যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০: ইতিহাস আর রেকর্ডে ভরপুর

Published : 2 Feb 2012, 03:44 AM
Updated : 14 Nov 2020, 05:08 PM

বাংলাদেশের পরে যে দেশের নির্বাচন আমি আগ্রহের সাথে নিরীক্ষণ করি সেটা হল যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৮ সালে বারাক হুসেইন ওবামা যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তখন একটা মজার ব্যাপার ঘটেছিল। ভোটের আগের দিন আমি আমার বসকে জানলাম ভোটের পরদিন আমি কাজ করতে পারবো না। আমার ছুটি চাই একদিনের, ছুটি পেয়ে গেলাম। আমার বসের তিন-চার বছর বয়সের ছোট ছেলেটা তখন আমার কাছে ছিল। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, "কাল তুমি কাজ করবে না কেন?" আমি তাকে মজা করে বললাম যে, "আমার ভাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এইজন্য আমি কালকে ভোটের ফলাফল দেখতে ব্যস্ত থাকব। সেজন্যই আসতে পারবো না।"

এরপর যেদিন কাজে গেলাম আমার বস জানালো, "লীপু আমার ছেলে তোকে অভিনন্দন জানিয়েছে। তোর ভাই বারাক ওবামা ভোটে জিতেছে বলে।" আমরা সবাই হাসাহাসি শুরু করলাম। আমার বসের ছেলে সত্যিই ধরে নিয়েছিল বারাক ওবামা আমার ভাই।

এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ওবামার জয় প্রায় নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন চমক দেখাতে পারেননি। আসলে আমেরিকানরা একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। যদিও হিলারি ক্লিনটন প্রার্থীদের সামনা-সামনি বিতর্কে খুব ভাল করেছিলেন। কিন্তু রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছিল বারবার। কিন্তু হিলারি কখনো সে পথে যাননি। এমন কি দ্বিতীয় ডুয়েলে প্রার্থীরা হাতও মেলাননি। এ নিয়ে সে সময় কথা উঠেছিল। তখন থেকেই ট্রাম্প আমেরিকাকে দ্বিধা-বিভক্ত করার কাজে লিপ্ত হয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন। ট্রাম্প ডুয়েলের মধ্যে, হিলারিকে 'ন্যাস্টি লেডি' বলে গাল দিয়েছিলেন। যা খুবই অশোভন ছিল। এ জাতীয় আচরণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থীদের মানায় না। ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটন বিতর্ক মারাত্মক তিক্ত পর্যায়ে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শেষে তাদেরকে বলেছিলেন, "আপনারা একজন আরেকজনের খারাপ দিকগুলো অনেক তুলে ধরেছেন, পরিশেষে যদি একজন আরেকজনের ভাল একটা দিক তুলে ধরেন।"

উত্তরে ট্রাম্প বলেছিল, "সে (হিলারি) কখনো হার মানে না।" আর হিলারি ক্লিনটন বলেছিলেন, "তার চমৎকার কয়েকটা সন্তান আছে।" ট্রাম্পের কথা হয়তো ঠিক ছিল তিনি কখনও সহজে হার মানেননি। জীবনে সবকিছুর শেষ পর্যন্ত দেখেছেন। কিন্তু হিলারি যা বলেছিলেন তা সত্য প্রমাণিত হয়নি। ট্রাম্পের সন্তানরা তাদের পরবর্তী কার্যকলাপে তা প্রমাণ করতে পারেননি।

এবারের আমেরিকার নির্বাচন শুধু আমেরিকা না সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। গত চার বছরে ট্রাম্পের দুঃশাসনে শুধু আমেরিকা না সারাবিশ্ব হাঁপিয়ে উঠেছিল। শুধু এই লোকের দুঃশাসন না তার আচার-আচরণ, অঙ্গভঙ্গি সবকিছু ছিল অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ। সীমাহীন ঔদ্ধত্য ছিল এই লোকটার মধ্যে। আয়কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন দুর্নীতি আর অনৈতিকতার সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিল। একের পর এক যৌন নিপীড়ণের মামলা হয়েছে তার নামে। অনেক মামলা তিনি টাকা দিয়ে দফা রফা করেছেন। তার পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। চীনের পণ্যের উপর সে অতিরিক্ত আয়কর বসিয়েছে। তার প্রতিক্রিয়ায় চীন যখন পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে তখন ট্রাম্পের কাছে সেটা অনৈতিক মনে হয়েছে। মোটকথা বিশ্ব মানুক না মানুক সে একা একাই বিশ্ব মাতবরী হাতে নিয়ে নিয়েছে। আর যা খুশি তাই করেছে। দাম বেশি বিধায় নিজে আমেরিকার তৈরি স্টিল বর্জন করে চীন থেকে কিনেছেন। তার মেয়ের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কম দামে জামা কিনে অত্যন্ত উচ্চ দামে বিক্রি করেছে। অথচ জনগণের কাছে মিথ্যা বুলি আওড়েছে আমেরিকা ফার্স্ট। বিশ্বের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসম্মান করে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিক্ষিত ইউরোপিয়ান মিত্রদের অসম্মান করে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। হাজারো, লাখো অভিযোগ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনগণের।

ট্রাম্প শুধু যুক্তরাষ্ট্রকেই দ্বিধাবিভক্ত করেননি পুরো বিশ্বকেও দ্বিধা বিভক্ত করেছেন। ধর্ম ও বর্ণের নামে। মেলানিয়া ট্রাম্প তার স্বামীর মতই। নির্বাচনের আগে সে সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার বক্তব্যের নির্লজ্জ অনুকরণ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। ট্রাম্প পরিবারের লজ্জা বলতে আসলে কিছু নেই। এই নির্লজ্জদের হাতে যুক্তরাষ্ট্র সহ সারা বিশ্ব ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে উঠেছিল। ট্রাম্পের কমন সেন্স দেখে চিকিৎসকসহ সারা বিশ্ব হেসেছে। তিনি চিকিৎসকদের রোগীর শরীরে 'জীবাণুনাশক ঢুকিয়ে' করোনাভাইরাস চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিল।

সারাবিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারিতে পর্যুদস্ত- বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ঠিক এরকম এক ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের নির্বাচন হয়েছে। এই কারণেই এ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমেরিকার নির্বাচনের জটিল নিয়মের কারণে হিলারি ক্লিনটন জনপ্রিয়তার নিরিখে অনেক উপরে থেকেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেননি। যেমনটা ঘটেছিল ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে। তারা বিএনপি-র চেয়ে ১০ শতাংশ এর বেশি ভোট পেয়েও সংসদে আসন কম পাওয়ার কারণে সরকার গঠন করতে পারেনি।

২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ট্রাম্প শিবির হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করেছিল বিভিন্ন দুর্নীতির। ট্রাম্প অনেক হম্বিতম্বি করেছিল সে নির্বাচিত হলে হিলারি ক্লিনটনকে জেলে পাঠাবেন। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি গত চার বছরে। তবে হিলারি ক্লিনটনের কিছু ভুল বা দোষ ছিল। বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত উচ্চ হারে সুদ আদায়কারী ব্যবসায়ীর সাথে তার অনৈতিক যোগাযোগ ছিল। তার কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছেন এবং তাকে সুবিধা দিয়েছেন।

২০২০ সালের নির্বাচন ছিল এক লাগামহীন পাগলা ঘোড়াকে থামানোর। আমেরিকানরাই সারাবিশ্বের নাভিশ্বাস উঠেছিল এই ঘোড়ার আচরণে। এই নির্বাচনে অনেকগুলো রেকর্ড তৈরি হয়েছে-

১. যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পড়েছে।

২. নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে জিতেছেন যা এর আগে কোন রাষ্ট্রপতি পাননি।

৩. একজন নারী যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মহিলা উপ-রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। যিনি আবার বর্ণে সাদা নন। আধা ভারতীয় ও আধা ক্যারিবিক।

৪. হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে।

৫. রেকর্ড পরিমাণ মানুষ ডাক যোগে ভোট দিয়েছে, যা এর আগে ঘটেনি।

৬. পরাজিত প্রার্থী হারলেও রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়েছে। যে পরিমাণ ভোট অতীতে কোন জয়ী প্রার্থীও পাননি।

৭. ভোট গণনায় এত দীর্ঘ সময় নিকট অতীতে প্রয়োজন হয়নি।

এই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ একজন অত্যন্ত ভদ্র, মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষকে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে। কিন্তু জাতি হিসেবে তাদের দৈন্যতা ঘোচাতে পারেনি।

ট্রাম্পের সব কিছুই ছিল লোক দেখানো। সে যখন কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে কোনও বাচ্চাকে কোলে নিয়েছে সেখানে কোন আন্তরিকতার ছোঁয়া দেখা যায়নি। এমনকি যখন সে তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের সাথে কোন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে সেখানেও কেমন যেন একটা সাজানো ভাব লক্ষ্য করা গেছে। ট্রাম্প যে তার সন্তানদের খুব আন্তরিকভাবে আলিঙ্গন করেছে তাও চোখে পড়েনি। এখন যে সব খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বেরিয়ে আসছে তাতে মেলানিয়া ট্রাম্প যে একজন অর্থ এবং ক্ষমতা লোভী নারী, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে বিয়ে করেছে ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক।

ইন্ডিপেনডেন্ট লিখেছে, "এখন মেলানিয়া ট্রাম্প তার ১৪ বছর বয়সী সন্তান ব্যারনের ভবিষ্যৎ ও আর্থিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচার ও ক্ষমতা গ্রহণের শুরুর দিকে মেলানিয়া অনুরাগী ছিল। ফার্স্ট লেডি হিসেবে ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটানো শুরুর পর দ্রুতই এই ভাবমূর্তিতে চিড় ধরে। বিশেষত যখন সে স্লোভেনিয়ায় নিজের জন্মশহরের খুশিতে উদ্বেল মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে।"

মেলানিয়ার এসব কাণ্ডকীর্তির সাথে আরেকটি ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়।  ২০১২ সালে জার্মানির রাষ্ট্রপতি ক্রিশ্চিয়ান ভুলফকে দুর্নীতির জন্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়েছিল। তখন তার স্ত্রী বলেছিল, "সে ক্রিশ্চিয়ান ভুলফের দুর্নীতির দায় নেবে না।" অথচ অবৈধভাবে অবকাশ যাপনের দায়সহ অন্যান্য দুর্নীতিগুলোর অধিকাংশ ছিল তার স্ত্রী বেটিনা ভুলফের। কিন্তু এই নারী সব দায় তার স্বামীর উপর চাপিয়ে সাময়িক আলাদা ছিল স্বামী কাছ থেকে। তারপর যখন সাবেক রাষ্ট্রপতি আদালত থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হল, তখন এই নির্লজ্জ নারী স্বামীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হল।

সার্বিক বিবেচনায় এবারের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন আমাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল। মনে প্রাণে চেয়েছিলাম এই উগ্র, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিকারী, বর্ণবাদী লোকটার বিদায় হোক। তাই তেসরা নভেম্বর থেকে জো বাইডেনের বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ সময় সিএনএন দেখেছি। যা আমার জার্মানির প্রবাস জীবনে ঘটেনি। ঘুম থেকে উঠেই আমি সিএনএন-এ চোখ রেখেছি আর সেখান থেকেই ঘুমাতে গেছি। যখন সিএনএন এর রাজনৈতিক ভাষ্যকার ভ্যান জোন্স আনন্দ অশ্রু ও অত্যন্ত আবেগের সাথে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন, "Well it's easier to be a parent this morning. It's easier to be a dad this morning. It's easier to tell your kids, 'Character matters, being a good person matters." সেটা ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমার এগার বছর বয়স্ক মেয়েকে যখন খবরটা দিলাম, জো বাইডেন আমেরিকার নতুন রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন তখন সে খুব খুশি হয়ে বললো, "বাবা ট্রাম্পকে কেউ জার্মানিতে পছন্দ করে না, তার উগ্র আচরণের জন্য।"

যুক্তরাষ্ট্রে এমন একজন রাষ্ট্রপতি ছিল বা এখনও আছে যার দোষ বলে শেষ করা যাবে না। আর এমন একজন ব্যক্তি নির্বাচিত হলেন যার গুণ বলে শেষ করা যাবে না। যার কারণেই বোধ হয় ভ্যান জোন্স অতটা গভীর আবেগের সঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জোসেফ রবিনেট বাইডেন আমলাতন্ত্রের বেড়াজাল ও গত চার বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করে রাতারাতি কোন পরিবর্তন সাধন করতে পারবেন না।

তবে নিঃসন্দেহে তিনি চেষ্টা করবেন জনকল্যাণে কাজ করতে। বিশ্ব রাজনীতির রাতারাতি কোন পরিবর্তন হবে না এটা নিশ্চিত। কিন্তু যে ক্ষতিকর অবস্থার মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছিল সেটাতে তিনি নিশ্চিতভাবেই লাগাম টানবেন। তার অতীত কার্যকলাপ তাই-ই বলে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জার্মানির কিছু বিশিষ্ট রাজনীতিবিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল নির্বাচনের ভোট গণনা কালীন। জার্মান রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে বলেছেন, "যেই নির্বাচিত হোক না কেন তার সাথেই আমরা কাজ করবো।" কিন্তু তাদের মধ্যে একজন বাইডেনের ভূয়সী প্রশংসা করে বললেন, " আমি মিউনিখ সম্মেলনে বাইডেনের সাথে কাজ করেছি। তিনি চমৎকার মানুষ তার সাথে কাজ করতে আমরা ভবিষ্যতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবো।"

সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা যখন তাকে সর্বোচ্চ বেসামরিক জাতীয় পুরস্কার রাষ্ট্রপতির মেডেল অফ ফ্রিডম প্রদান করেন, তখন যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেখান থেকেই বোঝা যায় কেমন মানুষ জো বাইডেন। নির্বাচনের আগে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর সাথে তার কথকপথনের একটা ভিডিও ক্লিপ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। সেখান থেকেই অনুমান করা যায় মানুষ হিসাবে তিনি কতটা বড় মাপের। জো বাইডেন আইনে ডক্টরেট করেন। তিনি সর্বকনিষ্ঠ সিনেটরদের মধ্যে একজন। দীর্ঘ সময় তার রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বয়সে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তিনি ট্রাম্পের মত জেতার আগেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেননি। শান্ত থেকেছেন এবং শেষ ব্যালট পর্যন্ত গণনা করতে হবে সে দাবি জানিয়েছেন।

তার বক্তব্যে তিনি বলেছেন, "আমি এখানে আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করতে আসিনি। তবে ভোটের ফল যেদিকে যাচ্ছে তাতে আমরা জয়ী হব।" জো বাইডেন ক্যান্সার নির্মূলে কাজ করেছেন। তিনি নারী অধিকার নিয়ে সচেতন ছিলেন। তিনি পরিবেশ সচেতন এবং কথা দিয়েছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আবার ফিরে যাবেন। এই একটা কাজের কারণেই একজন পরিবেশ সচেতন মানুষ হিসেবে তার বিজয় আমার কাছে অর্থবহ। তিনি নারীর প্রতি আন্তরিক বিধায় একজন নারীকে তার রানিংমেইট হিসেবে বেছে নিয়ে সে প্রমাণ রেখেছেন। তাও আবার সে নারী শ্বেতাঙ্গ না। যার কারণে আবার নির্বাচনে ইতিহাসের পর ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে।

জো বাইডেন নির্বাচনের দিন রাস্তায় ছিলেন দীর্ঘ সময়। সেখানে তিনি সকল মানুষের সাথে আন্তরিকতার সাথে কথা বলেছেন। তার নাতনীকে কাছে নিয়েছেন এসবের মধ্যে ট্রাম্পের মত কৃত্রিমতা ছিল না। ট্রাম্পের উপ-রাষ্ট্রপতি মাইক পেন্সকেও তার সামনে কখনও সহজ সাবলীল দেখা যায়নি। কেমন যেন একটা প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক। কিন্তু জো বাইডেন ও কমলার ক্ষেত্রে সেটা পুরো ভিন্ন। সেটার প্রমাণ মেলে কমলা হ্যারিস যখন বাইডেনকে ফোন করলেন নির্বাচনের বিজয়ের খবর দিয়ে। বারাক ওবামাও তার উপ-রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকে বন্ধুর মত জানতেন।

জো বাইডেনের বর্তমান স্ত্রী জিল ট্রেসি বাইডেনও চমৎকার মহিলা, তিনি একজন শিক্ষিকা। সেকেন্ড লেডি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও তিনি শিক্ষকতা চালিয়ে গেছেন। জিল বাইডেনও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি তার ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা ও মাতৃত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষত সারাতে নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দুর্ঘটনায় তার প্রথম স্ত্রী ও এক বাচ্চার মৃত্যুর পর আহত দুই বাচ্চাকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তখন তিনি সন্তানদের যত্ন নেবার জন্য সিনেটর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। তবে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মাইক ম্যানসফিল্ড তাকে পদত্যাগ না করতে রাজি করিয়েছিলেন। আর তাই হয়তো যুক্তরাষ্ট্র একজন ভাল রাষ্ট্রপতি পেল। আর বিশ্ব আজ একজন ভাল নেতা পেল। তিনি যেমন বলেছেন, তার কাছে নীল রাষ্ট্র না, লাল রাষ্ট্র না, তার কাছে একটা রাষ্ট্র, আর সেটা হল যুক্তরাষ্ট্র।

আমরা আশা করবো এই মহতী নেতার কাছে তিনি শুধু আমেরিকান ব্লক না, সব ব্লককে সমান চোখে দেখে বিশ্ব শান্তিকে এগিয়ে নেবেন। ইহুদি, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা হিন্দু বিবেচনায় না, ধর্ম নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে বিশ্ব শান্তিকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। তিনি অস্ত্র প্রতিযোগিতার চেয়ে মানুষের স্বাস্থ্য বীমা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান করবেন।