অসহায় বিমানমন্ত্রীর সহায় কেবল প্রধানমন্ত্রী!

বাসন্ত বিষুব
Published : 15 Sept 2011, 03:20 PM
Updated : 15 Sept 2011, 03:20 PM

যদি জিজ্ঞেস করা হয়, মন্ত্রীসভার সবচেয়ে অসহায় মন্ত্রী কে তবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উত্তর হবে বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের। একে তো তিনি ভিন্ন দলের এবং এমন দলের প্রতিনিধি যাকে নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগেও অ্যালার্জি আছে। মহাজোটের সবচেয়ে বড় শরীক জাতীয় পার্টি তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু এতেও আমার সন্দেহ নেই যে শরীকদলের মধ্যে এই দলটিই সবচেয়ে বেশি অসহায়ত্ব ভোগ করে। যার প্রমাণ পাওয়া যায়, নারীলোভী সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের অসংলগ্ন হুমকী ধামকী থেকে। অসহায় মন্ত্রীদের তালিকায় আরো দু একজন মন্ত্রীর নাম চাইলে যোগ করা যাবে বটে কিন্তু জিএম কাদেরের মত অসহায়ত্ব বোধ হয় তাদের নেই।

এরশাদ ও তার দু'মুখো রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দিকে টেনে আনতে জিএম কাদেরের ভূমিকা ছিল খুব বেশি। মূলত তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও ছোট ভাইসুলভ অভিমানের কারণেই এরশাদ আজ তার দল নিয়ে মহাজোটে আছে। জাতীয় পার্টিকে দু'মুখো দল বললাম এই কারণে যে এই দলে বিএনপি ও আওয়ামী ধারা এত প্রকট যে দলটির অনেক নেতাই দুটি ধারার একটির নাম দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী জাতীয় পার্টি এবং অপরটির নাম দিয়েছেন আওয়ামী জাতীয় পার্টি। বলা বাহুল্য, জাতীয়তাবাদী জাতীয় পার্টির প্রধান নেত্রী হলেন বেগম রওশন এরশাদ।

আওয়ামী জাতীয় পার্টির মূল নেতা জিএম কাদেরের কদর আওয়ামী লীগের কাছে খুব বেশি ছিল। বিশেষ করে, নির্বাচনের আগে এবং ঠিক অব্যবহিত পরে। কিন্তু সেই কদরের উপর এখন খদ্দরের কাপড়ের মত মোটা আস্তর পরেছে। তিনি এখন অনেকটা দলিত এবং অস্পৃশ্য। তার মূল্য এখন না আছে আওয়ামী নেতাদের কাছে, না আছে তার নিজ মন্ত্রণালয়ে। কারণ প্রশাসন শিরা আর ধমনীর পার্থক্য বুঝে। তারা জানে, খুঁটির জোর যদি অন্য জায়গায় থাকে তবে এই অভিবাসী মন্ত্রীর হুমক তামিল না করলেও চলেবে। তাই বিমান মন্ত্রনালয়ের সমস্যার শেষ নেই। বিশেষ করে মুসলমানদের পবিত্র হজ মৌসুম এলে এই সমস্যার পাহাড় পর্বতে পরিণত হয়ে যায়। টিকিট কালোবাজারী, ফ্লাইট শিডিউল ভঙ্গ, হাজি হয়রানি, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে বিমান মন্ত্রীর অবস্থা এমন যে তিনি বিবি হাজেরার মত পানির খোঁজে একবার এ পাহাড় তো আবার ও পাহাড়ে ছুটাছুটি করেন। কিন্তু পানির সন্ধান যে তার মিলবে না তিনি তা জেনেও হয়তো বুঝেন না। কারণ পানির কূপ যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। যে পর্যন্ত না প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন সে পর্যন্ত বিমান মন্ত্রণালয়ের কোন সমস্যারই সমাধান হয়না। তার উপর তো আমাদের মহান পাইলদের তথাকথিত ধর্মঘট রয়েছেই। হজ মৌসুমে এই ধর্মঘটের হুমকী ধামকী বেড়ে যায় কয়েকগুণ। মানুষের ধর্মানুভূতিকে পুঁজি করে স্বার্থসিদ্ধী, এই আর কী।

এখন হজ মৌসুম শুরু হয়েছে। অসহায় মন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে উপর্যুক্ত সব বাধা-বিপত্তি। তাই হাজিদের অধিকারের কথা চিন্তা করে বিমানমন্ত্রীর উচিত এখন থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা এবং হজ ও বিমান সংক্রান্ত উদ্ভুত সমস্যাগুলো নিয়ে তার সাথে আলোচনা করা। এই যোগাযোগ সমস্য সৃষ্টি হবার আগেই হওয়া ভাল। কারণ সমস্যা বেধে গেলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তার সমাধান হয়তো হবে কিন্তু এই বিলম্বের জন্য খেসারত দিতে হবে কোমল ও আনুগত্যময় হৃদয়ের মক্কাযাত্রী হাজি সাহেবদের। যা কারোরি কাম্য নয়।