
হুমায়ুন ফরীদিকে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। নাটক-চলচ্চিত্রে সদর্প পদচারণা তার। দুুপুর বেলা বিটিভিতে বাংলা সিনেমা দেখতে যেতাম। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। রান্না না হলে ভাত না খেয়েই যেতাম, অনেক সময়। তবুও সিনেমা দেখা মিস করতাম না। এর আগে ‘মায়ের অধিকার’-এ সালমান শাহের মামার চরিত্রে তার অভিনয় দেখে ভক্ত বনে যাই। ‘ও সোনা রে, পিঁপড়া খাবে বড় লোকের ধন’। তখন থেকেই চিনি হুমায়ুন কামরুল ইসলাম ফরীদিকে। সেই নয়-দশ বছর বয়স থেকে।
বড় হওয়ার সাথে সাথে সিনেমা দেখার ক্ষেত্র বদল হতে থাকে। বাড়ি থেকে শহরে হলে গিয়ে দেখতে থাকি সিনেমা। তখনও মুগ্ধতা কাটেনা ফরীদির অভিনয় থেকে। কি ন্যাচারাল অভিনয়! জাত অভিনেতা। দর্শক মাতানো অভিনয়। একটা সময় বুঝতে পারি তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের নক্ষত্র-সূর্য। ‘যার নিজের আলো আছে, গ্রহ-উপগ্রহ আছে; অন্যকে আলো দেয়, আলোকিত করে’। যিনি স্রষ্টা। লীডার। তিনি পথ দেখান। অন্যরা চলে তার দেখানো পথে।
মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র সর্বত্রই ছিল তার সাবলীল ও রাজসিক পদচারণা। অভিনয়ের ভেতরে চলে যাওয়ার অপূর্ব ক্ষমতা। মিশে যাওয়া অভিনয়ের সাথে। এর নাম হুমায়ুন ফরীদি। মৃত্যু হবে। তাই বলে এমন মৃত্যু! ৬০ বছর নেহাত কম নয়। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে যেন খুবই কম! বিশেষ করে ফরীদির মত লোকদের। আর ক’টা দিন থাকলে কি হত না!
অভিনেতা যায়, আসে। কিন্তু কিংবন্তি তৈরি হয়। একবার গেলে আর আসে না। নজরুলের ধুমকেতুর মত-‘আমি যুগে যুগে আসি; আসিয়াসি পুনঃ মহাবিপ্লব হেতু। এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধুমকেতু’। ফরীদিরা বার বার আসে না। যুগেই আসেন। একবার। এসে বিপ্লব সাধন করেই চলে যান।
ব্যক্তিগত জীবনে সুবর্ণার সাথে বিচ্ছেদের পর থেকেই অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করতে থাকেন তিনি। নিজের ওপরে হয়ত ‘প্রতিশোধ’ নিতে থাকেন। অভিমান করেই। ঘরের মধ্যে তৈরি করেন আরেক ভুবন। অন্ধকার সে ভুবনের বাসিন্দা শুধু তিনিই। নিঃসঙ্গতা কুড়ে কুড়ে খেয়েছে তাকে এই এত দিনে।
ফরীদির জীবনটা যেন অনেকটা ‘দেবদাসে’র মত। বাথরুমে পড়ে কী করুণ মৃত্যু! দেবদাসের করুণ মৃত্যুর পর উপন্যাসের শেষাংশে শরৎচন্দ্রের মন্তব্য ছিল- ‘এখন এতদিনে পার্বতীর কি হইয়াছে, কেমন আছে জানি না। সংবাদ লইতেও ইচ্ছা করে না। শুধু দেবদাসের জন্য বড় কষ্ট হয়। তোমরা যে কেহ এ কাহিনী পড়িবে, হয়ত আমাদেরই মত দুঃখ পাইবে। তবু যদি কখনো দেবদাসের মত এমন হতভাগ্য, অসংযমী পাপিষ্ঠের সহিত পরিচয় ঘটে, তাহার জন্য একটু পার্থনা করিও। পার্থনা করিও আর যাহাই হোক, যেন তাহার মত এমন করিয়া কাহারও মৃত্যু না ঘটে। মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময়ে যেন একটি স্নেহ করস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে-যেন একটিও করুণার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়। মরিবার সময় যেন কাহারও এক ফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে’।
***
ফিচার ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত
কুদ্দুছ বলেছেনঃ
ভাই খবরটা শুনে এতই খারাপ লাগছে যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা। উনাকে যেন বেহেস্ত বাসী হন সেই দোয়াই করছি আল্লাহর কাছে।
বামমু আল আমীন বলেছেনঃ
মানুষ বাঁচে তার কমের্র মধ্যে
বাঁচবেন ফরীদি ভাই
munna বলেছেনঃ
ভাই আমরা আর কখনো হুমাউন ফরীদির সেই হাসি দেখতে পারব না, এটা ভাবতেই পারছিনা
মোত্তালিব দরাবারী বলেছেনঃ
একটা সময় ছিল যখন অনেকে শুধু হুমায়ুন ফরিদিকে দেখার জন্য সিনেমায় যেত।
এরকম শক্তিমান অভিনেতার দেখা আবার কবে পাব জনিনা।
এঞ্জেল আইজ বলেছেনঃ
কবির ভাষায় বলতে গেলে, বলতে হয়,
“এমন ও জীবন করিও গঠন
মরিলে হাসিবে তুমি
কাদিবে ভূবন”
তিনি সেই মাত্রার একজন অভিনেতা ছিলেন
rubel বলেছেনঃ
অত্যান্ত দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে যে, আজ মরা মানুষকে নিয়ে০ রাজনীতি, মুক্তিযোদ্বা আর ৭১ হচ্ছে। কেউ মারা গেলে তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। তার রুহের মাগফেতার কামনা করার জন্য ইসলামী যে নিয়ম-কানুন আছে তা করতে হবে। সেটা না করে শহীদ মিনার নিয়ে বলা হয় ফরিদী বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ব করেছেন, তার পর লাশ রেখে পুলিশ সেলুট করে, বাশি বাজায় ইত্যাদি সব অপসংস্কৃতি। অবস্থাদৃস্টে মনে হয় মুক্তিযোদ্বা বললেই বেহেশতে চলে যাবে। হায়রে বাঙ্গালী….
মরুধন বলেছেনঃ
শুধু এই টুকুই বলব- সুবরনা হারলেন,হুমায়ুন জিতলেন। জয় হুমায়ুন।
sc_f7cebfe58c8126c2872e76ad45a2877e বলেছেনঃ
হুমাউন ফরীদি সেরা অভিনেতা, ভালো মানুষ ছিলেন।
rasu বলেছেনঃ
লাল সালাম…ফরীদি ভাই
রাফে সাদনান আদেল বলেছেনঃ
আরেকজন ফরিদীর জন্য এই জাতিকে আর কত সহস্র বছর অপেক্ষা করতে হয় তা যদি তার কাছের মানুষরা জানতো, তবে ষাট বছর বয়সী এই অভিনেতাকে বাথরুমে পরে থেকে মরতে হতো না!
মো: মাহ্ মুদুন নবী রনি বলেছেনঃ
সন্মানত্মক ফরিদি ।
ভাই, চাচা, মামা নাকি অন্য কিছু বলব আমার জানা নেই। আমি এ মহান মানুষটিকে ভাই বলেই সন্মধন করব।
এত তাড়াতাড়ি তার চলে যাওয়াটা মেনে নেয়া যায়না।
সেই সংসপ্তক নাটক থেকে তাকে আমার ভাল ভাবে চেনা
অন্যরকম একজন মজার মানুষ ছিলেন তিনি। অভিনয় টা মনে হয় তার রক্তনালী দিয়ে প্রাহিত হত।
এই সময়ের অভিনেতারা কিছু শিখতে পেরেছেন কিনা তা আমার জানা নেই যদি কিছু না নিতে পারেন তবে তা হবে বর্তমান অভিনেতাদের ব্যর্থতা।
ভাইকে মহান আল্লাহ্ তায়ালা বেহেস্ত প্রদান করুক এ কামনাই রইল।
ভাই এর মত এতবড় মহান অভিনেতা আমরা আর কোনদিনও পাব কিনা জানি না………
মানুষটা নি:সঙ্গতার কারনেই হয়তবা এত তাড়াতাড়ি চলে গেল……..
জাহেদ Hossain বলেছেনঃ
যেই মানুষটির অভিনয় দেখে ছোট বেলায় BTV এর প্রতি ভালোবাসা জমমেছিল, জেনেছিলাম নাটক কী, অভিনয় কী, একজন manush তার অভিনয় প্রতিভা দিয়ে কী ভাবে টিবি সেটের সামনে বসা হাজার দর্শক কে জাদুর পরশে মোহময় করে রাখে। তিনি নেয়, মনে হয় লাল-নীল এই জগতে আর কিছুই নেই.
আরিফুর রহমান বলেছেনঃ
হুমায়ুন ফরিদী’র মতো অভিনেতা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর নেই বলে আমার অভিমত।
অসাধারন এই মনটি’র অকাল প্রয়াণে আমি দুঃখিত।
লেখকে অনুরোধ, ‘পতন’ শব্দটি কি ‘নির্বাণ’ শব্দটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
মানে ব্লগটির শিরোনাম: হুমায়ুন ফরিদী: নক্ষত্র-নির্বাণ হলে ভালো শোনাতো। নির্বান মানে নিভে যাওয়া।
বামমু আল আমীন বলেছেনঃ
প্রথমত, নক্ষত্র-পতন শব্দটি বহুল প্রচলিত। মনোভাব প্রকাশ করা যায় সঠিকভাবে। কোন অপূর্ণতা থাকে না।
আবার, একটি নক্ষত্র পড়ে গেলে, খসে পড়লে প্রলয় ঘটে মহাবিশ্বে। এর অধীন গ্রহ-উপগ্রহ সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়। এটি যেখানে আছড়ে পড়ে সেখানে ঘটে ব্যাপক বিপর্যয়। অপূরণীয় ক্ষতি। আর তাই মহাকাশের একটি নক্ষত্র পড়ে যাওয়া আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
তাই ‘নির্বাণ’ এর চেয়ে ‘পতন’ শব্দটি বেশি উপযোগী মনে হচ্ছে আমার কাছে। এবং প্রয়োগও যথার্থ মনে করছি।
ধন্যবাদ, আরিফুর রহমান সাহেব।
jewel বলেছেনঃ
ছোট বেলা থেকে এই লোক টা কে আমি সজ্য করতে পারতাম না। তার কারণ আমার বাবার নাম ছিল রমজান আলী খান। আর তখন কান কাটা রমজানের দুর্দান্ত প্রতাপ। কী যে মেজাজ খারাপ হতো তখন হুমায়ুন ফরিদির উপর কী আর বলব। কিন্তু, যতই বড় হয়েছি ততই তার অভিনয়ের গুনমুগ্ধ হয়েছি। এখন প্রবাস জীবনের শত বাস্ততার মাঝেও পুরানো নাটক যখনই দেখি,তখনই আবার মুগ্ধ হয়ে যাই তার অভিনয় কলাকৌশল দেখে। কী সাবলীল তার অভিনয়। এইতো সেদিন দেখছিলাম হঠাত্ একদিন নাটক টা। উফ্ফ , কী চমত্কার হাসির একটা নাটক। আর কী সাবলীল তার অভিনয়। আপনি যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন। আল্লাহপাক আপনাকে বেহেস্ত নসিব করুক।
Subrata বলেছেনঃ
কিছু কিছু মরন মেনে নেওয়া যায় না, এইটা আমার কাছে সেই রকম মনে হছে।
জাননাত নসিব করুন বিধাতা আপনাকে।
শামীম আশরাফ বলেছেনঃ
আমরা যারা প্রচন্ড ভালবাসি হুমায়ুন ফরিদীকে সে ভালবাসা কি মহান আল্লাহ্তায়ালা দোয়া হিসেবে কবুল করবেন ! তাকে জান্নাত নসীব করুন। আমিন।
রিং বলেছেনঃ
“”পালাবি কোথায়?” বলে ধাওয়া করা হয়েছিলো পর্দায়। আর আজ তিনি আমাদের ছেড়ে কোথায় পালালেন সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। গতবার কোলকাতায় এসেছিলাম যখন তখন হারিয়েছিলাম অভিনেতা তপেন চট্টোপাধ্যায় কে আর এবারে হারালাম আরেক গুনী অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী কে।
আমার ক্ষমতা সীমিত তবে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এই মানুষটার জন্যে দোয়া ও মাগফেরাত কামনা করছি মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে।
gladiator বলেছেনঃ
হুমাউন ফরিদ চলে গেলেন এ দেশের মানুষ আমরা সবাই আনেক আনেক মুললবান একজন মানুষ হারালাম। এ দেশের রাজনিতি বাজ গুলা মারা গেলে মানুষ কখন ও এতো কোষট পাইনা কারন আমরা হুমাউন এর মোতো মানুষকে ভালোবাসি আর রাজনিতি বাজ গুলাকে চরম ঘেননা করি!