তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা না থাকলে ১৫ ফেব্রুয়ারি থাকবে কেন!

বাসন্ত বিষুব
Published : 31 May 2011, 05:34 PM
Updated : 31 May 2011, 05:34 PM

প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন নারাজ। বলেছিলেন, পাগল ও শিশু ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নয়। ফলে এমন কোন সরকার হতে পারেনা যে নিরপেক্ষ হবে। বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা অনমনীয় ছিলেন। বলেছিলেন, ভোট ডাকাতি রোধ করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই হতে হবে। এ দাবির সাথে গোড়াতেই সম্পৃক্ত ছিল জামায়াতে ইসলামী। তাদের চাপে নতি স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত বেগম জিয়া প্রতিষ্ঠিত করলেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর এই পথে যেতে নিজেকেই নিজে বাধ্য করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। মাগুরার নির্বাচনে তিনি স্পষ্ট করেছিলেন নির্বাচনকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে তিনি সক্ষম নন। আর এই কলংক থেকে মুক্ত হবার জন্য আরো একটি কলংকিত নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি ভূমিষ্ট করেছিলেন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ তে এ দেশের মানুষকে গলাধঃকরণ করতে হয়েছিল সেই কুখ্যাত ও হাস্যকর নির্বাচন।

১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কেউ মেনে নেয়নি, গণতান্ত্রিকভাবে বৈধতা দেয়নি। আইনগতভাবে এই নির্বাচনের যতটুকু বৈধতা ছিল তা মূলত ত্রয়োদশ সংশোধনী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্মের কারণে। এই বৈধতা দিতে হয়েছিল কারণ দেশের পরবর্তী নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হবে ঐ সংসদেরই প্রবর্তিত বিধান অনুসারে। বেগম খালেদা জিয়া ৫ম সংসদেই যদি এই বিল পাশ করাতেন তবে একটি অবৈধ নির্বাচনের দায় তাকে নিতে হতো না। কিন্তু জেদ ও দূরদৃষ্টির অভাবে তিনি তা পারেননি। ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা জীবনই তাকে জ্বালাবে।

কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায় সরকারের মত একটি অগণতান্ত্রিক ও বিষাক্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে বাতিল করে জাতিকে ভারমুক্ত করেছেন। তবে আগামী দুটি নির্বাচন এই ব্যবস্থার মাধ্যমে হতে পারে বলেও মতামত দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। আর সরকার গতকালই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ব্যবস্থা আর বহাল রাখা হবেনা। এই ব্যবস্থা বহাল না রাখার এই তড়িৎ সিদ্ধান্ত কতটুকু ভেবে চিন্তে নেয়া হয়েছে কিংবা এই সিদ্ধান্তের ফল শুভ হবে কিনা তা নিয়ে ভাবনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তারপরও আরো একটি বিষয় একই সাথে ভাববার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করি। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে এতদিন অনিচ্ছা সত্বেও বৈধতা দিতে হয়েছিল সেই ব্যবস্থাই যেহেতু এখন নেই, অবৈধ হয়ে গেছে তাই ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকেও অবৈধ ও বাতিল করার প্রয়োজন ও সুযোগ রয়েছে। গণতন্ত্রের ক্ষত এই নির্বাচন এখন আর বৈধ হতে পারেনা। এই নির্বাচনের ফসল ষষ্ঠ সংসদকে আর বৈধতা দেবার কোন প্রয়োজন নেই। বরং সেই নির্বাচন ও সংসদকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার এখনই সময়।

***
ফিচার ছবি: ইন্টারনেট