আমার এক বড় ভাই আমেরিকায় থাকেন। দেশে ফেরার পর এবং আমেরিকায় ফিরে যাবার আগে তাকে বিভিন্ন প্রয়োজনে যেতে হয় মার্কিন দূতাবাসে। গতকাল তিনি আড্ডার সময় বলছিলেন, ঈদের পরপরই কিছু কাগজ পত্রের ব্যাপার নিয়ে তাকে যেতে হবে মার্কিন দূতাবাসে। আমি তাকে মজা করে বললাম, দূতাবাসে যাবেন কেন? মার্কিন রাষ্ট্রদূত কী আপনার পরিচিত? তিনি বললেন, এমন কথা বললা কেন? আমি দূতাবাসে যাব কিছু দরকারি কাজ সারতে। পরে আমি তাকে বিষয়টি খুলে বললাম।
আসলে অ্যাম্বেসি হলো কোন বিদেশী রাষ্ট্রদূতের বাসভবন। অর্থাৎ নিজ দেশের বাইরে নিয়োগ পাবার পর একজন রাষ্ট্রদূত তার বসবাসের জন্য যে বাড়িটি পান সেটাকেই কূটনৈতিক ভাষায় বলে অ্যাম্বেসি বা দূতাবাস। আর তার কাজের জন্য যে অফিস অর্থাৎ কোন দেশের কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম যে ভবন থেকে পরিচালিত হয় তাকে বলা হয় চ্যান্সেরি। এ ভবনেই রাষ্ট্রদূত তার সব স্টাফ নিয়ে অফিস করেন এবং আমার সেই বড় ভাইয়ের মত যারা কোন কাজ নিয়ে যাই তারা মূলত এই চ্যান্সেরিতেই যাই; দূতাবাস বা অ্যাম্বেসিতে নয়।
অবশ্য এক্ষেত্রে আরো কিছু কথা আছে। অনেক আগে বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিদেশী মিশনগুলোর কার্যক্রম খুব বেশি প্রসারিত ছিল না বলে রাষ্ট্রদূত যে ভবনে বসবাস করতেন সেই একই ভবন থেকেই মিশনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ফলে সে সময় থেকেই এই ধারনাটি প্রচলিত হয়েছে যে, দূতাবাস হলো কোন রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়। এমনকি আমাদের দেশে এখনও সংবাদপত্রগুলো বিভিন্ন সংবাদে দূতাবাস বলতে রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়কেই বুঝিয়ে থাকে। যা ঠিক নয়। যদিও হাল আমলে জনসাধারণের এই বিভ্রান্তিকে কিছুটা দূর করতে দুটি নতুন টার্ম প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। কূটনৈতিক শব্দকে কিছুটা সরলীকরণ করে অ্যাম্বেসিকে বলা হয় 'অ্যাম্বেসি রেসিডেন্স' এবং চ্যান্সেরিকে বলা হয় 'অ্যাম্বেসি অফিস'।
এ প্রসঙ্গে আরো একটু বলতে চাই, কূটনৈতিক ডিকশনারিতে অ্যাম্বেসির সাথে সম্পর্কীত আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যা হরহামেশাই আমরা শুনে বা বলে থাকি। এটি হলো কনস্যুলেট। এই কনস্যুলেট হলো কোন বিদেশী মিশনের উপ-কার্যালয় এর মত যা মূলত সংশ্লিষ্ট দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে স্থাপন করা হয় এবং সে দেশের নাগরিকদের নিজ দেশে ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়াই এর লক্ষ্য। ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও ভিসা প্রদান ও নিজ দেশের অর্থনৈতিকি স্বার্থ প্রসারেরও কনস্যুলেট ভূমিকা পালন করে থাকে। কনস্যুলেটের প্রধান হলেন কনস্যুলেট জেনারেল এবং তিনি নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতের অধীনে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।