ঢাকায় ভ্যাটিকান সিটি

বাংগাল
Published : 7 Feb 2013, 07:29 PM
Updated : 7 Feb 2013, 07:29 PM

ইতালির রাজধানী রোমের কেন্দ্রস্থলে একটি আলাদা দেশ আছে আপনারা সবাই জানেন, ভাটিকান। দেশটির রাজধানীর নাম ভ্যাটিকান সিটি । ঢাকায়ও একটি ভ্যাটিকান সিটি আছে অনেকেই জানেনা, জানে শুধু ভুক্তভোগী জন।

কোনও বিদেশী নাগরিক ভ্যটিকান সিটি ভ্রমণ করতে চাইলে তাকে ইতালির ভিসা ছাড়াও আলাদা করে ভ্যাটিকানের ভিসা নিয়ে ভ্যাটিকান সিটির বর্ডার পোস্টে হাজির হতে হবে । অবগতির জন্য জানাচ্ছি বারিধারায় ভ্যাটিকানের দূতাবাস আছে,কেউ ভ্রমণ করতে চাইলে ভিসা সংগ্রহ করে নিবেন ।

এবার বলি আসল কথা , রোমের ভ্যাটিকান ভিসা সংগ্রহ করা যতটা সহজ হবে ঢাকার ভ্যাটিকানে প্রবেশ করতে চাইলে " ভিসা " সংগ্রহ করা কিন্তু তত সহজ নয় । অনেকেই হয়ত এতক্ষনে জানতে উদগ্রীব হয়ে আছেন ঢাকায় আবার ভ্যাটিকান আসল কোত্থেকে ? হ্যাঁ ভাই আছে , ঢাকার জিগাতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে আনুমানিক ১০০ মিটার দক্ষিণে এবং সীমান্ত স্কয়ার সংলগ্ন দেখা যায় সুদৃশ্য তিনটি ফটক । এ ই হলো ঢাকার ভ্যাটিকানের প্রধান বর্ডার পোস্ট । নিশ্চয়ই আপনারা এতক্ষণে চিনেছেন, হ্যাঁ ঠিক …।

"বিজিবি " জ্বী ভাই, আমি বিজিবি সদর দফতরের কথাই বলছি । এবার আমি খুলে লিখতে চাই কেন বিজিবি সদর দফতরকে আমি ভ্যাটিকান সিটির সঙ্গে তুলনা করেছি । গোস্তাখী মাফ করবেন ।

বিজিবি সদর দফতরের ভিতর দীর্ঘদিন যাবত চারটি স্বনামধন্য বিদ্যালয় আছে , যাতে শুধু বিজিবির সদস্যদের সন্তানরাই পড়েনা, অ-বিজিবি বা যাকে কেতা ভাষায় সিভিল বলা হয় (সিভিলাইজড ?) তাদের সন্তানও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী । এই অ-বিজিবি সিভিল শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক হাজার । বিদ্যালয় গুলোতে প্লে গ্রুপ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয় । এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা নেয়ার কাজটি অভিভাবকরাই করে থাকেন ।

কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় এই অভিভাবকদের বিড়ম্বনা দেখার বা শোনার কেউ নেই । প্রত্যেক বছর শুরুতে ২/৩ মাস এই বিড়ম্বনা চরম আকার ধারণ করে , যেহেতু অভিভাবকদের কথা কেউ শুনতে চায়না , বছরের বাকি মাস গুলো তারা মনোকষ্ট নিয়েই চুপ করে থাকেন । এভাবেই চলছে বছরের পর বছর । অনেক শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত গাড়িতে বিদ্যালয়ে আসে , গাড়ি বিজিবি সদর দফতরে প্রবেশ করার জন্য স্টিকার সংগ্রহ করতে হয় , গাড়ি এবং গাড়ির মালিকের যাবতীয় তথ্যাদি জমা দিয়ে ২০ দিন থেকে ২ মাস অপেক্ষা করতে হয় , সাথে গাড়ির চালক , এবং শিক্ষার্থীর পিতা মাতার যাবতীয় তথ্যাদি দিয়ে গেট পাস পাওয়ার আবেদন করে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা । সমস্যা শুরু হয় এই গেটপাস , গাড়ির স্টিকার এর আবেদন জমা দেওয়ার পরদিন থেকেই । এ বছর আরেক নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে ব্যক্তিগত ব্যবহার্য মাইক্রোবাস বিজিবিতে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। দুর্বোধ্য!! আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ে গাড়িতে বিজিবি গেটে এসেছেন , এবার শুরু হবে আপনার প্রতিদিনের বিড়ম্বনা , আমরা অভিভাবকরা কখনোই প্রতিদিন সকালে বিজিবি সদস্যদের সাথে বাচ্চাকে বিদ্যালয়ে পৌছে দেওয়া নিয়ে তর্ক করতে চাইনা । গেটে প্রহরীদের এক কথা আপনার গেট পাসের মেয়াদ শেষ , ভিতরে যেতে পারবেননা । বাচ্চা কিভাবে স্কুলে যাবে ? প্রহরীর এক জবাব …..কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করুন গিয়ে ।

যখন অভিভাবক যুক্তি দেখাতে চায়, জানুয়ারীর ৩ তারিখ গেট পাশের আবেদন , গাড়ির স্টিকারের আবেদন জমা দিয়েছি , আজ ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ পর্যন্তও পাইনি । প্রহরীর এক কথা , ওসব আমি জানিনা ।

আজ সকালে আমাকে গাড়ি নিয়ে স্কুল পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়নি , গাড়ি ঘুরিয়ে গেটের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে সন্তান নিয়ে হেটে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের স্কুলে যেতে হয়েছে । গেটে প্রহরীর কথা স্টিকারের মেয়াদ শেষ ।

আমি মনে করি আমার নাগরিক অধিকার হরন করা হয়েছে। বিআরটিএ আমার গাড়ির নিবন্ধন দেওয়ার সময় কোথাও উল্লেখ করেনি যে , এই গাড়ি বাংলাদেশের এই এই যায়গায় প্রবেশাধিকার পাবেনা । আমিও বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে এই অধিকার ভোগ করতে পারি কিনা ? যে , বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে সব যায়গায় অবাধে চলাচল করতে পারবো । যুক্তিহীন ভাবে আমাকে চলাচলে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারে কিনা ?

পাঠক, এবার বলুন বিজিবি সদর দফতরকে আমি ভ্যাটিকান সিটির সঙ্গে তুলনা করতে পারি কিনা?

যদি বিজিবি সদর দফতর স্পর্শকাতর এলাকা হয়ে থাকে , ২০০৯ সালে বিজিবি সদর দফতরের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক ঘটনা এর কারণ হয়ে থাকে , তাতে ও কোনও শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের সম্পৃক্ততা ছিলনা । যারা সেই কুকর্মের হোতা ছিল , যারা খুন -খারাবি করেছিলো , তারাই এখন নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের নাজেহাল করছে । তখনকার বিডিআর এর কাছেও অভিভাবকদের এবং গাড়ি চালকদের চরম অপমান অপদস্ত হওয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা ।

আমরা অভিভাবকরা প্রত্যাশা করি বিষয়টি বিজিবির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এর সমাধানের একটা রাস্তা বের করবেন । অনুগ্রহ করে বিষয়টি এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করুন যে , আমরা অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা ও আপনাদের মতই বাংলাদেশের সমঅধিকার ভোগী নাগরিক । আমরা অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা নিরস্ত্র । আপনাদের নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটানো আমাদের দ্বারা সম্ভবও নয় কাজও নয় ।

প্লিজ , দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এই সমস্যাটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করুন । ধন্যবাদ ।।