১৪১৮ আজ। আজ নবযাত্রা বাঙালির। বাঙালিত্ব আমাদের জাতিসত্তা। টেকনিক্যালি হয়তো আমাদের আরো একটি পরিচয় আছে- বাংলাদেশি। মেনে নিতে তেমন কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যখনই যাব শিকড়ের কাছে, যখনই চাইব উৎসকে খুঁজে পেতে তখনই সামনে এসে দাঁড়াবে একটিমাত্র পরিচয়- বাঙালী। হাজার বছরের জাতিসত্তা আমাদের। হাজার বছরব্যাপী উত্থান এবং চলবেই এ উত্থান পর্ব। কারণ আমারা এখনো পৌঁছতে পারিনি উত্থানের শিখরে। লাগবে আরো কিছু কাল। আজকের দিনটি আমাদের সত্তার স্মারক। জাতীয় উৎসব। রাষ্ট্রীয় ছুটি। দুঃখের বিষয়, দীর্ঘদিন দিনটি রাষ্ট্রের তেমন কোন পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি।
দুঃখের বিষয়, এই দিনকে, এই দিনের উৎসবকে কেউ কেউ দেখেন বিজাতীয় সংস্কৃতি ও তার আগ্রাসন হিসেবে। তারা নিজেদের মুসলিম ভাবেন এবং ভাবেন এ দিবস হিন্দুদের। ইতিহাস বলে, এই ভূখন্ড সৃজন করেছিল এমন এক সাংস্কৃতিক জনগোষ্ঠীকে যারা কালক্রমে পরিচিত হয়েছে হিন্দু হিসেবে। যারা নিজ সংস্কৃতির কর্ষণে আকড়ে ধরে আছে এই মাটিকে। ইসলাম এই উর্বর ভূখন্ডের অতল থেকে উত্থিত হয়নি, সে এসেছে অতিথি হয়ে। ঠাই পেয়েছে, তাই বিদায় নিতে হয়নি। তাই ইসলাম এখন এই ভূখন্ডের একটি রোপিত বৃক্ষ। তারও ফুল ফোটে, ফল হয় আবার ঝরে পরে পাতা। সবই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু যারা ইসলামকে গ্রহণ করেছিলেন তারা এবং তাদের উত্তরসুরীরা নিজেদেরকে আর হিন্দু বলে ভাববেন না এটাই সত্য। তবে একমাত্র সত্য নয়। কারণ সত্য আরো একটি আছে। সে সত্য শিকড়-সংস্কৃতি। অন্য ভূখন্ড, অন্য জনপদ থেকে যে সংস্কৃতি ইসলাম নামক ধর্মের সাথে এই বাংলায় প্রবেশ করেছিল তার সাধ্য নেই এই জাতিসত্তাকে হত্যা করার। কারণ প্রতিটি জাতির সত্তা প্রথিত থাকে মাটির এতো গভীরে যে চাইলেও তাকে হত্যা করা যায়না। শিকড় এমনই এক প্রাণশক্তি যা মাটির স্পর্শ পেলেই জন্ম দেবে সেই পুরোনো বৃক্ষের নতুন পাতা, নতুন ফুল, নতুন ফলমূর্তি। কারণ এ বৃক্ষ রোপিত হয়নি, হয়েছে মাটির অতল থেকে উত্থিত।
আজ নববর্ষ। নতুন প্রত্যাশা, শুভ'র আকঙ্ক্ষা এই দিনটিতেই জেগে উঠে প্রতিবছর। এবারো প্রত্যাশা আছে। জাতি বিদ্বেষীদেরকে অতিক্রম করে কিংবা অবজ্ঞা করে পহেলা বৈশাখ জেগে থাকবে অনন্তকাল, ডেকে আনবে শুভকে প্রতিবার। শিকড়কে যারা বিজাতীয় ভাবে তাদের ভগ্ন চৈতন্যে প্রাণ সঞ্চার করবে আজকের এই দিন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সবাইকে শুভ বাংলা নববর্ষ। শুভ হোক ১৪১৮।
——————————————————————-
ফিচার ছবি: সাব্বির ফেরদৌস এর ফ্লিকার থেকে সংগৃহিত