২৪ ফেব্রুয়ারি। চুনারুঘাট থেকে শায়েস্তা গঞ্জের পথে অটো রিক্সায় চেপে চলেছি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। মাথা চুল ভিজে একাকার । ভ্রূক্ষেপ করার সময় ছিলনা। মনে হচ্ছিল এত কিছুর মাঝে এই ভিজে যাওয়া চুলের কথা তুচ্ছ ব্যাপার। হঠাৎ সাই করে একটা ট্রাক পাশ কেটে চলে গেল। তাঁরপর আরও দুটি। সব ট্রাকেই নারী-পুরুষে ঠাসা । সবার চেহারা ময়লা। কাপড় চোপর ময়লা। দেহের রঙ কালো। অটো রিক্সা চালক বলল, ভাই দেখেন ওরা সবাই চা শ্রমিক। তাঁদের কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই দেশের মানুষ হিসেবে ট্রাকে বসা সবাইকে আমার গরু ছাগল মনে হল ! কারন কোরবানি ইদের আগে আগে ট্রাক ভর্তি গরু ছাগল দেখার অভ্যাসটা আছে।
নাহ ! এবার মুড পালটে তাঁদেরকে মানুষ ভাবতে শুরু করলাম। তারপর চা বাগানের অপরুপ সৌন্দর্যে ভেসে গেলাম । চা বাগানের চা গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে শত শত ঐ মানুষদের দেখতে শুরু করলাম চা পাতাকে সন্তর্পনে ছিঁড়ে ছিঁড়ে পরম যত্নে রেখে দিচ্ছে ঝুড়িতে। আবারও মুড পালটে নিলাম। এবার নিজেকে ঐ ট্রাকের ভেতর গুঁজে দিলাম। নিজেকে সেখানে আবিষ্কার করতেই হঠাৎ দপ করে অন্য কোন পৃথিবীতে চলে এলাম মনে হল। দেখলাম আমার আশেপাশের বসা মানুষগুলো কেউ হাসছেনা। রাস্তায় কোট-টাই পরা মানুষদের দেখলেই বাবু বাবু বলে চেচাতে ইচ্ছে হচ্ছে ! আর নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে চা বাগানে এত খাটনির পর এই ট্রাকে চেপে বাসায় যেতে পারছি ! এই মুহূর্তে সারাদিন খেটে একশো টাকা পাওয়ার আনন্দ আরও বেড়ে যাচ্ছে ! আরও আনন্দ হচ্ছে বাসায় গিয়ে চাউল ভাজা আর এক কাপ চা খাবো ! তারপর ছেড়া কাঁথাটি গায়ে দিয়ে ঘুমাবো কাল সকালে আবারও এই ট্রাকে চেপে বাগান যাবো। ভয় শুধু জ্বরটা না আসুক। জ্বর আসলেই চা বাগানে যাওয়া হবে না । খাওয়া জুটবে না। জুটবে শুধু প্যারাসিটামল। কারন এখানে সব রোগের ঔষধ একটিই পাওয়া যায় সেটি হল 'প্যারাসিটামল'।