মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নারী লাঞ্ছনার দায় কিভাবে এড়াবেন?

বাংগাল
Published : 18 April 2015, 08:31 PM
Updated : 18 April 2015, 08:31 PM

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি একজন স্বনামধন্য মহীয়সী নারী। খালেদা জিয়া একজন স্বনামধন্য মহীয়সী নারী। বেগম রশন এরশাদ একজন স্বনামধন্য মহীয়সী নারী। স্পিকার শিরীন শারমিন একজন বিদুষী মহীয়সী নারী । ঠিক এই মুহূর্তে আপনারা চারজন নারী বাংলাদেশের সব পুরুষের চেয়ে অবশ্য অবশ্যই বেশী ক্ষমতাবান। পৃথিবীর কোন দেশে চার চারজন নারীর এতটা ক্ষমতাশালী হবার নজির নেই ।

এরকম ক্ষমতাবান নারীদের দেশে নারীর শ্লীলতাহানি, প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার পুরুষের সামনে নারীর বস্ত্রহরণ! নারীর অপমান! আজ কোন ভূমিকার দরকার নেই, কোন ভনিতার দরকার নেই । আজ কথা হবে সরাসরি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নববর্ষের দিন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাঙালি নারী- আমাদের কারো বোন, কারো মেয়ে, কারো স্বজন যেভাবে কুকুরদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন, দেশবাসী তা দেখে ক্ষোভে বোবা হয়ে গেছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সব কুকুরদের কুৎসিত চেহারা সনাক্ত হয়ে গেছে, সবাই চিনে ফেলেছে কারা করেছে এ দুষ্কর্ম দিনের আলোয়। সবার জানা হয়ে গেছে সিসিটিভির ফুটেজের মুখগুলোর স্থির চিত্র ছাপাতে কারা বাধা দিচ্ছে। পুরুষদের কথা বাদই রাখলাম, সমগ্র নারী জাতি স্তম্ভিত। শেখ হাসিনার দেশে নববর্ষের অনুষ্ঠানে লাঞ্ছিত হবে নারী? এও জাতিকে দেখতে হবে? এখনও কুকুরগুলোকে রক্ষা করার জন্য কোন বদমায়েশগুলো ঘোট পাকাচ্ছে তাদের ঠেকানোর ক্ষমতা শেখ হাসিনার নেই? শেখ হাসিনা নামটি হাওয়া থেকে আসেনি, বঙ্গবন্ধু শব্দটি এসে যায় এ নামটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে। জাতির মনে আজ নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ।

এ ঘটনার জন্য আমরা কি এখন খালেদা জিয়ার উপর দায় চাপাবো? কিন্তু কিভাবে? আমরা কি এ ঘটনার জন্য কাদের মোল্লা – কামারুজ্জামানের উপর দায় চাপাবো? কীভাবে? খালেদা জিয়ার উপর সমগ্র জাতি পেট্রোল বোমায় মানুষ মারার দায় চাপিয়েছে, আপনার উপর যদি এখন নারীদের লাঞ্ছনার দায় চাপানো হয়, আপনি বলবেন – আমি কি নারীদের শ্লীলতাহানির নির্দেশ দিয়েছি? না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি নির্দেশ দেননি, কিন্তু আপনার রাজত্বে আপনার নারী প্রজাদের শ্লীলতাহানি থেকে রক্ষা করার সম্পূর্ণ দায় আপনার উপরই বর্তায় । ব্যর্থতার দায় ও আপনাকে নিতেই হবে । খালেদা জিয়া বা রওশন এরশাদ এ ব্যর্থতার দায় নেবেন না ।

হামলাকারী হায়েনাদের ডিজিটাল চেহারা সনাক্ত করার পরও কেন ওদের নাম ধাম লুকানোর খেলা হচ্ছে? এ প্রশ্নটি এ মুহূর্তে সমগ্র নারী জাতির প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জবাব আপনাকেই দিতে হবে, কারণ এই মুহূর্তে আপনি দেশের সমগ্র নারী জাতির অভিভাবক। শয়তানদের চৌদ্দ গোষ্ঠীসহ পত্রিকায় ছবি ছাপিয়ে দিতে হবে, প্রমান করতে হবে যে এরা আপনার কাছের কেউ হতে পারে না। সমগ্র জাতি ওদের ছবির উপর গণথুথু বর্ষণ করবে  এবং সেটা শাহবাগে। যে শাহবাগ নারীত্বের অবমাননাকারিদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে পারে, সে শাহবাগ ইচ্ছা করলে নারীত্বের অবমাননাকারি বর্তমানের পশুদের বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে পারবে থুথু দিয়ে। আপনি নির্দেশ দেন ওদের ছবি শাহবাগের সড়ক দ্বীপে রাখার। থুথু দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়ার কাজটি সারবো আমারা ঢাকাবাসি ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা গত তিনমাস খালেদা জিয়ার পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের লাগাতার প্রতিবাদ করেছি । কিন্তু নববর্ষের অনুষ্ঠানে নারীদের যে অপমান হয়েছে , তা কি পেট্রোল বোমায় পুড়ে মরার চেয়ে কম ভয়ংকর? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সেদিনের লাঞ্ছনার শিকার একটি বোনকে একান্তে নিয়ে যদি জিজ্ঞেস করেন, কোনটি তার কাছে সহনীয় হবে – প্রকাশ্য দিবালোকে বস্ত্রহরন, শ্লীলতাহানি নাকি পেট্রোল বোমায় পুড়ে মরা? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি বিশ্বাস করবেন না যে, সেই লাঞ্ছিত বোনটি পেট্রোল বোমায় পুড়ে মরাকেই অধিক সহনীয় বলে মেনে নিবে?

আপনার প্রশাসনের কায়দা-কানুনে যদি নারীর শ্লীলতাহরণকারীদের বাঁচার পথ তৈরি হয়ে যায়, যে সন্দেহ আজ সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে ফিরছে তার দায় আপনাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আপনি তো কখনই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন না, তবে কেন এতো দেরি? নারীর শ্লীলতাহানির ৪৪ বছর পর যদি বাঙালি জাতি বিচার করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পারে, আপনি যদি এই ডিজিটাল সিসি টিভির সুবিধা নিয়েও ওদের তাতক্ষনিক বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করেন, তাহলে বাঙালি জাতি ৮৮ বছর পর হলেও এর বিচার করবে ইনশাআল্লাহ ।

শুধু তফাৎ হবে এখানে, ৭১ এ নারীর শ্লীলতাহানি নারীর অপমান হয়েছে পাকিস্তানিদের আমলে , আর ২০১৫ তে নারীর শ্লীলতাহানি হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। যারা নারীর শ্লীলতাহানির বিচার করে তাদের আমলেই বিচারকারীদের দোহাই দিয়ে বিচারকারীদের ছত্রছায়ার সাহসে নারীর বস্ত্রহরণের মত জঘন্য কাজ করেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সমগ্র জাতি আপনার দিকে তাকিয়ে আছে , আপনি যত শীঘ্র সম্ভব ওদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেবেন না শিবিরের যোগসূত্র খোঁজার কাহিনী ফাঁদার কুশীলবদের সুযোগ করে দেবেন সময় ক্ষেপন করে অপরাধিদের পালিয়ে যাবার রাস্তা খালি রাখতে?

সিসি টিভিতে ঘটনাস্থলের নিস্ক্রিয় পুলিশ সদস্যগুলোকেও সনাক্ত করা যায়। ওরা হয়তো বলবে – আমরা ভেবেছিলাম দাম্পত্য কলহ ! হায় পুলিশ হায় !!

আমরা এখনও আশাবাদী, আপনি কাল সকালেই নির্দেশ দিবেন ঐ অপরাধিগুলোকে ধরতে। জাতি আপনার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ।