হজ্জ যাত্রী পাঠানোর নামে এজেন্সিগুলোর রোহিঙ্গা এবং আদম পাচার

বাংগাল
Published : 19 August 2012, 06:11 AM
Updated : 19 August 2012, 06:11 AM

গত ১৬ই আগস্ট বিডিনিউজ ২৪.কম এর জেষ্ঠ প্রতিবেদক মহসিনুল করিমের হজ্জ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তথ্যবহুল প্রতিবেদনটি কয়েকবার পড়ে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লেখার তাগিদ অনুভব করছি ।

কয়েকটি হজ্জ এজেন্সি সৌদি সরকারের কাল তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রায় তিন হাজার হজ্জ যাত্রীর কাছ থেকে হজ্জের টাকা নিয়েও তাদের হজ্জে পাঠাতে পারছেনা।

"" হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সংগঠনের নেতারা বলেছেন, সরকারের উচিৎ কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সৌদি কর্তৃপক্ষের এই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। তবে সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

হজ প্যাকেজ না মানা এবং সৌদি আরবে অতিরিক্ত সময় থাকার অভিযোগে গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের ১২টি এজেন্সির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। নিবন্ধিত এসব প্রতিষ্ঠান এবার সাড়ে তিন হাজার হজযাত্রীর কাছ থেকে মোয়াল্লেম ফি জমা নিয়েছে।""….এই অংশটি প্রতিবেদন থেকে কপি পেস্ট করা হল । …..এখানে অতিরিক্ত সময় অবস্থান মানে অনির্দিষ্টকাল অবস্থান করা । হাবের নেতারা সরকারের কোন কাজ করা উচিত এই নসিহত করেছেন কিন্তু হজ্জ ব্যবসার আড়ালে আদম পাচারের ব্যবসা বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে যারা করছেন তাদের নসিহত করেননি । হাবের সর্বোচ্চ দুইটি পদ বহুদিন থেকে দখলে রাখা অন্তত একজনের এজেন্সির মাধ্যমেও চলছে এই আদম পাচারের ব্যবসা ।

২০১০ সালে পবিত্র হজ্জ পালন করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরবো। হাবের পদস্থ কর্মকর্তার এক এজেন্সি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলাম । প্রত্যেক হজ্জের আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে হজ্জ পোর্টালের মাধ্যমে নির্বাচিত (পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া ) হজ্জ যাত্রীদের ছবি সহ নাম প্রকাশ করা হয় । হজ্জ যাত্রীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর দেখা যায় মোট ২০৫ জন হজ্জযাত্রী এই এজেন্সির মাধ্যমে হজ্জে যাবে । এই তালিকাটি ২০১১ সালের হজ্জ কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত বহাল ছিল । হজ্জ পোর্টালের দ্বারা জানা যায় কোন হজ্জযাত্রী কবে কোন ফ্লাইটে জেদ্দাহ পৌছে।

আমি সৌদি আরবে অবস্থান করার সময় হজ্জের আগের দিন পর্যন্ত হজ্জ পোর্টালে দেখেছি এই এজেন্সির সকলেই জেদ্দাহ পৌছেছে । উল্লেখিত এজেন্সির হজ্জযাত্রীদের তত্ত্বাবধানের জন্য একজন "হাফেজ সাহেব" আমাদের সঙ্গে ছিলেন । আমি একদিন তাকে প্রশ্ন করলাম ,আপনার এজেন্সি থেকে ২০৫ জন হজ্জ যাত্রী মক্কায় পৌছেছে কিন্তু আমরা ১৫১ জন একসঙ্গে অবস্থান করছি বাকি ৫৪ জন কোথায় আছেন ? নিখোঁজ ৫৪ জন কেউই ৩০ এর বেশি বয়সের নয় এবং ওদের ঠিকানা দেখে বুঝলাম সবাই কক্সবাজার, উখিয়া ,টেকনাফ , পটিয়া এলাকার । তাহলে চট্টগ্রাম এ এত হজ্জ এজেন্সি থাকতে ওরা মতিঝিলের এজেন্সিতে কেন এল? তিনি আমাকে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান । আরো মজার কথা হল আমরা হজ্জ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত আরো গোটা বিশেক যুবা বয়সী হাজীকে হারিয়ে ফেলি। এজেন্সি গুলো এভাবে প্রত্যেক হজ্জ মৌসুমে অগণিত রোহিঙ্গা এবং হারিয়ে যাওয়া হাজী সৌদি আরবে পাচার করছে । সব ঝামেলা হাবের সদস্যরা তৈরি করে বলতে থাকে সরকার কেন কূটনৈতিক মাধ্যমে সমাধান করেনা ।

আরো অভিজ্ঞতা হয়েছে হজ্জ সম্পন্ন হওয়ার চার দিনের মাথায় এজেন্সির লোক আমদের ফেলে রেখে ঢাকায় পালিয়ে আসে । সৌদি বাড়ীওয়ালা আমাদের হুমকি দেয় যদি তিন দিনের মধ্যে তোমাদের নেতাকে হাজির না কর পুলিশ দিয়ে তোমাদের বের করে দিব, উপায় না দেখে আমি কয়েকজন সাথী নিয়ে মক্কাস্থ হজ্জ মিশনে আসি অভিযোগ দিতে , কিন্তু হায় , যার কাছে অভিযোগ দিব তিনি তো আমাদের এজেন্সির নেতা মালিক ! আমাদের নানাভাবে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন , অভিযোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য । শেষে হজ্জ মিশনের অপর কর্মকর্তার চেষ্টায় আমরা অন্য একটি হোটেলে যায়গা পাই , কিন্তু সে সময় প্রায় তিন হাজার হাজী মক্কায় আবাসবিহিন অবস্থায় ছিলেন ,যা সাংবাদিক কেরামতুল্লাহ বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল গুলো রিপোর্ট করেছিল । এই হলো হাব নেতা এবং এজেন্সি মালিকদের অপকর্মের ছোট একটা নমুনা । এরা মক্কাস্থ হজ্জ মিশনে নেতার আসনে বসে বিপন্ন বয়স্ক হাজীদের সাথে দুর্ব্যবহার করতেও লজ্জা পায়না ।

হজ্জের আগে একদিন জবল এ রাহমাত , আরাফাত , মীনা ,মুজদালিফা ভ্রমণে গিয়ে কিছু বরিশালবাসী যুবার সঙ্গে দেখা হয় ,তাদের কেউ কেউ নিজেকে ধর্মমন্ত্রীর ভাই -ভাতিজা ,চাচাতো ভাই পরিচয় দিয়ে নিজেদের ভিজিটিং কার্ড আমাকে দেয় এবং জানায় তারা হজ্জ মিশনের সদস্য হিসেবে ঢাকা থেকে এসেছেন । কোনও রকম সমস্যা হলে শুধু একটা ফোন ই যথেষ্ট । বাড়ি সংক্রান্ত ঝামেলায় পড়ার পর তাদের একজনকে ফোন করলে বলেন হজ্জ মিশনে গিয়ে আমার নাম বলবেন । ওনার নাম বলেছিলাম ,জবাবে হাবের বিশিষ্ট নেতা বলেন আরে উনিতো লঞ্চ রিজার্ভ করে ওদের হজ্জ মিশনের সদস্য বানিয়ে মক্কায় নিয়ে এসেছেন , দেখেন কাজের সময় একটাকে খুজে পান কিনা ।

প্রতিবেদক মহসিনুল করিম যথা সময়ে বিষয়টি সকলের নজরে এনেছেন । আরো বিস্তারিত অনুসন্ধান করে এজেন্সি মালিকদের দুষ্টচক্র এবং রোহিঙ্গা পাচারের বিষয়টি খোলাসা করলে হজ্জ যাত্রীরা কিছুটা হলেও প্রতারকদের ব্যপারে সাবধান হতে পারবে ।

রোহিঙ্গা এবং আদম পাচারের পুরো প্রক্রিয়ার সাথে পুলিশের একটি অংশ সরাসরি জড়িত আছে , এ ব্যপারে সরকার সজাগ হলে আদম পাচারের বদনাম ঘুচানোর পথে দেশের গ্রাফ উর্ধ্বমুখী হবে ।