানিকেই উৎসর্গ করিয়াছেন; একজন শিল্পী প্রকৃতই যে একজন সাধক সমাজ তাহা ভুলিয়া গিয়াছে, সে মনে করিতেছে নিয়ম করিয়া চর্চার ভিতরই বুঝি শিল্পসাধনা বিরাজমান–অথচ শিল্প পরমবিজ্ঞান, পরম অনুভবের সহিত সজ্ঞান হইয়া আত্মময় হইয়া উঠিবার সনাতন সাধনার নাম; জীবনের প্রতিটি বিন্দুতে তাহার সংস্থান না ঘটিলে মহৎ শিল্পী হওয়া যায় না; কলা-সাধনা আর শিল্প-সাধনার তাই বিস্তর ফারাক…
: : তালুক : :
শিল্প কারো বাপের তালুক নয়, এটা ভাবের রাজ্য। আমি তোমার দ্বারা তুমি আমার দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে এটাই সত্য–এটা একটা চুরি, সেই চোর যে চুরি করেছে আর অকাতরে দিয়েছে মানুষকে, যা চুরি করেছে তা নয় সে দিয়ে রোজগার করে আরও বড় কিছু…
: : পোস্টমডার্ন : :
আমার পোস্টমডার্ন হইতে লজ্জা করে, আমি কি করিয়া তাহা হইতে পারি সে ভাবনায় আজও শক্তি পাই না, আমার বাধ সাধে কলার সাথে মূলা, চোলাইয়ের সাথে কলাইয়ের শেক গিলিতে, যেমন করিয়া ধর্মের পোশাক পরিয়া নিম্নবর্গের বিশ্বাস লইয়া তাস খেলিতে–আমার ইচ্ছা হয় না ইশতেহার পড়িতে ও বন্দনা করিতে, সুশীল ও তর্কবান্ধব সমাজ হইতে ঢের দূরে পতিত আমি, জানি না চৈতন্যের সহিত কারবার খুলিতে, বুদ্ধির পসরা পাতিয়া বসিয়া যাইতে জনপদের বুকে; আমি আধুনিকও নহি, স্থান-কাল-পাত্রহীন সর্বকালীন সরল হইতে চাহি–আমার আছে ফকিরি, ফিকিরি নাই কিছু; আমি আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে সজ্ঞান হইতে চাহি, কেন অজ্ঞান হইতে যাই তর্কনগরে…?
: : প্রকৃতি : :
প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা করো, ভালোবাসো, নিকটতর হও, দেখিবে সে তোমার ভবিষ্যতখানি রক্ষা করিতেছে সুনিপুণভাবে, প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাহা করিবে তাহাতে যত উচ্চতায় পৌঁছাইবে ততই দেখিবে পতিত হইবার সাংঘাতিক পরিণতি সঙ্গে লইয়া রাখিয়াছ…
: : পথ : :
নিজের সৃষ্টির পথখানি যদি কেহ খুঁজিয়া না পায় তবে অন্যের পথে আসিয়া আপদ বিস্তার ঘটায়–স্বীয়পথ হইতে বিচ্যুত মানুষরাই পথে পথে যুদ্ধ রটাইয়া দেয়; প্রত্যেকের নিজের একটি পথ রহিয়াছে, যাহার নাই তাহার একমাত্র পথ বেপথ…
: : কাজ : :
এক জীবনে একটিই কাজ করিতে চেষ্টা করো, এবং তাহা পূর্ণতর–ব্যাপ্তি যাহার দীর্ঘ, কালোত্তীর্ণ, বহুকর্মের প্রবল জোয়ারে হারাইয়া যাইও না; প্রেরণাহীন কর্ম বন্দী করিয়া ফেলে কর্মজালে, ঘুরপাক খাইতে থাকে মানুষ নিত্যকর্ম জুয়ায়–যাহা করিবে তাহা যদি অন্তর্গত সংযোগ দ্বারা পরিচালিত না হয় তবে তোমার কর্ম তোমাকেই কেবল বঞ্চনা করিবে, আর কাহাকেও নহে…
: : পাগলামী : :
যে কোনও পাগলামির ভিতর যদি প্রেম ও প্রকৃতিসংলগ্নতা খুঁজিয়া পাওয়া যায় তবে সে পাগলামির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করো; তুমি তোমার পদতলে বলী দিতে চাহো একটি জীবনকে, আর পাগল জীবনের পদযুগলে একটি ফুলের ন্যায় নিজেকেই বিসর্জন দিতে চাহে…
: : মুক্তি : :
মুক্ত হইয়া সৃষ্টিশীল হওয়া যায় না বরং সৃষ্টিশীলতার ভিতর দিয়াই মুক্তিলাভ করিতে হয়, মুক্ত চেতনা ও জ্ঞানের সৃষ্টিশীলতার প্রয়োজন ততখানি যতখানি আকাশের প্রয়োজন মেঘমালার; আমার সৃষ্টির ভিতর দিয়া আমি আমাকেই নির্মাণ করিতেছি, নিরন্তর সেই ধারা বজায় রহিয়াছে যতদূর আমি দূরত্বকে দূর করিতে পারিতেছি…
২০১৪