ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার স্বার্থে আরবী শিক্ষা বাতিল ও সমন্বিত ধর্মশিক্ষা জরুরী

বাসন্ত বিষুব
Published : 27 March 2011, 05:45 PM
Updated : 27 March 2011, 05:45 PM

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কীত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন বলেছেন, সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ তুলে দিতে হবে। এটা সময়ের দাবি। একটি বিশেষ ধর্মের ঐশীগ্রন্থের বাণী দিয়ে বহু ধর্ম ভিত্তিক একটি রাষ্ট্রের সংবিধান শুরু হতে পারেনা। সংবিধান রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের আশ্রয় ও নিরাপত্তা। আর এই সংবিধান যদি একদিকে হেলানো থাকে তবে অন্য নাগরিকেরা নিজেদেরকে অনিরাপদ ও তুচ্ছ ভাবতে শিখে। যা জাতীয় সংহতি ও ভারসাম্যের জন্য বিপদজনক। কিন্তু শুধুমাত্র সংবিধানই নয়, একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও জাতি গঠন করতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন প্রয়োজন।

আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত মুসলমানদের জন্য আরবী ও ইসলাম শিক্ষা নামক দুটি পৃথক বিষয় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি, আরবীর প্রতি শিক্ষার্থীরা তেমন কোন আগ্রহ বোধ করেনা। আরবী তারা তেমন বুঝেও না। কিন্তু শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশ করার স্বার্থে নিতান্ত বাধ্য হয়ে এই বিষয়টি তারা অধ্যয়ন করে থাকে। এমনকি দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই বিষয়টি যে নম্বর অর্জন করে তা পাশ নম্বর থেকে খুব একটা বেশি কিছু নয়। অধিকন্তু, লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আরবী শিক্ষার্থীদের জন্য একধরনের নিপীড়নমূলক বিষয় হিসেবে কাজ করে থাকে। তাছাড়া আরবী শিক্ষা যে তাদের তেমন কাজে লাগে তাও নয়।

অপরদিকে, প্রতিটি ধর্মের অনুসারীদের জন্য স্ব স্ব ধর্মের শিক্ষা অন্তর্ভূক্ত করে রয়েছে ধর্মশিক্ষা। ধর্মের একটি নৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। বাস্তবতা যতই বিপরীত হোক, ধর্মীয় নীতিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবেশ করলে তাদের চরিত্র কিছুটা বদলাবে এটাই ধারণা। কিন্তু দেখা যায়, মুসলমান শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ইসলাম শিক্ষা নামক বইটি পাঠ করার ফলে হিন্দু ধর্ম (সনাতন ধর্ম) সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেনা। তেমনি, হিন্দু শিক্ষার্থীরাও জানতে পারেনা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে। অথচ এই না জানার ফলে ক্ষুদে শিক্ষfর্থীদের সৃষ্টি হচ্ছে অজ্ঞতা ভিত্তিক পারস্পারিক তাচ্ছিল্য বোধ। একজন মুসলমান শিক্ষার্থী হাসাহাসি করছে হিন্দু সহপাঠীকে নিয়ে। আবার একজন হিন্দু শিক্ষার্থীও ইসলাম ধর্মকে নিয়ে প্রকাশ করছে তার অবজ্ঞা। যা জাতি কিংবা জাতীয় প্রগতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। এই কথাগুলো অপর দুটি ধর্ম খ্রিস্টধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কেও খাটে। মুসলমান শিক্ষার্থীরা তো জানেই না বৌদ্ধ ধর্ম কী কিংবা যিশু বা ঈসাকে।

সুতরাং কোমল প্রাণ শিক্ষার্থীদের প্রতিটি ধর্ম সম্পর্কে একটি গ্রহণযোগ্য ধারণা দেবার জন্য এবং অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে পৃথক ধর্মশিক্ষা বই বাতিল করে এক মলাটের ভেতরে সমন্বিত ধর্ম শিক্ষা প্রবর্তন করা হোক। এই বইয়ে অন্তর্ভূক্ত থাকবে আমাদের দেশের মূল চারটি ধর্মের মর্মবাণী। যা সব ধর্মের শিক্ষার্থীকেই পাঠ করতে হবে। অর্থাৎ চারটি ভাগ থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবে এবং প্রতিটি ভাগ থেকে অন্তত একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে বাধ্যতামূলক। আর সেই সাথে বাতিল করা হবে অপ্রয়োজনীয় আরবী শিক্ষা। আশা করবো, দেশের শিক্ষা সম্পর্কীত নীতি নির্ধারকগণ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখবেন।