রুদ্ধকণ্ঠ যাযাবর কণ্ঠযোদ্ধা ভূপেন হাজারিকা

বাদশা মিন্টু
Published : 5 Nov 2011, 02:14 PM
Updated : 5 Nov 2011, 02:14 PM

আমি এক যাযাবর….আমি এক যাযাবর
পৃথিবী আমাকে আপন করেছে, ভুলেছি নিজের ঘর
আমি এক যাযাবর…আমি এক যাযাবর

…………………………………………

আমি দেখেছি অনেক গগনচুম্বী অট্টালিকার সারি
তার ছায়াতেই দেখেছি অনেক গৃহহীন নরনারী
আমি দেখেছি অনেক গোলাপ-বকুল, ফুটে আছে থরে থরে
আবার দেখেছি না ফোটা ফুলের কলিরা, ঝরে গেছে অনাদরে
প্রেমহীন ভালোবাসা বেসে বেসে, ভেঙ্গেছি সুখের ঘর
পথের মানুষ আপন হয়েছে, আপন হয়েছে পর
তাই আমি যাযাবর…. আমি এক যাযাবর…

যাযাবর এক শিল্পীর গান। নাম তার ভুপেন হাজারিকা। আর দশটা সহজ-সরল দরাজ গলার এক শিল্পী যিনি পৃথিবীকে দেখেছেন শিল্পী সত্তায়। ৫ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন।তার মৃত্যুতে উপমহাদেশে আরো এক তারা খসে গেলো। বয়সের ভার আর অসুস্থতার জের ধরেই তিনি বিদায় নিলেন। তার কণ্ঠ কি থেমে গেলো। কিন্তু তার গানের সে সুর কি কখনও থেমে যাবে?

১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামের সাদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন ভূপেন হাজারিকা। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি অসমিয়া ছবিতে গান করেন। অসমিয়া এই শিল্পী নিজ গুনে দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক জগতের অগ্রদূত হয়ে উঠেছিলেন। শিক্ষাজীবনে ১৯৪৬ সালে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ভূপেন হাজারিকা একাধারে ছিলেন গায়ক, কবি, সাংবাদিক ও লেখক। অসমিয়া ভাষা বাদেও তিনি বাংলা, হিন্দিসহ একাধিক ভাষায় গান করেছেন। ভূপেন হাজারিকা তাঁর এই বর্ণাঢ্য জীবনে পদ্মভূষণ, দাদা সাহেব ফালকেসহ একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

তিনি রাজনীতির যে পাঠ নিয়েছিলেন তা বিতর্কিত হলেও তার শিল্পী সত্তাকে কখনই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোনোর সঙ্গে তুলনা করা যাবেনা। তিনি বিজেপি করেছেন বা রাজনৈতিক চালের মধ্যে পড়ে গেছেন তাতে ব্যক্তি ভুপেন এবং শিল্পী ভুপেনের অনেক তফাৎ।

বিস্তীর্ণ দুপারে, আমি এক যাযাবর, মানুষ মানুষের জন্যে, প্রতিধ্বনি শুনি, সাগর সঙ্গমে, আজ জীবন খুজেঁ পাবিসহ অসংখ্য গান মানুষের মুখে মুখে ফিরে। দুনিয়া পারায়ে লোগ ইয়াহা বেগানে ….গানের মতো হিন্দি গানেও ভুপেনকে খুঁজে পাওয়া যায় তার শিল্পীসত্তায়। ভুপেন আমাদের বাংলা গণসংগীতের একটা অন্যধারার নাম। উদাহরণ হিসেবে তুলে আনা যায়…

জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ,
জয় জয় মুক্তিবাহিনী
ভারতীয় সৈন্যের সাথে রচিলে
মৈত্রীর কাহিনী।।

ধর্মান্ধতার বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষতা,
বিভেদগামী শক্তির বদলে
গঙ্গা পদ্মার একতা,
বিশাল ভলগা, গঙ্গা-পদ্মার
পাড় ভেঙ্গে এক হল পানি।।

সামন্ততন্ত্রের বিপরীতে, এক নতুন প্রজাতন্ত্র,
সমরতন্ত্রের বিপরীতে,
এক অভিনব সমাজতন্ত্র,
স্থাপনা করে রক্তে লিখিলে
শেখ মুজিবরের বাণী।।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একজন কণ্ঠযোদ্ধা ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে গনমানুষের একটা কণ্ঠ হারিয়ে গেলো…
যে কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হতো…
মানুষ মানুষের জন্য…জীবন জীবনের জন্য

…….

একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না???? ঈদে উপলক্ষে ভুপেন হাজারিকার এ গানটিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আসুন আমরা সহানুভুতির হাত বাড়িয়ে দিই..আমাদের চারপাশে মানুষগুলোর জন্য।