আই এম ফ্রম টাঙ্গাইল সদর!

আজমুল হক (রবিন)
Published : 17 June 2015, 04:58 AM
Updated : 17 June 2015, 04:58 AM

কয়েক সপ্তাহ আগের ঘটনা। প্রিয়জনের অসুস্থতার কারনে মনটা যখন একেবারে বিধস্ত তখন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সকল ঔষধ খুজেঁ পেলে ও চোখকে প্রটেক্ট করার জন্য প্রেসক্রাইভ কৃত 'আইপ্যাড' খুজেঁ পাচ্ছিলাম না। ধানমণ্ডি-১৯ হতে ঝিগাতলা পর্যন্ত ১৭/১৮ টা ফার্মেসী (বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালের ফার্মেসী সহ) সহ নাজ হাসপাতালের ফার্মেসী যা আবার ছয়তলায় অবস্থিত খুঁজে ও যখন 'আইপ্যাড' নামক বস্তুটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন বুঝতেই পারছেন মনের অবস্থা ! নাজ হাসপাতালে থাকা অবস্থায় হঠাৎ আল-নুর চক্ষু হাসপাতালের কথা মনে পড়লো কিন্তু হাসপাতাল টা শংকরের আগে না পরে মনে করতে পারছিলাম না তখনই আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়লো যার সাথে আমি একবার ঐ হাসপাতালে গিয়েছিলাম অনেক আগে , তাকে তিন-চারবার ফোন দিয়ে যখন পাচ্ছিলাম না তখন বিরক্তিটা চরম আকাঁর ধারন করলো, নিজেকেই নিজের কাছে অসহ্য লাগতে শুরু করলো ! নাজ হাসপাতাল থেকে নেমে আর একটু ও হাটতে পারছিলাম না, চরম ক্লান্তি এসে আমার উপর ভর করলো । তারপর ও হাঁটতে হলো …

হাঁটতে হাঁটতে মেইন রাস্তায় এসে একটা রিক্সা পেলাম তার কাছে জানতে চাইলাম, শংকর যাবেন ভাই ? তিনি বল্লেন, যাবো । আমিও দ্রুত একরাশ ক্লান্তি আর বিরক্তি নিয়ে রিক্সায় উঠে বসলাম । হঠাৎ রিক্সাওয়ালার কথায় মনে হয় শক্তি ফিরে পেলাম ! রিক্সাওয়ালা বল্ললো, স্যার আমি ইন্টারমিডিয়েট পাস , ইংরেজী শিখতে চাই কোথায় ভালো ইংরেজী শিখতে পারবো ? আমি বল্লোলাম, ইংরেজী শিখাটা আসলে চর্চার বিষয় যত ইংরেজী চর্চা করবে তত বেশী শিখতে পারবে , বাজারে অনেক ভালো ইংরেজী শিখার বই আছে নীলক্ষেত গিয়ে দেখে একটা বই কিনে পড় আর চর্চা শুরু করো তারপর না হয় একটা ভালো প্রতিষ্ঠানে একটা কোর্স করে নিও ।ধানমন্ডী বৃটিশ কাউন্সিল অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বল্লো, স্যার এখানে ভর্তি হলে কেমন হবে ? আমি বলোলাম ভালোই হবে! আবার একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখিয়ে বল্লো, আগে ভালো ছিল এখন কোয়ালিটি (গুনগতমান) নাই ! আমি বল্লোলাম, কোয়ালিটি (গুনগতমান) দিয়ে কি হবে ? বড় বড় ডিগ্রী দরকার ডিগ্রী হলেই হবে !

তারপর তার কাছে জানতে চাইলাম, তোমার বাড়ী কই ? সে হাসতে হাসতে রসিকতা করে বল্লো, ইংরেজীতে উওর দেই স্যার, একটু চর্চা করি, কি বলেন ? আমি বল্লোলাম, দেও । সে বল্লো , আই এম ফ্রম টাঙ্গাইল সদর ! আমি বললাম, ও টাঙ্গাইল ! অনেক বিখ্যাত জায়গা ভালো মিষ্টি পাওয়া যায় । সে বলল, ইয়েস স্যার টাঙ্গাইলের চমচম । আমি বললাম, টাঙ্গাইলে তো বিখ্যাত সব লোকেরও বাস। সে বললো, বিখ্যাত মানে ফেমাস! বিখ্যাত না ময়লা, যত্তোসব ময়লা ! জাস্ট ডাস্ট ! দে আর অল সেলফিস্ ! এরা পারে না এমন কোন কাজ নাই, এরা নিজ স্বার্থের জন্য সব পারে ! জানেন স্যার স্বার্থের জন্য এরা ………….. …… আবার দেখি কতো ভালো ভালো কথা বলে ! ……… !!! আমি বুঝলাম, তাদের উপর তার অনেক ক্ষোভ ! আমি তাকে বললাম, বাংলাদেশের একজন মহান নেতার ও জন্ম কিন্তু টাঙ্গাইলে! সে বলল, জ্বী স্যার , হুজুর মাওলানা ভাসানী । কথার ফাঁকে ফাঁকে আরও তিনটি ফার্মেসীতে 'আইপ্যাড' খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না, বাংলাদেশ আই হাসপাতালে এসে তা অবশেষে পেলাম কিন্তু জিনিষ টা দেখে আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম, প্যাকেটের গায়ে লেখা SPECIAL SURGICAL GAUZE !

তাকে বিদায় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখন বাসায় যাচ্ছিলাম, তখন আমার মাথার ভিতের কেবলই একটা কথাই ঘুর ছিল 'তারা সব পারে, তারা পারে না এমন কিছু নাই' । আর ভাবতে লাগলাম প্রথম আলোর একটা প্রতিবেদনের কথা যা ঐ সময়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। সোনারবাংলা কনষ্ট্রাকসান ফার্মের নামে অসংখ্য ব্রীজ-কালবাট অর্ধেক করে ফেলে রেখে জনগনের চরম ভোগান্তি জিইয়ে রেখেছিল বছরের পর বছর। যদিও প্রতিটি প্রকল্পের পুরো টাকাই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে উওোলন করে নিয়েছিলেন তিনি ।এত সব করেও তার নীতি কথা বন্ধ ছিল না , এখনও যেমন বন্ধ নাই ! সকাল-বিকাল নেতা-নেএীসহ সাধারন জনগনকে কেবলই নীতি কথা শিখাতে চেষ্টা করছেন, আর ওমুকের এই দোষ ওমুকের ঐ দোষ বলে প্রতি নিয়ত দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াচ্ছেন! জনগন ধিকৃত এবং বিশ্ব-বেহেয়া হিসেবে খ্যাত লোকটির হাতে জাতীয় সংসদে একসময় চুমু খেয়ে এখন তাকে তিনি হিজড়া বলে গালি দিতেও বিন্দুমাএ সংকোচবোধ করেননি ! আর ও একটা বিষয় মনে পড়ল অনেক আগের কথা তিনি যখন দীর্ঘ সময় পর এদেশে ফেরত আসেন তখন একটা গোষ্ঠী তাকে বাকশালী গুণ্ডা, আওয়ামী লীগ গুণ্ডা বলে গালি দিতেন এবং বলতেন গুণ্ডার কারনে দেশে আবার অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরী হবে! এখন তারাই আবার তাদের সেই গুণ্ডার বক্তব্য নিয়ে কোটেশন করে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়!

তার আরেক বড় ভাই বিতর্কিত মন্তব্য করে মন্ত্রীত্ব হারিয়ে এখন জেলে ! কয়েকদিন আগের দৈনিক কালের কন্ঠ পএিকার এক খবরে প্রকাশ তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রিজন জেলে ভিভিআইপি কেবিনে অনেক আরাম আয়েশে আছেন ! কেবিনের ভাড়া বাবধ সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা বাকী পড়লেও টাকা দেওয়ার খবর নাই, টাকা চাইতে গেলে নাকি বিভিন্ন রকম হুমকী-ধমকী দিচ্ছেন! তিনি নাকি বলছেন আমি আবার কিছু দিন পর মন্ত্রী হবো, তখন তোদের উচিত শিক্ষা দিবো ! মুক্তিযুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করছি টাকা দেওয়ার জন্য !!!