এবার ডেড লাইন সেপ্টেম্বর-২০১২, বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে ?

আজাদী
Published : 30 Sept 2011, 06:57 PM
Updated : 30 Sept 2011, 06:57 PM

আমাদের বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে এবার ডেড লাইন দিয়েছেন সেপ্টেম্বর ২০১২। এর বেশী সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাকে এর মধ্যেই নামতে হবে, নামানো হবে। আসুন সবার আগে আমাদের দেশের পত্রিকা গুলো এ ব্যাপারে কি কি হেডলাইন করেছে দেখি। আমি এখানে কয়েকটি প্রধান প্রধান পত্রিকার শিরনাম তুলে ধরব সাথে লিং আছে। তাই আপনারা ইচ্ছা করলে বিস্তারিত সেখান হতে পড়তে পারেন। এখানে জামাত-বিএনপির মুখপত্র আমার দেশ ও সংগ্রাম এবং আ্‌ওয়ামী সাপোর্টার জনকন্ঠকেও দিয়েছি। আপনাদের যেটা ইচ্ছা সেটাই দেখতে পারেন।

এবার আসি আমর মূল লেখায়। উপরোক্ত প্রত্যেকটি খবরে এটা প্রমানিত যে এ সরকারকে বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী সর্বশেষ সময় বেঁধে দিয়েছেন ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১২ । মানে এক বছর। অবশ্য তার আগেই সরকারের বিদায় হবে বলে তার ঘোষনায় আমরা দেখেছি।

পাঠক আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামীলিগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল জলিল "খালেদা সরকারকে " একটা ডেড লাইল দিয়েছিলেন তা ছিল ৩০এপ্রিল। আর সেই ৩০ এপ্রিল আমরা অধীর আগ্রহে দেখায় অপেক্ষায় ছিলাম কি হয়, আসলেই কি সরকারের বারোটা ঐ ৩০এপ্রিল বাজবে ? দেশে কি রোজ কিয়ামতের আগে কোন ডামি বা ট্রায়াল কিয়ামত হবে ? ইত্যাদি । শেষমেশ আমরা কে কি দেখেছি ও শুনেছি তা যার যার অবস্থান হতে সবাই কম বেশী জানি। অনেক মুখরচোক গল্পও শুনেছিলাম। যেমন: এনজিও সারা দেশ হতে লোক জড়ো করবে। এজন্য তৎকালীন সরকার "প্রশিকা" নামক একটি প্রতিষ্ঠিত এনজিওকে তছনছ করেছিল। ঐ এনজিওর ৮,৫০০ কর্মী আজ প্রায় পথে বসে আছে শুধু সেই সময়কার সরকারের প্রতি-হিংসার জন্য। সারা দেশে ৭০ লক্ষ সদস্য তাদের সঞ্চয় ফেরত নিতে হুমরি খেয়ে পড়েছিল। সরকার ঐ এনজিওর প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশী উন্নয়ন সাহায্য ও ফান্ড বন্ধ করে দিয়েছিল। আর এ কাজ গুলো তখন খুব দক্ষতার সাথে করেছিল সমাজকল্যান মন্ত্রী আলি আহসান মুজাহিদ। কারন সরকার দেশের সবচেয়ে সুন্দর তিনটি খাতে জামাতকে বসিয়েছিল। যা হোক সেসব কথা। আশি ডেড লাইনের খবরে। তা ঐ এনজিও কোন স্ংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নাই। এছাড়াও জলিল সাহেবরা আরোও অনেক মুখরোচক কথা বলেছিলেন ১/১১ সরকারের রিম্যান্ডের সময়। যাই হোক আমরা সেই গল্পের অধ্যায় দেখে বলেছিলাম এরকম আর কোনদিন হয়ত কেউ ডেড লাইন দিবেনা।

কিন্তু এবারের ডেড লাইন দিয়েছেন স্বয়ং প্রধান বিরোধী নেত্রী। যিনি আবার আপোষহীন। তাই এবার আমরা নিশ্চিত তিনি কোন গ্রীণ সিগনাল না পেয়ে এ জাতীয় ডেড লাইন দেন নাই। কি সেই গ্রীণ সিগনাল ? তাহলে কি আগামী অক্টোবর বা ডিসেম্বরে আমরা একটি নতুন সরকারের অধীনে বাংলাদেশ নামক বার বার ধর্ষিত এক মা'কে পাব ? আর কতবার এ দেশ মাতা ধর্ষিত হব ঐ হাযেনাদের হাতে। আবার কি তাহলে সেই স্বাধীনতা বিরোধীরা বুক ফুলিয়ে লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত লাল-সবুজ পতাকা তাদের গাড়ীতে উড়িয়ে আমাদেরকে অহংকার ভরে দেখাতে আসছে ?

আমাদের দেশ যে কোন দেশীয় নেতা বা নেত্রীর ইশারায় চলেনা তা আমরা উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া বিভিন্ন তথ্য ও রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন সময়ের বেফাস কথার মধ্যে হতে জানতে পেরেছি অনেক আগেই। যেমন: আওয়ামিলীগের দাবী ২০০১ সালে ভারতের সাথে তারেকের সমঝোতার কারনেই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। এবার বিএনপিও বলছে, বিদেশীরা ষরযন্ত্র করে আওয়ামীলিগকে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসিয়েছে। সত্য মিথ্যা যাই হোক। আমাদের দেশ যে আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা চালান না তা আমরা মনে হয় সবাই স্বীকার করব। যেমন: কিছুদিন আগে বিরোধী নেত্রী লন্ডন-যুক্তরাষ্ট্র সফরে তাদের কাছে অবিভাবক মেনে যেভাবে নালিশ দিয়ে এসেছেন তা দেখেই বুঝা যায়। তাতে দেশের অভ্যন্তরীন বা সার্বভৌমত্ত্বের কোনই ক্ষতি হয়নাই । প্রধানমন্ত্রী হয়ে হাসিনাও অভিযোগ করতে ভুলেন নাই। যা সত্যিই লজ্জাজনক। আবার একটু কিছু হলেই দেখা যায় আমাদের নেতা-পাতিনেতা-দলীয় সাংবাদিক ও সম্পাদক, দলীয় বুদ্ধিজীবি প্রমুখরা চিকিৎসার ছুতো ধরে দৌড়ে লন্ডন, আমেরিকা, চীন, ভারত, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালায়েশিয়া, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে যান। সেখানে রাজনৈতিক মিটিংসহ বিভিন্ন কুনৈতিক সভাও হয়। অথচ গিয়েছেন চিকিৎসা করাতে। দেশের চিকিৎসায় ওনারা ভাল হন না। অথচ দেশে বর্তমানে অনেক নামি-দামী ডাক্তার ও হাসপাতাল আছে। যেখানে আমরা সাধারন কেউ যাওয়া কল্পনাও করতে পারিনা। যাই হোক ওনাদের সফরের ফল হয় সরকার পরিবর্তন, সরকারকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও বিভিন অ-নৈতিকে ও দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে বিদিশী প্রভুদের দিয়ে বাধ্য করা। ফলে জনগন ফুসে উঠে। ভোটের বাক্স ঘুরে যায়। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের চাকা কোনদিনই ঘুরেনা।

এবার মনমোহন আসার আগে থেকেই বিএনপি লবিং করতে ছিল, বিরোধী নেত্রীকে ভারত সফরে আমন্ত্রন আদায় করার জন্য। এজন্য মওদুদ সাহেব অনেক চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। আরোও কিছু এমপি্ ও রাজনৈতিক নেতা এখনও সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বলে খবর আছে। গ্রীন সিগনালের অপেক্ষা। তবে তার ৬০ ভাগ অবশ্য হয়ে গেছে। মনমোহনের সাথে খালেদার বৈঠকের মধ্যে দিয়ে। এর আগে বিএনপি তার সুরও ঘুরিয়ে নিয়েছিল। বলেছিল তারা ভারত বিরোধী না। তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়েছে। তারা ভারতের সাথে ভাল সম্পর্ক চায় ইত্যাদি ইত্যাদি। এজন্য বিএনপির নেরী কুকুরটিও যথেষ্ট শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। সে যাক বৈঠকের পর দেখলাম খালেদা একটু চাঙ্গা হয়ে গেছেন। আর এর কিছুদিন পরই পেলাম এই সেপ্টেম্বরের ডেড লাইন। অবশ্য এর সাথে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদুত সাহেবেরও কিছু মেডিসিন আছে। কারন তিনি ইতি মধ্যেই সরকারের ইউনুস নীতির বিরুদ্ধে এ যাবত কালের কোন মার্কিন কর্মকর্তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। আর এসবই কি তাহলে ঐ ৩০ সেপ্টেম্বরের মোজেজা ?

অপরদিকে আওয়ামিলেগের ওয়াদুল কাদেরও বলছেন তারাও নাকি ফাইনাল খেলা খেলবেন। তিনি বলেছেন, "'আমরা ফাইনাল খেলা খেলব। পরবর্তী নির্বাচনই হবে সে ফাইনাল খেলা। আমরা জনগণের রায় মেনে নেব। আপনারা মেনে নেবেন কি?" তিনি আরোও বলেছেন, 'প্রথম রাউন্ড দেখলাম না, দ্বিতীয় রাউন্ড দেখলাম না। নয়াপল্টনের সামনের সমাবেশ যদি প্রথম রাউন্ড আর রোডমার্চ যদি দ্বিতীয় রাউন্ড হয়, তাহলে কোয়ার্টার ও সেমি ফাইনাল কোথায়? একেবারে ফাইনাল খেলবেন?"

তো বোঝাই যাচ্ছে যে দেশ আবার একটা কঠিন ও ভয়াবহ বিপর্যেয় দিকে এগুচ্ছে। এ খেলায় যেই জিতুক, তাতে আমাদের কিছুই যায় আসেনা। কিন্তু তারা আমাদেরকে যে একটি কঠিন দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দিতে যাচ্ছেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কি পাব তাদের এ ক্ষমতার পালাবদলে ? কেউ কি আমাদের সুষ্ঠভাবে বাঁচতে দিবেনা ? আমরা কি সেই ব্রিটিসদের গোলামী তথা পাকিস্তানের অত্যাচার ও বৈষম্য যুগের চেয়ে ভাল আছি ? এর জন্যেই কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল ? কবে শেষ হবে শুধুই পালাবদলের এই নোংরা রাজনীতি, রাজনীতি খেলা ? আমরা আর কতকাল দেখব ওদের ঐ পাপে ভরা ঐ বিশ্রি ও অসহ্য মুখগুলো ? এবার আমরা মুক্তি চাই। আমাদের মুক্তি দিন।