মোহনা টিভি- দ্য ব্ল্যাকশিপ অব দ্য মিডিয়া কমিউনিটি

বাসন্ত বিষুব
Published : 3 Jan 2012, 03:50 PM
Updated : 3 Jan 2012, 03:50 PM

মোহনা টিভিতে কোন সংবাদকর্মী নেই, আছে বেতনভোগী কিছু কর্মচারী। আজকে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই দেশবাসী দুটি তেলেসমাতি দেখলো। একটি শিক্ষাঙ্গণে আর অন্যটি মিডিয়া অঙ্গণে। মিডিয়া অঙ্গনে আজ দেশবাসী যা দেখলো তাকে বলা যায় আদর্শিক অরাজকতা। আমাদের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ আদর্শহীন, শিক্ষকরা আদর্শহীন, ছাত্ররাজনীতিও আদর্শহীন- এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। আজ সেই সত্যের তালিকায় আরো পাকাপোক্তভাবে যুক্ত হলো 'সাংবাদিক' শব্দটি। কারণ সস্তা যুক্তিতে মোহনা টিভির দায় পুরো মিডিয়ার উপর না বর্তালেও চ্যানেলটির বেতনভোগী কর্মচারীরা নিজেদের সাংবাদিক হিসেবেই পরিচয় দেয়।

ছাত্র ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অনুসন্ধান করতে আরটিভি ও এনটিভির সাংবাদিকরা মনিপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজে গিয়ে মোহনা টিভির মালিক ও সংসদ সদস্য কামাল মজুমদারের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন এমন খবর যখন ব্রেকিং নিউজ হিসেবে দেখছিলাম তখন একই বিষয়ে মোহনা টিভির সংবাদ দেখে চোখছানাবড়া। চ্যানেলটির ব্রেকিং নিউজে বলা হচ্ছিল, অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের মিথ্যা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে আরটিভির রিপোর্টার স্থানীয় মাস্তানদের সাথে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে স্কুলে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করেছে। অথচ মনিপুর স্কুলে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের সংবাদ গতকালই একটি টিভি চ্যানেলে দেখেছিলাম। একজন অফিস কর্মকর্তা অভিযোগটি অস্বীকার করলেও অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়ের কথা মোটেও অস্বীকার করেননি স্কুলটির অধ্যক্ষ। তার বক্তব্য ছিল, স্কুলটির অধিকাংশ শিক্ষকই যেহেতু এমপিওভুক্ত নয় তাই তাদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য প্রচুর অর্থ প্রয়োজন আর সেই অর্থের যোগান দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করে। তা হলে অভিযোগটি মিথ্যা হলো কিভাবে? আর অভিযোগ যদি মিথ্যাই হয় তবে সাংবাদিকদের এতো ভয় কেন! তাদের কিল-ঘুষি মারতে হবে কেন!

অথচ সেটাই ঘটেছে। আমার জানামতে দু একজন সাংবাদিক আছেন যারা নিজেরাই মাস্তানের মত আচরণ করেন কিন্তু রিপোর্ট করতে গিয়ে মাস্তান ভাড়া করে নিয়ে যান এমনটা কখনো দেখিনি, শুনিনি। আর যে এলাকা কামাল মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে সে এলাকায় একজন রিপোর্টার মাস্তান পাবে কোথা থেকে। সব মাস্তান তো মজুমদার সাহেবেরই। কিন্তু দুঃজনকভাবে মোহনা টিভির বার্তা সম্পাদক নিজে একজন সাংবাদিক হয়ে লাঞ্ছিত স্বজাতির বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছেন। তিনি হয়তো বলবেন, চাকরি বাঁচাতেই তিনি এই কাজটি করেছেন। কিন্তু চাকরি বাঁচাতে গিয়ে সাংবাদিকতার আদর্শ ও সততা বিক্রি করা কি অপরাধ নয়। এই অপরাধ কি একটি অশনি সংকেত বহন করেনা। আজ যেভাবে অবলীলায় তিনি অন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করলেন কাল যে তিনি পেটের দায়ে, টাকার লোভে দেশ ও জাতির স্বার্থ বিরোধী সংবাদ প্রচার করবেন না তার নিশ্চয়তা কোথায়? এ প্রশ্নের জবাব মোহনা টিভির বার্তা সম্পাদককে অবশ্যই একদিন দিতে হবে। তাকে মনে রাখতে হবে, তার জন্যই আজ সাংবাদিকতা আরো একবার কলঙ্কিত হলো। তাকে বলবো, নিজেকে যদি প্রকৃত সাংবাদিক মনে করেন তবে কামাল মজুমদারের মোহনা ছেড়ে প্রকৃত সাংবাদিকতার মোহনায় এসে সামিল হন। এতে মাইনে কমলেও কমতে পারে তবে সম্মান কমবে না।