ট্রাইব্যুনালের ২ বছর: বিচার শেষ হলোনা একজনেরও

বামমু আল আমীন
Published : 25 March 2012, 03:55 PM
Updated : 25 March 2012, 03:55 PM

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। এই দুই বছরে বিচার শেষ হয়নি একজনেরও। বিচার শেষ করার ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে। বিচার কার্যক্রমে গতি বাড়াতে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলেও 'গতি' কতটুকু বাড়বে, সন্দেহ তা নিয়েও। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। অন্য মামলাগুলোর কার্যক্রম আগামী বছরের শেষার্ধের আগে শেষ হবে না বলে অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। ওদিকে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে। খোদ ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেছে, ঘরে বসে একটি বই থেকে হুবহু তুলে দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তবে বিচার কার্যক্রমে গতি না আসার ক্ষেত্রে জনবল সংকট ও কারিগরি দুর্বলতাকে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরাধের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত অধ্যাপক গোলাম আযমকে বিচারের আওতায় আনাকে অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ সরকার বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ২৮শে মার্চ যাত্রা শুরু করে এই ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু সেই থেকে আজ। দুই বছর হয়েছে পার। একে একে ধরা হয়েছে জামায়াত-বিএনপির বর্তমান ও সাবেক ৮ শীর্ষ নেতাকে। এদের মধ্যে এক জনের বিচার শুরু হয়েছে মাত্র। দেড় বছরেরও বেশি সময় পরে গত ৩রা অক্টোবর সাঈদীর বিচার শুরু হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৬ মাস। বিচার শেষ হয়নি এ মামলার।

তদন্তে গাফিলতি: মামলার তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। তাদের গাফিলতির বিষয়টি খোদ ট্রাইব্যুনালই ধরিয়ে দিয়েছে। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার আলবদর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের সমর্থনে জোরালো কোন তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ নেই তদন্ত প্রতিবেদন বা অভিযোগপত্রে। এ কারণে গত ১৫ই মার্চ খোদ ট্রাইব্যুনাল ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করে। ট্রাইব্যুনাল বলেছে, ১৯৭১ সালের ঘটনায় ২০০৭ সালে প্রকাশিত শাহরিয়ার কবিরের একটি বই থেকে হুবহু তুলে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। কেন ১৯৭২ সালের পত্রিকা পেলেন না? ট্রাইব্যুনাল আরও বলেছে, স্পটে না গিয়ে ঘরে বসে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান প্রসিকিউটরকে বলেন, কী তদন্ত করেছেন আপনারা? এটা কোন চার্জ হলো? পরে ট্রাইব্যুনাল বলে, আসামী আল বদর নেতা ছিলেন এটা আমরা মানতে পারলাম না। একইভাবে কবি মেহেরুন্নেসা হত্যাকান্ডের ঘটনায়ও ২০০৭ সালে প্রকাশিত একটি পত্রিকার কাটিং এবং শাহরিয়ার কবিরের বই থেকে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রেও দেখা যায়, বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অভিযোগই সুনির্দিষ্ট নেই। ১৫টি অভিযোগের মধ্যে মাত্র দ'ুটিকে 'নির্দিষ্ট' বলে মন্তব্য করে ট্রাইব্যুনাল। জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এছাড়া আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণের মত তথ্য-উপাত্ত অভিযোগপত্রে নেই বলে জানা গেছে। ট্রাইব্যুনালে এই আসামীর এক আইনজীবীর সাম্প্রতিক এক মন্তব্যেও বিষয়টির ইঙ্গিত রয়েছে। এই চারটি মামলার তদন্ত করেছেন আবদুর রাজ্জাক খান। এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পরেন নি। প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছেন।

দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল: বিচার কার্যক্রমে গতি বাড়াতে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। প্রথম ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরকে প্রধান করে গত ২২ শে মার্চ তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এর মাধ্যমে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হবে। প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিপরীত পাশে স্থাপিত দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের দৈর্ঘ্য ৪১ এবং প্রস্থ সাড়ে ১৩ ফুট। বিচারকদের এজলাস, আইনজীবীদের বেঞ্চ, বেঞ্চ অফিসারদের বসার স্থান, আসামী ও সাক্ষীর কাঠগড়ার পরে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের অবস্থানের আর জায়গা থাকে না সেখানে। জানা গেছে, প্রথম ট্রাইব্যুনালে চলমান কয়েকটি মামলা এখানে স্থানান্তরিত হবে। এর মধ্যে কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, নিজামী ও আবদুল আলীমের মামলা থাকতে পারে।

সাঈদীর মামলা যে পর্যায়ে: সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী হাজিরে একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রসিকিউশন। এরপরে সাক্ষী আনা আদৌ সম্ভব নয় জানিয়ে গত ২০শে মার্চ প্রসিকিউশন একটি আবেদন করে ট্রাইব্যুনালে। এতে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া ৪৬ সাক্ষীর লিখিত জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার আবেদন করা হয়। এর আগে ৭ই মার্চ সাক্ষী আনতে প্রসিকিউশনকে সর্বশেষ সুযোগ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এদিন বলা হয়, ১৮ই মার্চ সাক্ষী আনতে না পারলে 'যথাযথ আদেশ' দেয়া হবে। ১৮ই মার্চ প্রসিকিউশন তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করে। কিন্তু আসামীর আইনজীবীরা তীব্র আপত্তি জানান। এর প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তার পরে আর সাক্ষী আনা হবে কিনা এ বিষয়টি প্রসিকিউশনকে জানাতে বলে ট্রাইব্যুনাল। এর পরই ২০ শে মার্চের ওই আবেদন করা হয়। সাঈদীর বিরুদ্ধে গত ৭ই ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৯ সাক্ষী জব্দ তালিকার।

অন্য মামলার কি অবস্থা: জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন ও যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১৫টি অভিযোগে অভিযোগ গঠনের যুক্তি তুলে ধরা হয়। এর আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন শেষ করে প্রসিকিউশন। এ মামলায় তার পক্ষে তার আইনজীবীরা ২৭শে মার্চ যুক্তি উপস্থপন করবেন। জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রসিকিউশন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২), ৪(১) ও ৪ (২) ধারায় আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন জানায়। এই আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন না করার পক্ষে তার আইনজীবীরা আজ যুক্তি তুলে ধরেন। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন ৫২ দফা অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছে। গত ১১ই জানুয়ারি গ্রেপ্তারের পর তিনি হাসপাতালের প্রিজন সেলে রয়েছেন। দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। ১১ই মার্চ এই শুনানি শুরু হয়। এর বিরোধীতা করে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা গত ২২ শে মার্চ বক্তব্য রাখেন। আগামী ২৮ শে মার্চও তারা শুনানি করবেন। সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন শেষ করেছে প্রসিকিউশন। গত ১৯শে মার্চ প্রসিকিউশন এ অভিযোগ উত্থাপন করে। এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ শে জুলাই শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে কামারুজ্জামানের নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও পরামর্শে ১২০ পুরুষকে হত্যা এবং ১৭০ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়। অভিযোগ উত্থাপন শেষে এর উপরে যুক্তি উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। আরেক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছে প্রসিকিউশন। গত ১৫ই মার্চ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন শেষ করে প্রসিকিউশন। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ২৭ মার্চ এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে। গত ১৫ই মার্চ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন এই অভিযোগ উপস্থাপন করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে কি না আগামী ২৭ শে মার্চ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন পর্যন্ত আসামীর জামিনের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। ওই দিন তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির থাকতে হবে।
চ্যালেঞ্জ: ট্রাইব্যুনালের এজলাসে বিচারপতি নিজামুল হকের বসার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্ত সাঈদী গত ২৭ শে অক্টোবর একটি আবেদন করেন। অনুরূপ বিচার কার্যক্রমে পূর্বে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে 'পক্ষ' আখ্যায়িত করে বিচার কার্যক্রম থেকে সরে যাওয়ার আবেদন করা হয় তাতে। বিচারপতি নিজামুল হকের অনুপস্থিতে দুই সদস্যের বেঞ্চ শুনানি শেষে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিচারকের সুবিবেচনার উপরে ছেড়ে দেয়। তবে এই রায়ের পরে বিচারপতি নিজামুল হক ট্রাইব্যুনালে বসেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ট্রাইব্যুনালে আসন গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের ১১ই জুলাই হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়। ২৭ শে জুলাই আসামীপক্ষের এ আবেদনটি আদালত খারিজ করে দেয়। বিদেশী আইনজীবীদের শুনানিতে অংশগ্রহণ, বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারসহ বেশকিছু আবেদনও খারিজ হয় ট্রাইব্যুনালে। প্রসিকিউশন এসব আবেদনকে বিচার বিলম্বিত করার প্রয়াস হিসেবে মন্তব্য করে। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ফোনে বলেন, দুই বছরে আমাদের অর্জন যথার্থ। এ পর্যায়ে এসে আমরা খুশি। আরেকটি ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজন ছিল, তাও হয়েছে। আমাদের কাজ ছিল অভিযোগকে ট্রাইব্যুনালের কাছে নিয়ে আসা, ট্রাইব্যুনালের কাজ ছিল সেগুলো আইনী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। এই উভয় পক্ষই তা করেছে। দুই বছরে একজনের বিচারও শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি বিচার তিন মাসেও শেষ হতে পারে, আবার ছয় মাসেও শেষ হতে পারে। অপরাধের প্রকৃতি দেখতে হবে। আমরা ৪০ বছর আগের ঘটনার অভিযোগ নিয়ে এসেছি। তিনি আশা করেন, সাঈদীর বিচার প্রক্রিয়া এ বছরেই শেষ হবে। আর অন্যগুলো থেকে কয়েকটি মামলা শেষ হবে আগামী বছরের মধ্যে। আসামীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা ন্যায় বিচার চাই। তবে এ পর্যন্ত বলে তিনি ফোন রেখে দেন। তার সঙ্গে ফোনে আবারো যোগাযোগ করা হলে তিনি আর ফোন ধরেন নি।

এখনো যত সংকট: জনবল সংকট ও কারিগরি দুর্বলতাসহ দক্ষ, যোগ্য প্রসিকিউটর ও অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এ পর্যন্ত মাত্র ৮ জনকে গ্রেপ্তার এবং এদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণই প্রসিকিউশনের ২ বছরের অর্জন। অন্য মামলাগুলো অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায়। প্রসিকিউশনে এমন অনেক আইনজীবী রয়েছেন যাদের ভাল আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি নেই সুপ্রিম কোর্টে। ট্রাইব্যুনালে ডিফেন্স টিমের মোকাবেলায় প্রায়ই হিমশিম খান এরা। প্রসিকিউশনে রয়েছে সমন্বয়হীনতাও। প্রায়ই এক প্রসিকিউটর প্রটোকল এড়িয়ে মিডিয়ায় ব্রিফ করছেন। নিজেকে জাহির করে তার এই 'ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া'র প্রবণতা অন্যদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। স্থানসংকটের কারণে তদন্ত সংস্থার কার্যালয় বেইলি রোডে স্থানান্তরিত হয়েছে। সেখানে জনবল সংকট, অবকাঠামো সমস্যা, তদন্ত কালে কর্মকর্তাদের গাড়ির সমস্যা, লাইব্রেরি সংকট, পত্রিকা কাটিংয়ের ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। সাক্ষীদের আজীবন নিরাপত্তা ও ভরণপোষণে সাক্ষী সুরক্ষা আইন করা হলেও তদন্ত কর্মকর্তাদের সুরক্ষায় এমন ধরণের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনালে পর্যাপ্ত বই-পুস্তক, প্রকাশনা এমনকি পাঠকক্ষও নেই। গ্রন্থাগারিক তো নেইই। নথিপত্র সংরক্ষণে একটি রেকর্ড রুম থাকলেও নেই কোন রেকর্ড রক্ষক। স্টাফ পরিচালনার জন্য নেই একজন নাজির। ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশন বা অভিযুক্তদের প্রতি যেসব নোটিশ জারি করে, তা পৌঁছানোর একজন জারিকারকও নেই। একটি আইটি কক্ষ থাকলেও সেখানে আনুসঙ্গিক কোন সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি নেই বললেই চলে। এই ট্রাইব্যুনালে একজন হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নেই। এমনকি নেই একজন রেজিস্ট্রার এবং মুখপাত্রও। সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে কেউ নেই। একারণে পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়েই হিসাব রক্ষণ ও সিসি ক্যামেরা মনিটিরিংয়ের কাজ করানো হয়। ট্রাইব্যুনাল পরিচালনার উপযোগী ও অভিজ্ঞ স্টাফেরও রয়েছে অভাব। ডেপুটি রেজিষ্ট্রার মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ এখনো সরকারি বাসা পাননি। তিনি লোকাল গাড়িতে ঝুঁকির মধ্যে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। গাড়ি প্রত্যাহারের কারণে অনেক প্রসিকিউটর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে যাতায়াত করছেন। এসব অপ্রতুলতা ও সংকটের কারণে ট্রাইব্যুনালের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির মানবজমিনকে বলেন, দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনকে স্বাগত জানাই। তবে ট্রাইব্যুনালের জনবল ও কারিগরিসহ বিভিন্ন সংকটগুলো সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, বিচার শেষ করা নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে এখনই প্রশ্ন তুলতে চাই না। তবে সেই প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে উঠছে।

ট্রাইব্যুনাল, প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা: বর্তমানে প্রথম ট্রাইব্যুনালে রয়েছেন বিচারপতি নিজামুল হক বিচারপতি আনোয়ারুল হক ও বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ। একটি ট্রাইব্যুনাল হওয়ার কারণে এতদিন কর্মব্যস্ত দিন গেছে এর সদস্যদের। গঠিত হওয়ার পর থেকে তদন্ত সংস্থা তদন্ত কার্যক্রমে মাঠে নেমেছে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন কর্মকর্তারা। বর্তমানে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৪০০ অভিযোগ রয়েছে। এগুলো থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।

বিশ্ব পর্যবেক্ষক ও সংগঠন: বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমের প্রতি শুরু থেকেই দৃষ্টি রাখছে বিশ্ব সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংগঠন ও পর্যবেক্ষকমহল। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নরওয়েসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও প্রসিকিউটরদের সাথে বিচার কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক ও বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে র‌্যাপ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মহাসচিব ইয়ান মার্টিন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুগোস্লাভিয়া এবং বসনিয়া হারজেগোভিনার যুদ্ধাপরাধ আইনের কার্যনির্বাহী প্রধান টবি ক্যাডম্যান, ইউনিভার্সিটি অব অসলো ও নরওয়েজিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের নাম উল্লেখ করা যায়।