ইফতারের রাজনীতি: আ’লীগ-বিএনপি-জামাত এবং আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দেউলিয়াপনা!

আজাদী
Published : 7 August 2011, 05:13 AM
Updated : 7 August 2011, 05:13 AM

গতকাল ০৬ আগষ্ট দিনটি আমার মনে হয় আরোও কিছু কিছু দিনের মত মনে রাখার মত দিন। এ জন্য মনে রাখার দিন বলছি যে, ঐ একই দিন জামাত ও আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টি ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অনেক বাঘা বাঘা রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সম্পাদক, স্ব-ঘোষিত সম্পাদক আরোও অনেকে। স্ব স্ব দলের নেতা কর্মীরা তো ছিলই। আজ যদিও বিএনপির নেত্রী খালেদার আমন্ত্রণ ছিল প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ইফতার তথা রাজনৈতিক সভায়, কিন্তু তিনি সেখানে না গিয়ে দলবল শুদ্ধ সবাই গেলেন জামাতের ইফতার তথা রাজনৈতিক সভায়।

যেমনটি যানটি হাসিনা বিএনপি বা খালেদার ইফতার তথা রাজনৈতিক সভায়। মানে সমান সমান। বিষয়টি এমন যে "তুমি অধম, তাই আমি উত্তম হইব কেন ?" আমিও অধম হবে, প্রয়োজনে একটু বেশী হবার চেষ্টা করব। এটাই হল এক এক জনের বৈশিষ্ট্যের মৌলিকত্ব !

আমি এখানে ইফতারকে রাজনৈতিক সভা এ জন্য বলছি যে, এ জাতীয় পার্টিতে রোজা বা ইফতারের যে মহান শিক্ষার কথা আমাদের পবিত্র কোরআন-হাদিসে বলা আছে তার সিকিটুক মানা হয়না বা ঐ উদ্যেশ্যে পার্টির আয়োজন করাও হয়না। ঐ গুলো স্রেফ লোক দেখানো ও রাজনৈতিক ভণ্ডামির জন্যই করা হয়। রোজার মাসে ইফতার হল তাদের উছিলা বা মাধ্যম বা হাতিয়ার যাই বলুন। তাই এক কথায় এটুকু বলতে পারি যে, প্রকৃত রোজাদাররা এজাতীয় ইফতার পার্টি থেকে কিছুই পাবেন না বা শিখতেও পারবেন না। রমজান মাস এলেই এটা হল আমাদের দেশের রাজনীতিকদের একটা এক্সট্রা ফ্যাশন ও স্টাইল।

তবে আজ আমার লেখার বিষয়টি একটু আলাদা। আলাদা এ জন্য যে দুটি অনুষ্ঠান একই দিনে কেন হল ? মুক্তিযোদ্ধা বলে যারা দাবী করেন বা যারা বিভিন্ন গোল-টেবিল বৈঠকে বা টিভি টকশোতে বলে থাকেন যে তারা যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতাবিরোধীদের বিচার চান , যাদের অনেকে পারলে ঐখানেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বিচারের ক্যাচাল বন্ধ করে ফেলেন। যা আমারা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, হয়ত ভবিষ্যৎ-এ আরোও দেখব যদি রাব্বুল আলামিন আমাদের মত অধমদের বাঁচিয়ে রাখেন, সেই তারা আজ জামাতের ইফতার তথা রাজনৈতিক সভায় কেন ?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো আর একটি ১৫ আগষ্ট। কারন ১৫ আগষ্টে যেমন ৫ টি জন্মদিনের অধিকারী খালেদা জিয়া কেক কেটে তার ৫ম জন্মদিন পালন করেন, তেমনি আজ হাসিনার ইফতার পার্টিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া একটা উছিলা হলো জামাতকে ব্যবহার করা। তাই জামাত পূর্ব-পরিকল্পিত ভাবে ঐ একই দিনে তাদের ইফতার পার্টি ধার্য করেছেন। এতে জাতীর একটা দিক পরিস্কার ভাবে জানার সুযোগ হলো, কারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, আর কারা চায়না।

আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো যারা সব সময় বা পূর্বে বিভিন্ন গোলটেবিল বৈঠক বা টকশোতে যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধীদের বিচার চেয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলত তার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে বোকা বানানোর অপ-কৌশল, ওটা তাদের মনের কথাও ছিলনা। তাই তারা জামাতের ইফতার তথা রাজনৈতিক সভায় যোগ দিয়ে জামাতকে বুঝাতে চেয়েছে। এতে দুটি লাভ। একটি হলো ভবিষ্যৎ আন্দোলনে একসাথে নামার যে লজ্জা (নতুন বউদের ক্ষেত্রে যা দেখা যায়) তা আর থাকল না বা কেটে গেল। অন্যদিকে খালেদার মনের শান্তির পূর্নতা দেয়া হল।

যারা জামাতের সভায় উপস্থিত ছিলেন:

বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খান বীর প্রতীক, ড. আরএ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এমকে আনোয়ার, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, রাজিয়া ফয়েজ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গোলাম আকবর খন্দকার, আবদুস সালাম প্রমুখ।

এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুলল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু, মহাসচিব অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মহাসচিব হামিদুল্লাহ আল মেহেদী, মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান, মহাসচিব আতিকুল ইসলাম, ইসলামিক পার্টির আবদুল মোবিন, ন্যাপ ভাসানীর শেখ আনোয়ারুল হক, এনডিপির খন্দকার গোলাম মোর্তুজা প্রমুখ।

জামায়াত নেতাদের মধ্যে নায়েবে আমীর নাজির আহমেদ, মাওলানা আবদুস সোবহান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, ডা. শফিকুর রহমান, মহানগর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, শামসুল ইসলাম এমপি, সহকারী সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল, মাওলানা আবদুল হালিম, প্রচার সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ছাত্রশিবির সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, সেক্রেটারি মো. দেলোয়ার হোসেন সাইদী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। [সূত্র: Real-time News Network]

এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ নিজেকে বীর বিক্রম দাবী করেন। তিনি নিজেকে দাবী করেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। অথচ দেখুন ক্ষমতার লোভ মানুষের মনুষ্যত্বকে কত নীচে নামায় ! এরাই আবার বলে বেড়াবে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। এটাও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে ? আরোও যারা যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সবাইকে চেনেন, জানেন এবং বিভিন্ন সময় তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে কি বলেছিল তাও অনেকেই হয়ত জানেন। তবে সুযোগ হলে ভবিষ্যৎ-এ এ বিষয়ে লিখব।

মুক্তিযোদ্ধারা কি দেউলিয়া হয়ে গেছেন ? তাদের মেরুদন্ড কি হাড় শুন্য হয়ে গেছে ? আমার মনে প্রশ্ন জাগে তারা আসলেই কি যুদ্ধ করেছিল ? নাকি ক্ষমতার জোড়ে সার্টিফিকেট ও উপাধি অর্জন করেছেন ? একজন সত্যিকারে মুক্তিযোদ্ধা কি পারে জামাতের মত রাজাকারদের ইফতার তথা রাজনৈতিক সভায় যোগ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির জন্য তথাকথিত দোয়ায় হাত তুলতে ? খালেদা পারেন, কারন তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেন নাই। এমনকি দেশ স্বাধীন হোক তাও তিনি চান নাই। কারন আজকের রূপসী বাংলার উইন্টার গার্ডেনেই তিনি তখন খুব আনন্দেই ছিলেন। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা তথা খেতাব প্রাপ্ত ব্যাক্তি কি করে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারলেন ? কিভাবে পারলেন ৩ লক্ষ মা-বোনদের ইজ্জত বিলিয়ে দেয়ার সাথে উপহাস করতে ? এরা কি আসলেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ? এরা কি আসলেই দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন ? জাতীর বিবেকের কাছে আজ আমার এ ছোট্ট প্রশ্নটি।