কয়দিন ধরে ব্লগে ঝড়ো বাতাস বইছে । হঠাত ঝড়ো বাতাস টর্নেডোতে পরিনত হয়ে দুই তিন জন স্বনামখ্যাত ব্লগারকে টালমাটাল করে দিলো। আমার তো রীতিমত কানের গোরা দিয়ে গেলো । আস্তে একদিকে চেপে রইলাম । খুব বুদ্ধি খাটিয়ে মতলব করলাম এক দুই মাস ব্লগের কাছ দিয়েও যাবনা । কিন্তু আঙ্গুল উস খুস করা শুরু হয়ে গেলো , দেইনা একটা খোঁচা ।আবার নিজেকে সামলে নেই , না আর এ মুখো হবোনা । আবার বিদ্যুত শকের মত মাথায় এসে যায় গোপন প্রতিজ্ঞাটি , আমি না সেদিন ল্যাপটপ ছুঁয়ে শপথ নিলাম আগামী বিডি ব্লগ পঞ্চবার্ষিকী প্রতিষ্ঠা দিবসে ৫০০ তম বা তারও বেশী ব্লগ লেখার পুরস্কারটা বাগিয়ে নিবো ।এবছর যারা কালিজিরা তেল মাখানো ব্লগ , কেউবা সাধারনের 'দুর্বোধ্য' দার্শনিক ধরনের লেখা ব্লগ দিয়েও ২০০ তম ব্লগের কোটা পূরণ করেছে তাদের হতাশার পুকুরে হাবুডুবু খাওয়াবো , মনে মনে সেদিনের কথা ভেবে লগ ইন করেই ফেললাম । সুবিধা আছে, এ কদিনের ঝড়ে আহত দুই চার জন নামকরা ব্লগার আর এমুখো হবেনা । এ সুযোগ আমাকে কাজে লাগাতেই হবে ।আমি কি শপথ করেছিলাম তারতো কোন চাক্ষুষ প্রমান রাখিনি ।
আরম্ভ ; সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী , অধুনা ব্যর্থ আন্দোলনের 'বিষ' দলীয় নেত্রী ইন্টারপোল দ্বারা জারীকৃত রেড এলারট ওয়ারেন্ট এর ফেরারি আসামির মাতা বেগম খালেদা জিয়া পুরানা পল্টনে জাসাসের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আজ উপায়ান্তর না দেখে হাজির হয়েছিলেন । এ ধরনের অনুষ্ঠান তিনি বর্জন করতেই অভ্যস্ত , এ ধরনের অনুষ্ঠান গুলোতে উর্দু ঢঙ্গে বাংলা উচ্চারণের বালাই নেই , ভারত ভারত কেমন যেন একটা চাষা গন্ধ আছে , আছে কিছু ঢলা ঢলি জাতীয় কুকর্ম । এতে উনার ইসলাম ধর্মীয় ব্যাপারে 'বাতাস' লাগে । আর এধরনের অনুষ্ঠান গুলো সাধারনত গজাম (শিবিরি ভাষা) অনুসারীদেরই করা । এরকম একটি অনুষ্ঠানে যখন তাঁর মত একজন ইসলামি নেত্রী এসে হাজির হন ,তখন কি কারো বুঝতে বাকি থাকে ? ……কুচ কালা হ্যায় !
তিনি কি কারনে এসেছেন তা বুঝতে অনেক গবেষণা করা বা বিজ্ঞানমনস্ক হতে হয়না , প্রথমত তাঁর একমাত্র সুপুত্র লন্ডন প্রবাসি ইতিহাসবেত্তার নামে আজই রেড এলারট জারি করেছে ইন্টারপোল , বড়ই কুলক্ষুনে খবর । এতো বড় একটা ধাক্কা সামলানো খুব কঠিন । জাতীসংঘ আর ইউরোপিয় ইউনিয়নের ব্যাটারা মনে হয় কলা খেয়ে ঘুমাচ্ছে , কিচ্ছু বলছেনা ওরা ইন্টারপোলকে । এত্ত বড় একজন ইতিহাসবেত্তা , বাঙ্গালী জাতীর ভবিষ্যৎ কান্ডারি নাকি গ্রেনেড ছুড়ে মানুষ হত্যা মামলার ফেরারি আসামি , ছ্যা ছ্যা ছ্যা , ইন্টারপোলে নিশ্চয়ই ছাত্রলীগের ষণ্ডারা পয়সা খরচা পাতি করে নিয়োগ বাগিয়ে নিয়েছে ।
বাতকে বাত কথা বেড়ে যায় , এই লাগাম টেনে ধরলাম । আসল কথায় আসি । খালেদা জিয়া আজকে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি জনগণকে নিরব ব্যালট বিপ্লবের মন্ত্রনাও দিয়ে রেখেছেন । কয়েকবার বলেছেন এই অবৈধ সরকার , এই জালেম সরকার, আবার এই অবৈধ সরকারের পরিচালনায় সিটি কর্পোঃ নির্বাচনে জনগণকে ভোটও দিতে বলেছেন । এর আগে সহস্রবার বলেছেন এই জালেম অবৈধ সরকারকে না হটিয়ে আর কোন নির্বাচন এদেশে করতে দেওয়া হবেনা । এরকম একটি যৌক্তিক পরিনতিতে ভরপুর আন্দোলন করে খালি হাতে মাত্র সেদিন তিনি ৯২ দিন পর গৃহ প্রবেশ করলেন ।
আমি ২০১২বা ২০১৩ সালের কথায় যাচ্ছিনা , কারণ আমরা নরম মনের বাঙ্গালী অত আগের কথা মনে পুষে রাখতে পারিনা । এই সদ্য বিগত ৯২ দিনের কথা থেকে কিছু অংশ মনে করতে চাই । খালেদা জিয়া কি কারনে ৪ জানুয়ারি তারিখে ৮৬ নং গুলশান কার্যালয়ে স্বেচ্ছা অবরোধ বরণ করতে গিয়েছিলেন তা সম্ভবত তিনি নিজেও এখন মনে করতে পারবেননা ।
এই ৯২ দিন পাইক পেয়াদা সমভিব্যহারে ফখ্রুদ্দিন বাবুর্চির উপাদেয় খাবার খেয়ে গুলশান কার্যালয় থেকে নির্দেশ জারি করে যে ঘটনা গুলো ঘটিয়েছেন তার কয়েকটি আমি এখন জাতির সামনে পেশ করতে চাই ।
১) পেট্রোল বোমা বিপ্লব / – কার্যালয়ে পালংকে শুয়ে , আরাম কেদারায় ঝুলে ঝুলে সালাউদ্দিনকে দিয়ে সই করিয়ে পত্রিকা অফিস আর টিভি চ্যানেলে ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছেন মোল্লা ওমর স্টাইলে ।৫ দিন হরতাল , অবরোধ চলবে ! দুই দিন হরতাল , অবরোধ চলবে !! সকাল হতে না হতে ছুড়ে মারা শুরু হয়ে গেছে পেট্রোল বোমা । সিএনজি তে পাঁচ জন পুড়ে অঙ্গার । দুপুরে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে এক সঙ্গে ৭ জন মানব সন্তান পুড়ে মেরেছে ২০ জন দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটের ঠিকানা নিয়েছে । ঠিক সেই সময় পিক আপ ভ্যান ভর্তি ফখ্রুদ্দিন কাচ্চি বিরিয়ানি আর চিকেন ফ্রাই প্যাকেট হয়ে গুলশান ৮৬ নং কার্যালয়ে হাজির । পুলিশ বাধা দিলো , ব্যাস টিভির ক্যামেরা ঘাড়ে করে চ্যানেলের ছোকরারা গো গ্রাসে ধারন করে মারল ব্রেকিং নিউজ , অমানবিক ,অমানবিক সরকারের পুলিশ । খাবার না দিয়ে সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করছে । হে ঢাকার ভোটার , ৭০ দিন বাদে সাংবাদিক সম্মেলনে যখন এসে বসলেন খালেদা জিয়া , উনার সুসাস্থ্য দেখেকি আপনাদের মনে সুখের সুবাতাস বয়ে যায়নি ? মাশা আল্লাহ । উনাকে নাকি সরকার না খাইয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে ।এভাবে ৯২ দিনে ১৭৪ জন মানুষকে পেট্রোল বোমায় জ্যান্ত পুড়ে মেরেছেন , ৯২ দিনে অন্তত ৪০০০ মুরগি চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়েছেন , আর পোড়া মানুষদের বলেছেন , আরেকটু কষ্ট স্বীকার করতে হবে । যৌক্তিক পরিনতিতে পৌঁছাতে হলে একটু আধটু এরম কস্ট করতে হয় । হ্যাঁ কস্ট আমরা করেছি, পুড়ে আমরা কুচকুচে কালো হয়েছি । আর ওজন আপনাদের বেড়েছে , চেহারায় আপেলের মত টুক টূকে আভা ছড়িয়েছে আপনাদের । আপনাদের জন্য আমরা নিরব ব্যালট বিপ্লব করবনা তো করবো কার জন্য?
আপনি তো ম্যাডাম মাশাআল্লাহ ইসলামের জন্য একেবারে জান কুরবান! আপনি এই বঙ্গে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলেই তো আমরা এখনও মসজিদের আজান শুনতে পাচ্ছি । ম্যাডাম রোজার মধ্যেও আপনি হরতাল দিয়ে ইসলামের অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেছেন , সেতো বাসি খবর । এই ৯২ দিনের মধ্যে দুইটা ইজতেমা হয়ে গেলো , আপনার হরতাল বন্ধ করতে পারেনাই স্বয়ং আল্লাহ । ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের বাসে ট্রাকে আগুন লাগিয়ে , এবং তা অবশ্যই পেট্রোল দিয়ে কয়জন মুসুল্লি আপনার নির্দেশে পুড়ে মারা হয়েছে আপনি হিসাব রেখেছেন তো ম্যাডাম?
ম্যাডাম এবার ১৫ লক্ষ এস এস সি পরীক্ষার্থী এবং কম করে ৫০ লক্ষ অভিভাবক মনে মনে আপনার পায়ে ধরে হরতাল থেকে পরিত্রান চেয়েছিল ।আপনি নাছোড় বান্দা । একটি দিনের জন্য ছাড় দেন নি । দিবেনই বা কেন ম্যাডাম ? এস এস সি পাস না করলে কি হয় ? এস এস সি পাস না করে কি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়না ? যায় , আমাদের দেশেই নজির আছেনা ? তবে ? আর স্কুল কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রিরা আপনার ক্ষমতার লোভের বলি হয়ে তিন মাস ক্লাস করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ।
সালাউদ্দিন, হ্যাঁ আমারা কি ভুলে গেলাম এই বিপ্লবী নেতার অমর কর্মগাঁথা । তাঁকে দিয়ে এতগুলো ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হল আল কায়দা, তালেবান, আইসিস স্টাইলে। হঠাত কোথায় হারিয়ে গেলো সালাউদ্দিন ? কার্যালয় থেকে বাড়ী ফেরার সময় একবার হুংকার দিয়ে বল্লেন না ম্যাডাম আমাদের সালাউদ্দিন কে যতদিন না পাবো আমরা কেউ বাড়ী যাবনা। শুরু করলেন আরেক বেচারা ভুলুকে দিয়ে ফ্যাক্স । ঐ ব্যাটা দুর্বল চিত্ত , ভুল ফ্যাক্স দিয়ে ছ্যাড়াভ্যারা লাগিয়ে দিলো । বাজারে একটা কথা প্রচলিত আছে , সালাউদ্দিনের হারিয়ে যাওয়া দেখে ভুলুর পরিবার থেকে চাপ দিয়ে ভুলুকে সরে আসতে বলায় আর কেউ ফ্যাক্সের দায়িত্ব নিতে চায়নি । সেই মুহূর্তে সরকার নির্বাচনের মূলা ঝুলিয়ে আপনাকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে ।
এবার ঢাকাবাসি সিদ্ধান্ত নিবে, চট্টগ্রাম বাসি সিদ্ধান্ত নিবে, আপনার কথায় তারা নিরব ব্যালট বিপ্লব করতে ভোট কেন্দ্রে যাবে কিনা? এস এস সি পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরাই বা কি সিদ্ধান্ত নিবে? ইজতেমায় আগত মুসুল্লিরা নিশ্চয় কোমরে পাগড়ি বেঁধে ভোট কেন্দ্রে যাবে । ম্যাডাম ৯২ দিনে আপনার হঠকারি কার্যকলাপে ২০ হাজার যানবাহন আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , এর মধ্যে সিংহ ভাগই বেসরকারি । সাধারন ব্যবসায়ি থেকে গারমেন্টস শিল্প সব মিলিয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন আপনি এই ৯২ দিনে । আপনার সুপুত্রটি ব্যবসা করেনা , চাকুরী করেনা , সপরিবারে লন্ডনে আয়েশি জীবনযাপন করে , ম্যাডাম মাসে কম পক্ষে ২০ হাজার পাউণ্ড লাগে খরচ । কোথা থেকে খরচ করেন ম্যাডাম এতো টাকা ? আমাদের তো পেটের ভাত জোগাড় করার পথই আপনি বন্ধ করে দিয়েছেন ম্যাডাম।
এতো কিছু করার পর নির্বাচনী মূলা দেখে আপনাদের মুখের লালায় জনগন সিক্ত হয়ে গেছে , তাইতো আজকে শুনলাম পল্টনে শ্লোগান — খালেদা জিয়া এগিয়ে চল আমরা আছি তোমার সাথে। ঝালমুড়ি বিক্রেতা খেদ ভরে বলল ," মাদারির হুতেরা এদ্দিন কুনাই আছিলি তঁরা, অন এইক্কা শ্লোগান দ্যাছ কিল্লাই।"
সিদ্ধান্ত ভোটারদের । দেখা যাক স্মরনশক্তি বাড়ানোর টনিক খেতে হয় কিনা ভোটারদের।পেট্রোল বোমায় পোড়া মানুষের চামড়া- মাংসের উৎকট গন্ধ বাতাসে সম্পূর্ণ মিলিয়ে যাবার আগে নিরব ব্যালট বিপ্লবের আবদার ভোটার দের দ্বারা কতটুকু পূরণ হয় তা সময়ই বলে দিবে ।