আজিমপুর কবরস্থানের অবর্ণনীয় দুরবস্থা

বাংগাল
Published : 25 June 2014, 03:13 AM
Updated : 25 June 2014, 03:13 AM

ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৬২ নং ওয়ার্ড, লালবাগ থানাধীন আজিমপুর কবরস্থানটি ঢাকায় বসবাস করা মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিচিত স্থান । এমুহূর্তে ঢাকায় সম্ভবত উল্লেখযোগ্য ৫টি কবরস্থান আছে যেগুলো ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে ।  আমি আজ এখানে আজিমপুর কবরস্থানের বর্তমান হাল অবস্থা নিয়ে কয়েক লাইন লিখার চেস্টা করবো ।

আজিমপুর কবরস্থানের বর্তমান অবস্থানটি এরকম — দক্ষিন দিকে পিলখানা রোড , পশ্চিমে নিউপল্টন লাইন স্কুল এবং ইরাকি কবরস্থান , পূর্বদিকে অগ্রনী  বালিকা বিদ্যালয় এবং সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার, উত্তর দিকে নিউ মার্কেট- পিলখানা রোড ।      আজিমপুর কবরস্থানের পত্তন হয় সম্ভবত ১৮০৭ সালে , কারো মতে ১৮৫০ সালে । পরবর্তীতে ১৮৮৮ সালে পাকা বাউন্ডারি দিয়ে আজিমপুর কবরস্থানকে সংরক্ষিত করার ব্যবস্থা করা হয় । কম বেশী ৩২ একর জমি  হাজার হাজার কবর নিয়ে এই মুহূর্তে অত্যন্ত অসহায় , অরক্ষিত অবস্থায় আছে । দেখার কেউ নেই ।

আজিমপুর কবরস্থানে অনেক অলি বুজুর্গের কবর যেমন আছে , তেমনি সাধারন মুসলমান লক্ষ লক্ষ  নরনারীর কবর ও আছে । ভাষা শহীদদের কবর আছে , আছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরও । প্রায় চার হাজার স্থায়ী কবর আছে যেগুলো কবরবাসি এবং তাদের আত্মীয় স্বজনের ক্রয় করা। স্থান স্বল্পতার কারনে এখন আর জমি ক্রয় করে কবর দেয়া যায়না । এখানে প্রতিদিন গড়ে একশতটি নতুন কবর দেয়া হয়ে থাকে । স্বাভাবিক নিয়মে একটি পুরাতন কবর 'চালা' দেয়ার কথা ২/৩ বছর পর , এবং সেখানে আবার একটি নতুন কবরের জায়গা করা হয় । কিন্তু এখন আর ২/৩ বছর অপেক্ষা করার মত অবস্থা নেই , এর আগেই পুরাতন কবর গুলো ভেঙ্গে নতুন কবর দেয়া হয় ।

এসময়ে আজিমপুর কবরস্থানটি এতটাই অরক্ষিত অবস্থায় আছে যা কেউ দেখলেই বুঝতে পারবেন । কবরস্থানের পশ্চিমদিকের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে কবরের উপর পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে । এর আগে পশ্চিম দিকের রাস্তাটি চওড়া করার জন্য সিটি করপরেশন পুরনো সীমানা রেখেই ভিতর দিকে প্রায় ৮ ফুট জায়গা নিয়ে আরেকটি সীমানা প্রাচীর তৈরি করে । এর পর বাইরের দিকের প্রাচীরটি ভেঙ্গে দেয় । এতে পশ্চিম দিকের রাস্তাটি চওড়া হয় । এই রাস্তাটির এক প্রান্ত বিজিবি ৩ নম্বর গেট , অপর প্রান্তটি দক্ষিন দিকে পিলখানা রোড পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় আধা কিঃমিঃ । এই আধা কিঃমিঃ সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা অবস্থায় পরে আছে ।

এখন কুকুরের অবাধ যাতায়াত , বাকিটুকু নাইবা বললাম । মানুষ রুপী কিছু প্রাণীও কম যায়না , মুত্রত্যাগ করার আদর্শ জায়গা মনে করে যখন তখন ভাঙ্গা প্রাচীর সংলগ্ন স্থানে বসে যায় । পেশাদার ভিক্ষুক এবং কিছু নেশাকারী এখন এখানে অবাধে তাদের কর্ম সেরে নেয় । কবরবাসি যারা আছে তাঁরা তো আর না করতে পারেনা । নিরবে সহ্য করে যাচ্ছে এহেন অত্যাচার ।

কবরবাসি না করতে পারেনা এতো স্বাভাবিক , তাঁদের টু শব্দ করার জো নেই । কিন্তু আমরা যারা এখন পর্যন্ত ( অন্তত আজিমপুরের কবরে শোয়ার আগ পর্যন্ত ) কথা বলতে পারি , আমাদের মুখে রা নেই কেন ? রাজনীতি নেই বলে ? কবর নিয়ে রাজনীতি আমাদের দেশে নেই তা তো নয় । বিভিন্ন ছুতা নাতা পেলেই তো পুস্পস্তবক আর সাংবাদিক / ক্যামেরা জোগাড় করে বিশেষ কবরের দিকে দে ছুট । ক্যামেরা / সাংবাদিক আসার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত পুস্পস্তবক হাতে ধরে পিছনের জুনিয়র নেতা কর্মীদের অনেক ঠেলা ধাক্কা সহ্য করে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। এই গত শবেবরাতেও ফুল দিতে গিয়ে বিশেষ একটি কবরে / মাজারে হুড়াহুড়ির দৃশ্য দেখা গেল সাংবাদিক / ক্যামেরা ওয়ালাদের  কৃপায় ।

এখন তো দেশে খবরের আকাল , সাংবাদিক ক্যামেরাম্যানদের খবরের জন্য রীতিমত নিলাম ডাকতে হয় । দুঃখের বিষয় এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় ওদের চোখ এড়িয়ে যায় । ঢাকা শহরে সংগঠনের তো অভাব নেই , "আমরা ঢাকাবাসী" , "আমরা ঢাকাইয়া" , টাইপের সংগঠন গুলো এব্যপারে নীরব , কারন রাজনীতি নেই এখানে ।

ঢাকা শহরে আলেম ওলামা পীর মাশায়েখ দরবেশ কুতুব এর অভাব নেই , নিকটবর্তী লালবাগেই রীতিমত আলেম তৈরির ফ্যাক্টরি আছে কয়েকটা । এরকম একটি ধর্মীয় অনুভূতিতে নাড়া দেওয়ার মত বিষয় ওদের চোখে পড়েনা । কারন এখানে তো ধর্মীয় সুরসুরি নেই । ওদের দরকার ধর্মীয় অনুভূতিতে সুরসুরি , ব্যাস , সব তউহিদী জনতা গজারি লাকড়ি নিয়ে শাপলা চত্বর ।

আমি শুনেছি, কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনে আদালতের নির্দেশ নিয়ে নতুন সীমানা প্রাচীরটি ভেঙ্গে দিয়েছে । কিন্তু প্রাচীরটি এভাবে ভাঙ্গার কোন কারন থাকলেও একটু মানবিকতা দেখানো যেত । আমাদের উচ্চ আদালতের মহামান্য বিচারপতিগন অনেক সময় স্বপ্রণোদিত হয়ে  জনস্বার্থে বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ দিয়ে থাকেন , ঘটনাচক্রে যদি কোন মাননীয় বিচারক এই পথ দিয়ে যেতেন , কবরবাসিদের যারপরনাই উপকার হত । আমার মনে হয় তিনি নিজ বাসস্থানকেই আদালত বানিয়ে নির্দেশ জারি করতেন । একটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবেও প্রাচীরটি রাখা যেতে পারত ।   কারন বিষয়টি মানবিক অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে পারতো । এর মধ্যে কোন রাজনীতি নেই ।

অবস্থা এতই খারাপ যে , টিন বা যে কোন অস্থায়ী প্রাচীরের  ব্যবস্থা করে হলেও আজিমপুর কবরস্থানের মর্যাদা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী । এখানে ঢাকয় বসবাস কারি নাগরিকদের অনেকেরই আত্মীয় স্বজন বন্ধু , মুরুব্বি পূর্বপুরুষ অন্তিম শয্যায় শুয়ে আছেন , আমাদের অনেককে অবধারিত গন্তব্য হিসেবে এখানে শেষ যাত্রায় আসতে হবে ।

অএব ভাইসকল যার যার অবস্থানে থেকে যে যেভাবে পারি বিষয়টি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নেক নজরে নিয়ে আসার চেস্টা করবো যাতে করে আজিমপুর কবরস্থানের মর্যাদা হানিকর এরুপ দুঃখজনক অবস্থার সমাধান হয় ।