সেলিম ওসমান, আপনি ক্ষমা চাইবেন শ্যামলকান্তি’র কাছে

বাসন্ত বিষুব
Published : 20 May 2016, 06:05 PM
Updated : 20 May 2016, 06:05 PM

১.

গত দুই দিনে জল কিছুটা গড়িয়েছে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ধর্ম অবমাননার জন্য নয়, সেলিম ওসমানের আধিপত্য ও নিয়োগ বাণিজ্যের জন্যই স্কুল কেন্দ্রিক রাজনীতির নির্দয় শিকার হয়েছেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। অর্থাৎ শ্যামল কান্তি নিরাপরাধ। আর এমন একজন শিক্ষককে 'তুই' সম্বধন করে, কান ধরে উঠ-বস করিয়ে সেলিম ওসমান প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি শিক্ষা অর্জন করতে পারেননি। তার শিক্ষকরা ব্যর্থ, তার পরিবারও ব্যর্থ। তিনি কলঙ্কিত, ঘৃণিত, নিন্দিত। তিনি অভিশপ্ত। শিক্ষক শ্যামল কান্তির অভিশাপ তাকে তাড়া করবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

বিবেকবান মানুষের নজিরবিহীন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ফলে সেলিম ওসমান ধরা পরে গেছেন। তিনি এখন ধর্মের ছাতা মাথায় ধরেছেন, আত্মরক্ষার জন্য ধার্মিক সেজেছেন। কিন্তু লাভ হবে কি এতে, সেলিম ওসমান? মানুষ আপনার জিহ্বার পরিচয় ইতোমধ্যেই জেনে গেছে। খোদাভীরু কোন মানুষের মুখের ভাষা এত জঘন্য হয় না। সুতরাং আপনিও একজন ধর্ম ব্যবসায়ী।

যদিও দুঃখের বিষয়, এক শ্রেণির মানুষকে বিশ্বাস করানো গেছে, শ্যামল কান্তি ইসলামকে হেয় করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। ফলে এই বিশ্বাসীরা শ্যামল কান্তির ফাঁসি দাবি করছে আর এই অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের কখনো নাস্তিক, কখনো ধর্মদ্রোহী বলে গাল মন্দ করছে। তা করুক। এসব যারা করছে, এর চেয়ে ভাল কিছু করার সামর্থ তারা রাখেও না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কোন প্রমাণ পায়নি। এমনকি কোন ছাত্রও তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার লিখিত অভিযোগও করেনি। সুতরাং স্পষ্টতই যা কিছু হয়েছে তার সবই সেলিম ওসমানের নির্দেশেই হয়েছে। এজন্যই হয়তো, ধরা পরে তিনি এখন ছটফট করছেন। সংবাদ সম্মেলন করে মেলা প্যাচাল পেরেছেন। প্রশ্ন করেছেন, ক্ষমা চাইবেন কার কাছে!

জবাব তো খুব সোজা, সেলিম ওসমান। স্বার্থ সিদ্ধির জন্য গ্রামবাসীকে ক্ষেপিয়ে আপনি একজন নিরাপরাধ শিক্ষককে অপরাধী সাজিয়েছেন, তাকে লাঞ্ছিত করেছেন। তাই আপনি ক্ষমা চাইবেন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কাছে, তার পা ধরে কিংবা নিজের কান ধরে।

২.
বাংলাদেশ আজ শ্যামল কান্তির পাশে। দেশের অধিকাংশ মানুষ যাদের বিবেক আছে, যাদের শিক্ষা আছে, শিক্ষককে সম্মান করার সংস্কৃতির মধ্যে যারা বড় হয়েছে, তারা প্রতিবাদ করেছে। তারা রাজপথে দাঁড়িয়েছে, বিচার চেয়েছে, কান ধরে শিক্ষকের অপমানের ভার নিজেদের কাধে তুলে নিয়েছে। তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, শিক্ষকের অপমান পুরো জাতির অপমান। এ অপমান সহ্য করা হবে না।

সুখের কথা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শ্যামল কান্তির চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে স্কুল পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়েছে। কিন্তু এটা তো ঘটনাত্তোর ঘটনার প্রতিকার। আসল অ্যাকশন কিন্তু এখনো বাকি, শিক্ষামন্ত্রী! শ্যামল কান্তিকে আড়ালে থাপ্পর মারা আর প্রকাশ্যে কান ধরে উঠ-বস করানোর প্রতিকার কিন্তু এখনো হয়নি। দেশের মানুষ ওই অ্যাকশন দেখার প্রতিক্ষাতেই আছে।