রাজনীতির দেউলিয়াপনা

শহিদুল ইসলাম বাহার
Published : 9 Jan 2015, 07:29 PM
Updated : 9 Jan 2015, 07:29 PM

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। অবশ্য গল্প না বলে কৌতুক বলাই ভাল। পাঠানদের নিয়ে কৌতুক। এক পাঠান চুরি করতে গিয়ে গৃহকর্তার হাতে ধরা পরল। তো গৃহকর্তা চোরকে বাসায় বেধে রেখে থানায় গেল পুলিশকে খবর দিতে। থানায় যাওয়ার পর পুলিশ জিজ্ঞেস করল চোর কোথায়। তখন গৃহকর্তা বলল চোরকে বাসায় বেধে রেখে এসেছে।
'ভাল করে বেধেছেন তো?' পুলিশ জিজ্ঞেস করল।
'জি, খাটের সাথে পা ভাল করে বেধে এসেছি'।
'সে কি! হাত বাধেননি'? পুলিশ অবাক।
'হাত তো বাধিনি'।
'তাহলে তো চোর হাত দিয়ে বাধন খুলে পালাবে' পুলিশ চরম বিরক্ত।

তখন গৃহকর্তা কিছুক্ষন চিন্তা করে বলল, ' স্যার, মে ভি পাঠান হু, ও ভি পাঠান হে। আগর ইয়ে চিন্তা মেরা দেমাগ মে নেহি আয়া তো ওস্কা দেমাগ মে ভি নেহি আয়েগা। আপ চলিয়ে মেরে সাত্ (স্যার, আমিও পাঠান, সেও পাঠান। যেহেতু এটা আমার মাথায় আসেনি তাহলে ওর মাথায়ও আসবে না। আপনি আমার সাথে চলেন)। তো পুলিশ গিয়ে দেখল চোর সেভাবেই পা বাধা অবস্থায় বসে আছে।

গল্পটা বলার কারন হল বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতি বা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের অবস্থা দেখে এই গল্পটাই মনে এসছে। বাংলাদেশে এই সময়ে রাজনীতির হালচাল যে সুখকর নয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এখানে সরকারের একেরপর এক রাজনৈতিক ভুল পদক্ষেপ দেশকে অশান্ত করছে আর বিরোধি পক্ষও সেই ভুলের সুযোগটা নিজেদের পকেটে পুরতে না পেরে সহিংসতা চালাচ্ছে। তারা এমন সব কর্মকান্ড করছে যে তাতে সরকার ভুল করলেও তার মাশুল তাদেরকে গুনতে হচ্ছেনা।অর্থাৎ ভুলটা আর ভুল থাকছেনা। সরকারের মাথামোটা নেতারা ভুলটাকেই ক্রেডিট মনে করে আরো বেপরোয়া হচ্ছে। বিরোধি পক্ষের অবস্থা হল সেই পাঠানের মত, দুই হাত খোলা থাকার পরও পায়ের বাধন খুলতে পারছে না। সর্বশেষ ৫ই জানুয়ারিতেও দেখা গেল একই অবস্থা। বিরোধি পক্ষের একটা সমাবেশকে ঘিরে সরকারের হটকারি সিদ্ধান্তে পুরো দেশ অশান্ত হয়ে উঠল। সরকার এমন একটা পরিস্থির সৃষ্টি করল যেন দেশে জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে। যেন বিরোধি পক্ষ সমাবেশটা করলেই সরকারের পতন হয়ে যাবে। অথচ এরকম শত শত সমাবেশ করলেও সরকারের পতন হবে বলে আমার মনে হয় না। অতিতে কি তারা অসংখ্য সমাবেশ করেনি? অথচ এই একটা সমাবেশকে সরকার বিশাল একটা ফেক্টর বানিয়ে দিল। যেখানে বিএনপি বা ২০ দলিয় জোট কোনভাবই আন্দোলন সফল করতে পারছিলনা সেখানে সরকার আন্দোলনের একটা পরিস্থিতি নিজেরাই তৈরি করল।

এটা ছিল সরকারের অতীত ভুলের একটা পুনরাবৃত্তি আবার বিরোধী জোটেরও ছিল পরিস্থিতিকে নিজেদের অনুকুলে আনতে না পারার ধারাবাহিক ব্যর্থতা। ৫ই জানুয়ারিকে ঘিরে সরকারের সার্বিক অবস্থান সাধারন জনগন যে ভালভাবে নেয়নি তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষ করে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা, তাকে সমাবেশে যোগ দিতে না দেওয়া ক্ষমতার স্পষ্ট অপব্যবহার বলে প্রতিয়মান হয়েছে। আর অন্যদিকে বলা হচ্ছিল তাকে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। সব ঘটনাই লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছিল। তারপরেও কেন এই মিথ্যাচার বুঝলাম না। হয়ত এটা ছিল জনগনের সাথে একধরনের রসিকতা। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বোঝা উচিত জনগন কোন হাসি-তামাশার পাত্র না। সরকারের এ ধরনের আচরনে সাধারন মানুষ এমনকি আওয়ামিলীগের সমর্থকরাও বিরক্ত। কিন্তু খালেদা জিয়া জনগনের এই অনুভুতিকে নিজের অনুকুলে আনার চেষ্টা না করে কর্মসুচী দিলেন লাগাতার অবরোধ। অথচ তার হাতেই ছিল মোক্ষম অস্ত্র যেটা সরকার নিজেই তৈরি করে তার হাতে দিয়েছিল। সেটা ছিল ওই সমাবেশ যাকে ঘিরে সারা দেশে এত লংকা কাণ্ড হল। তিনি অবরোধের ঘোষনা না দিয়ে বলতে পারতেন যে সমাবেশ স্থগিত করা হয়নি, যখনি তিনি এই অবরূদ্ধ দশা থেকে বের হতে পারবেন তখনি সমাবেশ হবে। সরকার তো অনন্তকাল তাকে অবরূদ্ধ করে রাখতে পারবে না? এক সময় সরকারের কাছেই এটা বোঝা হয়ে যেত। আর বিরোধীরা সমাবেশ করার ঘোষনাকে ঘিরেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারত। যাই হোক তিনি এই নতুন অস্ত্রটা তুলে নিলেন না। তুলে নিলেন পুরানো ভোঁতা অস্ত্র যা জনগনের কাছে পরিত্যজ্য।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলছে যোগ্যতার সংকট। এ সংকট রাজনীতি থেকে সমাজের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। অযোগ্যতাই হল এখানে যোগ্যতা। তাই এখানে যোগ্য ব্যক্তিরাও অযোগ্য হয়ে পড়েন অথবা নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য অযোগ্যদের সাথে তাল মিলান। তবে সহসা এ অবস্থা থেকে উত্তরন হবে বলে মনে করিনা। কারন অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। তবে একদিন মুক্তি মিলবেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তো সামনেই এগোতে হয়।