প্রসিকিউশনের আবেদন

বামমু আল আমীন
Published : 21 March 2012, 10:35 AM
Updated : 21 March 2012, 10:35 AM

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। সাক্ষীদের আগেই তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষ্যদানের জন্য উপস্থাপনের পর এবার তার কাছে দেয়া ৪৬ জনের লিখিত জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছে প্রসিকিউশন। তাতে বলা হয়েছে, 'তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেয়া সাক্ষীদের মধ্যে যে ৪৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা দুরূহ, সময় সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও আদৌ সম্ভব নয় তদন্ত কর্মকর্তার কাছে থাকা তাদের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা আবশ্যক। '

১৯৭৩-এর ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের ১৯(২) ধারায় প্রসিকিউশনের করা এ আবেদনকে 'ফ্রান্সের গিলোটিনও জংলি' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আসামি পক্ষ। অন্যদিকে প্রসিকিউশন বলছে, বিভিন্ন কারণে সাক্ষী আনা সম্ভব নয়। মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তির জন্য তাই এই আবেদন করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে দু'সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন এ আবেদন উপস্থাপন করে। এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আগামী ২৫শে মার্চ জবাব দেবেন এবং ওইদিন এ বিষয়ে শুনানিও অনুষ্ঠিত হবে। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ৪৬ সাক্ষীর দেয়া জবানবন্দিকে ওই সাক্ষীদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে ওই আবেদনে। এই ৪৬ জন সাক্ষী হলেন- ঊষারানী মালাকার (৭৮), সুখরঞ্জন বালী (৫৭), আশিস কুমার মণ্ডল (৫৪), সুমতি রানী মণ্ডল (৫৮), সমর মিস্ত্রি (৫৭), সুরেশ চন্দ্র মণ্ডল (৭০), গণেশ চন্দ্র সাহা (৪৫), শহিদুল ইসলাম খান সেলিম (৫৫), আইয়ুব আলী হাওলাদার (৬২), গোপাল কৃষ্ণ মণ্ডল (৫৪), বজলুর রহমান (৬১, সিতারা বেগম (৭৫), রানী বেগম (৫২) মো. মোস্তফা (৫০), আবদুল লতিফ হাওলাদার (৬২), অনিল চন্দ্র মণ্ডল (৭৬), অজিত কুমার শীল (৭৫), খলিলুর রহমান শেখ (৫৫), এছাহাক আলী খান (৬১), সৈয়দ শারাফৎ আলী (৪৮), কাদির ব্যাপারি (৮৫), রুহুল আমিন হাওলাদার (৬২), বঙ্কিম সাহা তালুকদার (৭১), মানিক হাওলাদার (৬০), চান মিয়া পশারী (৬০), বিমল চন্দ্র হাওলাদার (৫৯), আবদুল হাকিম (৫৭), গোলাম হোসেন তালুকদার (৬১), রামগোপাল সাহা তালুকদার (৬০), তোজাম্মেল হোসেন (৭২), মো. সদর উদ্দিন (৭২), জাফর ইকবাল (৫৯), সুফিয়া হায়দার ( ৬২), আফরোজা পারভীন (৫৪), মুকুন্দ চক্রবর্তী (৭৫), মেজর জিয়াউদ্দিন (৬১), জ্যোৎস্না বিশ্বাস (৫৪), পুলক চৌধুরী (৫৭), আলী হায়দার খান (৭২), ফসিউল ইসলাম বাচ্চু (৪১), একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক (৫৪), জুয়েল আইচ (৬৩), শাহরিয়ার কবির (৬২), মোখলেস পশারী (৫৬), খন্দকার শহিদুল্লাহ (৬০) ও আইয়ুব আলী বাচ্চু (৬১)।

এদের মধ্যে ঊষারানীর অনুপস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, অসুস্থ, স্মরণশক্তি লোপ ও ভ্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। সুখরঞ্জন সম্পর্কে বলা হয়েছে, আনুমানিক চার মাস আগে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে নিখোঁজ। আশিস, সুমতি ও সমর সম্পর্কে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। জানা যায়, তারা গোপনে ভারতে চলে গেছে। সুরেশ চন্দ্র মণ্ডল থেকে এছাহাক আলী খান সম্পর্কে বলা হয়, আসামি পক্ষের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছে। তাই তারা ভয়ে আত্মগোপন করেছে। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এরা প্রত্যেকেই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী। সৈয়দ শারাফৎ আলী থেকে আইয়ুব আলী তালুকদার সম্পর্কে বলা হয়, এরা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী নয়। তবে তদন্ত কর্মকর্তাকে দেয়া তাদের জবানবন্দিগুলো মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আবেদনে আরও বলা হয়, এই জবানবন্দিগুলো মামলার পারিপার্শ্বিক অবস্থা, আলামত, স্থিরচিত্র ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য। এ কারণে মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। যেসব সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং ট্রাইব্যুনালেও সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই জবানবন্দিগুলোও একই ধরনের। তাই এগুলো সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণে কোন অসুবিধা নেই। তাছাড়া এই সাক্ষীদের ট্রাইব্যুনালে আনা কেবল সময়ক্ষেপণ ও ব্যয়বহুলই হবে। তাদের হাজির করা আদৌ সম্ভব হবে না। আবেদনে আরও জানানো হয়, অনুপস্থিত সাক্ষীদের আনতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা তাদের সম্পর্কে এই তথ্য পেয়েছেন। তাই তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া ওই সব সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ না করলে প্রসিকিউশন ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং ন্যায়বিচারও ব্যাহত হবে। সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, প্রসিকিউশন সাক্ষী হাজির করতে না পেরে এই অদ্ভুত আবেদন নিয়ে এসেছে। এর আগে তারা সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষী হিসেবে এনেছিল। এখন আবার এই আবেদন নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের ১৯ (২) ধারা অনুযায়ী বিচার চলাকালে সাক্ষী মারা গেলে, তাকে আনা ব্যয়বহুল বা অস্বাভাবিক বিলম্বের আশঙ্কা থাকলে এ ধরনের আবেদন করা যায়। কিন্তু ওখানে এমন অনেক সাক্ষী আছেন যার পাশের বাড়ি থেকে এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। তাছাড়া শাহরিয়ার কবিরসহ অনেক সাক্ষী ঢাকায় থাকেন। তাই এই আবেদন গ্রহণ করা হলে তাহলে তো আর জেরার প্রয়োজন থাকে না, তদন্ত রিপোর্ট দেখেই রায় দেয়া যাবে। ডিফেন্সেরও দরকার নেই। তবে প্রসিকিউশন বলেছে, আসামিপক্ষের সন্ত্রাসীরা সাক্ষীদের হুমকি দিচ্ছে। ঊষারানীর স্মৃতি লোপ পেয়েছে। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, তিনজন সাক্ষী আমাদের না বলেই ভারতে চলে গেছে। এসব কারণে আর সাক্ষী হাজির করা সম্ভব নয়। তাই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমরা এই আবেদন করেছি। শাহরিয়ার কবিরসহ অন্যদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা ঘটনার সাক্ষী নন। তারা মূলত ফরমাল সাক্ষী।