বাংলার রূপ আমি দেখেছি, শুধু এই বাংলা যেন দেখেনি আমায়

নেংমিঞ্জা বাপন
Published : 22 April 2016, 08:47 AM
Updated : 22 April 2016, 08:47 AM

আমি জন্মেছিলাম আরও দশটা বাংলাদেশির মতো । বাংলার হাওয়া বলেছিলো, স্বাগতম তোমায়। বাংলার কোন জীর্ন ঘরের জানালা হয়ে দেখেছিলাম অপাশে সবুজ পাতার দলবল। মায়ের কোলে শুয়ে আমিও শুনেছি ঘুম পাড়ানি মাসিপিসির গান। শুনেছি বেতারের বাংলা প্রাণের স্বদেশী সুরেলা গীত। বেড়ে উঠেছি স্কুলের আঙিনা ছুয়ে সোনার বাংলা সঙ্গীতের সুরে। কই তখন তো বুঝিনি আমি সংখ্যায় কম ! আমরা সংখ্যায় লঘু ! বয়সের সংখ্যা বাড়ছে যখন, তখন আমাকে শেখানো হলো তুমি আলাদা, তুমি স্বতন্ত্র, তোমার জন্য হাজার কষ্ট অপেক্ষমান, শুধু ব্যাস্ত থাকার সময় এসেছে, এবার কাঁধে তুলে নাও সেসব !

হ্যাঁ, একজন সংখ্যালঘু হয়ে  বলছি। যেখানে ধর্ম, জাতি আর সম্প্রদায়ের কথা বলে "সংখ্যালঘু" নামে আখ্যায়িত করেই বৈষম্যের কু-শক্তিতে আলাদা করে দেওয়া কিছু বাংলাদেশীদের কষ্টের কথা ! শুধু ঐ শেষ শব্দে আটকে যায় আমরা। কে বাংলাদেশী ? কারা বাংলাদেশী ? কারা বাঙালী আর কারাইবা আদিবাসী অথবা ধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যায় কম ? সমস্যা যেখানে জাতিগত অথবা সংখ্যাগত সেখানে বাংলাদেশী আখ্যান মূল্যহীন। রাষ্ট্রের নিয়মে যখন বাংলায় বসবাস করা বাংলার কোন নাগরিকের সমস্যাকে বাংলাদেশের সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত না করে জাতিগত অথবা সংখ্যায় কম জাতিগত সমস্যা ভাবতে হয় তখন বাংলাদেশী শব্দের মুল্য দিতে শিখবে কিভাবে আমাদের আগামী প্রজন্ম ? যুগে যুগে এই বাংলা এখন তাই শেখাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক মানসিকতা শিখিয়ে সংখ্যালঘুদের হেনস্তা করার উপায় এখন স্বাভাবিক শিক্ষানীতির আওয়তাও এসেছে !  নুন্যতম বিচার নেই, বিচারে দ্রুততম বাস্তবায়ন নেই, বিচার দেবার রাস্তাও ছোট । এমন স্বাধীনতা বাংলার মানচিত্রে মানাচ্ছে  অথবা কেউ জোড়েই সেটে দিচ্ছে আর দেশটা স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও ভাবছে দেশ থেকে শত্রু তাড়াচ্ছি । কিন্তু শত্রু চিহ্নিত করার যন্ত্রগুলো বিকল হয়েছে সেদিকে কারোর চোখ পরছেনা । মারো বললে এক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে মারছে । পুড়ো বললে এক লক্ষ মানুষ পুড়িয়ে উল্লাস করছে । কিন্তু রুখে দাড়াও বললে একজনের হাতেও বিপ্লবের পতাকা উঠেনা । একে যদি বাংলার উত্থান বলা হয় তবে স্বাধীনতার অপমান বলতে কারো দ্বিধা থাকেনা ।

বাংলায় সবাইকে কেনো ভালো থাকতে হবে তা জানার জন্য শুধু সুশীল হতে হয়। আবার কাউকে কাউকে মুখে খৈ ফুটানো রাজনীতিবিদ হতে হয়। অথবা প্রভাবশালী লেখক হতে হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ হয়ে বাংলাদেশীদের একতা নিয়ে বাচার প্রেরণা কোন ব্যাক্তির মানসিকতায় ফুটেনা। যাদের সংখ্যালঘু বলে লেখা হয় তাদেরকে সংখ্যালঘু বলে নির্যাতন করা হয়। আমাদের স্বাধীনতার চেতনা ধর্মে, বর্ণে, জাতিতে, গোষ্ঠিতে ছোট্ট ছোট্ট খন্ডে ভাগ হয়ে পরেছে। চেতনার পুর্ন সংজ্ঞা আর কারোর কাছেই নেই। কেউ জানছে অর্ধেক কেউ শিখছে সিকি ভাগ। এইসব ছিটিয়ে পরা খন্ড বিখন্ড চেতনাকে জোড়া লাগিয়ে আবারও সুন্দর সোনার বাংলা গড়ার ইচ্ছে পোষণ করেনা কেউ। সবাই এইসব নিয়ে বিজনেস করছে, কেউ করছে নোংরা পলিটিক্স। শুধু নির্যাতীতিরা ভাসমান চর। যেখান থেকে সোনার বাংলার একুল ওকুল দেখেও দেখেনা। তাঁরা আশায় আর স্বপ্নে দেখে সেই সুন্দর বাংলার মুখ সত্যিকারেই যা হবার ছিলো। তাই বলি, বাংলার মুখ আমি দেখছি, শুধু এই বাংলা যেনো দেখেনি আমায়।